banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

পদব্রজে নেপাল: পর্ব ১

বিশাখা ঘোষ

নভেম্বর ১৫, ২০২২

Annapurna Nepal Tour part1
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে, হিমালয়ের ঠান্ডা হাওয়াতেও কুলকুল করে ঘামছি। আশেপাশের সৌন্দর্যকে ‘দুত্তোর ভাল্লাগে না’ বলতে ইচ্ছে করছে। এইরকম বিপদে যে পড়তে পারি কোনওদিন ভাবিনি। শ্বশুরমশাইয়ের মুখটা বারবার মনে পড়ছে। পইপই করে বারণ করেছিলেন! কেন যে গুরুজনের কথা না শুনে পার্থর কথায় নেচে উঠলাম! এবার কী যে হবে!!

প্রথম থেকেই বলি। সে অনেক দিন আগেকার কথা। সময়টা নব্বই দশকের মাঝামাঝি। পার্থর খুব ইচ্ছে আমরা নেপালে যাই ট্রেকিং করতে। আমি আগে কখনও ট্রেক করিনি, তাই আমিও উৎসাহী। আমার শ্বশুরমশাই কপাল চাপড়ে অনেকবার বললেন যে বাঙালিরা দীঘা-পুরী-দার্জিলিং যায়, পিঠে ভারি ব্যাগ নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটে না! কিন্তু আমাদের এঁড়ে তর্কের মুখে তাঁর যুক্তি খড়কুটোর মতো ভেসে গেল। এপ্রিল মাসের কোনও এক দিনে চড়ে পড়লাম তিস্তা তোর্ষা এক্সপ্রেসে। গন্তব্য নিউ জলপাইগুড়ি।

নেপালে বেশিরভাগ লোকই রক্সল বর্ডার দিয়ে ঢোকে। বিহারের রক্সল পেরোলে নেপালের বীরগঞ্জ; রাস্তা উত্তর দিকে নাক বরাবর কাঠমাণ্ডু চলে যায়। আমাদের পথ একটু আলাদা। আমরা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বাসে চেপে একটুখানি যাব পানিট্যাঙ্কি অবধি। সেখান থেকে মেচি নদী পার করলেই নেপাল। VISA লাগে না ভারতীয়দের জন্য, কিন্তু একটা পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা ভালো। ব্রিজ পেরিয়ে ঢুকলাম কাকরভিটায়। একটা ধুলোময় জায়গা, সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে, নেপালের নানা শহরে যাত্রী নিয়ে রওনা হবে। সকালে কোনও বাস যায় না, সব ছাড়বে বিকেলে। আমাদের গন্তব্য পোখারা।

Pokhara
আমাদের গন্তব্য পোখারা

বাস ছাড়ল। ঘন সন্নিবিষ্ট সিট, সামনের লোক সিট হেলিয়ে দিলে পিছনের ব্যক্তির নাকে ঠকাস করে লাগবে! মাঝে মাঝে বাস দাঁড়িয়ে পড়ছে আর লোকজন ডাকছে। অনেক লোক উঠল, সব সিট ভর্তি, অনেকেই বাসের মেঝেতে বসে পড়ল। একটু পরে বাসের ছাদে অনেক মুরগির খাঁচা তোলা হল। একটি বছর দশেকের ছেলে ড্রাইভারের সাকরেদ, সবাইকে সাহায্য করছে। বাস একদম ঠাসা অবস্থায় ছাড়ল। কিছু যাত্রী বেশিদূর যাবে না, তাদের নামাতে নামাতে চলল। রাতে একটি ধাবার সামনে দাঁড়াল। নৈশভোজের ব্রেক।

ভারত-নেপাল বর্ডার বরাবর রাস্তা উত্তর পশ্চিম দিকে যায়। এক জায়গায় কোশি নদী পার করতে হয়। তারপর উত্তর দিকের রাস্তা ধরে পোখারা। কিছুদিন আগে রাস্তা খারাপ হয়ে গেছে, তাই এবড়ো খেবড়ো জঙ্গুলে রাস্তা দিয়ে বাস চলেছে। হঠাৎ বাস থেমে গেল, ড্রাইভারের কেবিন থেকে ছেলেটা বেরিয়ে এসে চেঁচালো, “পিসাব”, আর সব মুরগি কোঁ কোঁ করে ডেকে উঠল। চোখ রগড়ে সবাই উঠে পড়ল। ঝিমুনি ভেঙে তাকিয়ে দেখি বাইরে জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে। জঙ্গলের মধ্যে বাস দাঁড়িয়ে আছে। সব যাত্রীরা নেমে হাত পা টান করে নিল। আধ ঘণ্টা পর বাস আবার চলতে শুরু করল।

Machapuchare
মছপুচ্ছরে শৃঙ্গ- নেপালিরা পবিত্র বলে মনে করে

চোদ্দ ঘণ্টার যাত্রাপথ পেরোতে লাগল আঠারো ঘণ্টা। বাস থেকে যখন শেষমেশ নেমে দাঁড়ালাম, পোখারায় তখন ঝকঝকে রোদ্দুর। অন্নপূর্ণা রেঞ্জের বরফঢাকা পাহাড় অতন্দ্র প্রহরীর মতো তাকিয়ে আছে! তিনটি আট হাজার মিটার পেরোনো পর্বতচূড়া- ধৌলাগিরি, অন্নপূর্ণা আর মানাসলু- পোখারা থেকে তিরিশ পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে। সবচেয়ে কাছের চূড়া হল মছপুচ্ছরে, মাছের ল্যাজের আকারে। নেপালিরা পবিত্র বলে মনে করে, তাই উচ্চতায় নিচু হওয়া সত্ত্বেও মছপুচ্ছরে শৃঙ্গ আরোহণ করা বারণ। ওখানে ফেওয়া তাল নামে একটা লেক আছে। লেকের জলে প্রতিবিম্ব পড়ে নীল আকাশ আর সাদা সাদা বরফচূড়াদের। মনে হয় ধ্যানগম্ভীর সন্ন্যাসীরা প্রসন্ন মুখে বসে আছেন চারিধারে। লেকের মাঝখানে একটা দ্বীপে একটি হোটেল আছে। লেকের এক ধারে পর পর হোটেল আর রেস্তোরাঁ। সেখানে কন্টিনেন্টাল খাবারের ছড়াছড়ি। সারা পৃথিবী থেকে উৎসাহী মানুষ এখানে ভিড় জমিয়েছে। এখান থেকে অন্নপূর্ণা কনজারভেশন এলাকার ট্রেক শুরু হয়। এখানে জানাই যে এখন নেপালে ট্রেক করতে নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমতি দরকার হয়। Trekkers’ Information Management System থেকে প্রত্যেকের জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্ড করাতে হয়। আমি যখন গিয়েছি তখন এত ব্যবস্থা হয়নি, ভিড়ও কম ছিল।

একদিন সারাদিন কাটল পোখারার সৌন্দর্য উপভোগ করে। ফেওয়া তালের পাশে হেঁটে বেড়ালাম, কফি পান করলাম রাস্তার ধারের কফি শপে বসে। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে দেখি happy hour চলছে, live band এ পছন্দের গান শুনে অল্পবয়সী ছেলেরা মনের সুখে নাচছে। এখানে ছেলেরা কাঁধ অবধি লম্বা চুল ঝুঁটি বেঁধে রেখেছে, আর নাচের সময় ঝুঁটি খুলে মাথা ঝাঁকিয়ে নাচছে। একটি ছেলের নাচের কায়দা দেখে হাসি পাচ্ছিলো, কিন্তু পার্থর কড়া হুকুম, “হাসবে না। অপমানিত বোধ করলে এরা পেটে কুকরি চালিয়ে দিতে পারে! তখন হাসি বেরিয়ে যাবে!” যত বাজে কথা! কিন্তু ভয়ে ভয়ে রামগরুড়ের ছানা হয়ে বসে থাকাটাই সমীচীন মনে হল।

Fewa Lake
লেকের জলে প্রতিবিম্ব পড়ে নীল আকাশ আর সাদা সাদা বরফচূড়াদের

পরদিন সকালে বেরোলাম ভারতীয় টাকাকে নেপালি টাকায় বিনিময় করতে। বর্ডারের কাছে বা বড় শহরে চললেও হিমালয়ের কোলের গ্রামগুলোতে ভারতীয় টাকা চলবে না। আমাদের সঙ্গে শুধু পাঁচশো টাকার নোট, কাকরভিটায় তার একটা ভাঙিয়ে কিছু নেপালি টাকা পেয়েছিলাম, তার মধ্যে তিরিশ টাকা পড়ে আছে। বীরদর্পে ঢুকে পড়লাম ওখানকার সরকারী উচ্চতম ব্যাঙ্কে। ম্যানেজারের কথা শুনে মুখ চুন করে ল্যাজ গুটিয়ে বেরিয়ে এলাম। নেপালে ভারতীয় একশো টাকার নোট অবধি ভাঙানো যায়, তার বেশি নয়! কারো কাছে ভারতীয় মুদ্রা একশো টাকার বেশি নোট থাকাটা punishable offence। হাজতবাস হতেই পারে। ব্যাঙ্কের বাইরে একজন authorised dealer বললেন প্রতি পাঁচশোর নোটের জন্য ও পঞ্চাশ টাকা করে কেটে নেবেন, আমাদের সাড়ে চারশোর বিনিময়ে নেপালি টাকা দেবেন! ছিটকে বেরিয়ে এলাম। পোখারার সৌন্দর্য মাথায় উঠল, গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে কুলকুল করে ঘামছি। এবার যদি জেলে পুরে দেয়?!

পার্থ বলল, “দেখ, এই তিরিশ টাকা দিয়ে আমরা কোনও দিকেই যেতে পারব না। তার চেয়ে এর মায়া ত্যাগ করে আমরা কোল্ড ড্রিঙ্ক পান করে মাথা ঠান্ডা করি”। অকাট্য যুক্তি! আমাদের মাথা ঠাণ্ডা করার পর পকেটে তখন তিন টাকা। শুরু হল নতুন উদ্যমে টাকা conversion প্রচেষ্টা। যে দোকানেই জিজ্ঞেস করি তারা বলে মহেন্দ্রপুল চলে যান, আমার কাছে হবে না। সারা পোখারা পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে শেষে এক কাপড়ের পট্টি পৌঁছলাম। ভয়ে ভয়ে একটা দোকানে ঢুকে বললাম ভারতীয় পাঁচশো টাকার নোট বিনিময় করতে চাই। দোকানের মালিক বললেন, “কটা আছে? আমি সব ভাঙিয়ে দেব”। আশেপাশের দোকানের লোকজনও চলে এসেছেন, তারাও ইচ্ছুক টাকা ভাঙাতে। বুঝলাম যে এঁরা ভারত থেকে কাপড় কিনতে যান, বড় নোট থাকলে সুবিধা। ওঁদের কাছ থেকে সব নোট ভাঙানো গেল। হাতে নেপালি টাকা পেয়ে আমাদের আর দেখে কে? বেশ একটা জমিদার জমিদার ভাব! খরচের হিসাব না করে সোজা ট্যাক্সি ধরে “চালাও পানসি বেলঘড়িয়া” স্টাইলে হোটেলে ফিরলাম।

নেপালে ভারতীয় একশো টাকার নোট অবধি ভাঙানো যায়, তার বেশি নয়! কারো কাছে ভারতীয় মুদ্রা একশো টাকার বেশি নোট থাকাটা punishable offence। হাজতবাস হতেই পারে। ব্যাঙ্কের বাইরে একজন authorised dealer বললেন প্রতি পাঁচশোর নোটের জন্য ও পঞ্চাশ টাকা করে কেটে নেবেন, আমাদের সাড়ে চারশোর বিনিময়ে নেপালি টাকা দেবেন!

এরপর জলের ব্যবস্থা করতে হবে। পাহাড়ের জল পান করলে পেট খারাপ অবশ্যম্ভাবী। চাই halogen tablet। তখন মিনারেল ওয়াটার সহজলভ্য ছিল না। জল পরিশুদ্ধ করার জন্য halogen tablet কোথাও না পেয়ে অগত্যা এক শিশি আয়োডিন কিনতে হল! ওষুধের দোকানের মালিক বললেন এখানে এটাই চলে!!!! এক বোতল জলে কয়েক ফোঁটা আয়োডিন সলিউশন ফেলে আধ ঘণ্টা রেখে দিলে তারপর তা পানযোগ্যতা লাভ করে।

ছবি: Max Pixel, Needpix, Pinterest

বিশাখা ঘোষ পেশাগত বাঁধনে বাঁধা অর্থনীতির সঙ্গে। কিন্তু মন চায় ঘুরে ঘুরে বেড়াতে, আর অজানা পৃথিবীকে চিনতে। তাতে নিজেকেও তো চেনা হয়। আপনাকে জানাতে তাঁর ভারী কৌতূহল। ছাত্রাবস্থা কেটেছে প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁটাকল ক্যাম্পাস আর আইএসআই-তে। এখন কল্যাণী বিশ্ববিদ্য়ালয়ে অধ্যাপনা করেন। ভালোবাসেন আড্ডা মারতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com