banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আলপনা: এক আলঙ্কারিক অন্বেষণ

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Bengal Alpana

আলপনা’ শব্দটির সঙ্গে আমাদের একটি বিশেষ অনুভূতি জড়িয়ে আছে। আলপনা বলতেই সাধারণত আমাদের মনের ছবিতে ভেসে ওঠে একটি দৃশ্য– গোবর নিকোনো মাটির ওপর কোনও রমণী চালগোলার বাটিতে আঙুল ডুবিয়ে সাদা রেখার টানে কিছু নকশা ফুটিয়ে তুলছেন। এ দৃশ্যের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকের আছে। আমাদের মা, দিদিমা, পিসিমা বা ঠাকুমা কাউকে না কাউকে এভাবে আলপনা দিতে দেখেছি। ‘আলপনা’ সম্পর্কে এভাবে আমরা প্রায় অনেকেই একটি নস্টালজিক ভাবাবেগ দ্বারা চালিত হই। আলপনা নিয়ে এই যে বিশেষ ধ্যান-ধারণা সাধারণভাবে পোষণ করি, বস্তুতপক্ষে তাকে কিন্তু সর্বাংশে সঠিক বলা চলে না। আমার কাছে আলপনার অন্তর্নিহিত অর্থ ও তার প্রকাশ বহুধাবিস্তৃত। আলপনাকে কোনও একটি বা দুটি বিশেষ সংজ্ঞায় সীমায়িত করা সম্ভব নয়। ব্রত-আলপনার ইতিহাসচিত্র যাই হোক না কেন, নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করেছি যে আলপনা হল এমন এক আলংকারিক উদ্দীপনা যার ব্যাপ্তি ও প্রয়োগ-সম্ভাবনা অসীম, অনন্ত। এই উদ্দীপনার জন্ম হয় দ্রষ্টা বা শিল্পীর দৃশ্যজাত নানাবিধ অভিজ্ঞতা থেকে– হ্যাঁ, ছবির মতোই আলপনার চিত্রময়তার বৈশিষ্ট্য অস্বীকার করতে পারি না।

আদিম যুগে প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে যে রেখার জন্ম হয়েছিল, তা প্রয়োজনকে ছাড়িয়ে আরো কিছু পেতে চাইল। প্রতিদিনই গুহাবাসী মানুষের রেখাচিত্রে অস্ত্রবিদ্ধ পশুর রূপ বদল হতে থাকল–  বন্যপ্রাণীটিকে শুধু খাদ্য হিসাবে পাওয়ার বিশ্বাসে মানুষ থেমে থাকল না। তাদের সুপ্ত নান্দনিক বোধ  প্রয়োজনের বিশ্বাস ছাড়িয়ে প্রকাশের পথ খুঁজতে লাগল।

Cave Painting
প্রাচীন গুহাচিত্রের মোটিফ

মানুষের জীবনে এই চাওয়া পাওয়ার বিশ্বাসটুকু নিশ্চিত করতেই একসময় ব্রতপালনের আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে পিটুলিগোলায় আঙুল ডুবিয়ে শ্বেতশুভ্র আলপনার জন্ম নিল। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বললেন– 

“এই সব আলপনায় মানুষ নানা অলংকারের কামনা করে পিটুলির সব গহণা এঁকেছে। সেঁজুতি ব্রতের আলপনায় ঘরবাড়ি, চন্দ্রসূর্য, সুপুরিগাছ, গোয়ালঘর সবই মানুষ এঁকেছে, কিন্তু এদের তো শিল্পকার্য বলে ধরা যায় না – এগুলি মন যা চায় তারই মোটামুটি মানচিত্র।”

এর পরেই যা বললেন তাতে আলপনা দেওয়ার পিছনে সৌন্দর্যসৃষ্টি বা অলংকরণের ইচ্ছার কথাও প্রকাশ পায়। উনি লিখেছেন– 

“কিন্তু দেখছি, মানুষ শুধু সেইটুকু করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না ; এবং তার মনও তৃপ্তি মানছে না যতক্ষণ-না শিল্পসৌন্দর্যে সেগুলি ভূষিত করতে পারছে। অথচ কামনা-পরিতৃপ্তির পক্ষে আলপনা সুন্দর হল কি না হল তাতে বড়ো আসে যায় না।” 

Rural floor art
গ্রামীণ আলপনার আদি রূপ ( অবনীন্দ্রনাথের ‘বাংলার ব্রত’ বই থেকে সংগৃহীত )

সুতরাং মানুষের মনের মধ্যে ঈশ্বর নান্দনিকতাবোধের যে বীজ বুনে দিয়েছেন তার অঙ্কুরোদ্গম কোনো না কোনওভাবে হবেই। আজ থেকে কত শত বছর আগে জানি না গ্রামের যে মেয়েটিষষ্ঠীব্রতপালন করতে গিয়ে সন্তান-সহ ষষ্ঠী ঠাকরুণের মাতৃমূর্তি আলপনায় আঁকল, সে কেমন করে জানল, সন্তানের ভারে অবনত মানবদেহের প্রাণছন্দের কথা? কতখানি শিল্পবোধ আর সৃষ্টির তাগিদ থাকলে আঙুলের কয়েকটি মাত্র টানেই এঁকে ফেলা যায় সন্তানগর্বে গর্বিত ষষ্ঠীমাতার এমন দেহভঙ্গি?Abstract Art’এর গোড়ার কথা তখনই তো রচিত হয়ে গিয়েছিল সবার অগোচরে পল্লীগ্রামের মাটিতে। অবন ঠাকুর তাইতো একথা বললেন–  

আলপনার ছবি শেখাও যেমন শেখানোও তেমনি সহজ, কেননা সহজে যা মনে আসে হাতে আসে চোখে পড়ে তাই হলো আলপনা।”  

তো গেল গ্রাম বাংলার ব্রত আলপনার সহজ পাঠ। সেখানে একদিকে যেমন ছিল শঙ্খলতা, কলমিলতা ষষ্ঠী ঠাকরুণের আলপনার মতো বিরল সৌন্দর্যের উদাহরণ, যার মধ্যে সহজ রেখায় গভীর মনন দক্ষতার প্রকাশ ঘটেছে, তেমনি অন্যদিকে ছিল দুঃখিনী সেইসব মায়েদের মেয়েদের আলপনা, যে আলপনায় তাদের আশা, আকাঙ্খা মনোস্কামনার ছবি রেখার সারল্যে ধরা পড়েছে। সেসব আলপনায় নিখুঁত দক্ষতা নেই, নেই সচেতন শিল্পবোধসঞ্জাত নির্মাণ।

Bengal style Alpana
গ্রাম-বাংলার আলপনায় সহজ সৌন্দর্য

মনের হতাশাকে আশায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে অদম্য আগ্রহে তারা চন্দ্র, সূর্য, নদী, নৌকা, মানুষ, মাছ, পাখি কী না এঁকেছে। সেখানে ফুটে উঠেছে তাদের চলমান জীবনের ছবিতা কখনও যেন আলপনার ছবি, আবার কখনও ছবির আলপনা।  যেখানে তারা কামনা বাসনার বিষয় এঁকেছে সেখানে নেই কোনো নকশাধর্মিতা। সেসব আলপনায় তাদের অদক্ষ হাতে শিশুসুলভ সহজ রেখায় কামনার বস্তুরূপ ধরা পড়েছে, যাতে আলংকারিক সৌন্দর্য ততটা নেই। সে সব ছবির বাইরের ঘেরাটোপে খুন্তিলতা,কলমিলতার আদর্শ নকশা সৌন্দর্যের ওপরেই ভরসা করেছে। সবটা নিয়েই গড়ে উঠল আলপনার ইতিহাস।

বেশ কিছু আলপনা আছে যেগুলি নিছক কামনার বস্তুকে আলপনায় এঁকে দেওয়া নয়। যেমন পদ্ম, পদ্মপাতা ও আরও কিছু প্রাকৃতিক রূপ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পদ্মের বাস্তব রূপের মূল গঠন ধরে আলপনার রেখা টানা হয়েছে। রূপের বাস্তব আকার ও তার অন্তর্নিহিত নকশার ছন্দকে সহজে পল্লীবালা্রা গ্রহণ এবং প্রকাশ করতে পেরেছেন। পরিশীলিত শিল্পশিক্ষা তাঁদের ছিল না বলেই সহজ দৃষ্টিতে পদ্মফুলকে মাত্র তিন-চারটি রেখায় এক খাঁটি দ্বিমাত্রিক চিত্রভাষায় তুলে ধরতে পেরেছেন। অন্তরের শিল্পসত্ত্বাই তাঁদের এই আলংকারিক বোধে উত্তীর্ণ করেছে।

Rural Alpana
কিছু ক্ষেত্রে বর্তমান গ্রামীণ আলপনাতেও আদি আলপনার ধারা অক্ষুণ্ণ আছে

ব্রত-আলপনার ধারা অতীত থেকে সুবিশাল সময় ধরে অসংখ্য রমণীর হাত ধরে প্রবাহিত হয়ে এসেছে– তার মধ্যে কিছু ব্রতী মহিলার সহজাত অলংকরণবোধ এই ধারাকে শ্রীমন্ডিত করেছে, আর বাকিরা অন্যদের অনুসরণ করে প্রচলিত নকশাগুলিকেই প্রয়োগ করে গেছেন। তার মধ্যে অগ্রগতি তেমন ছিল না, ছিল পুনরাবৃত্তি। একে অপরের সঙ্গে পার্থক্য ছিল অঙ্গুলিচালনার সাবলীলতায়। এইভাবে আলপনায় একদিকে সহজ রূপ এবং তার সঙ্গে একাধিক রূপের বিস্তার ও আলংকারিক সংযোজন করার চেষ্টা দেখে এটাই বোঝা যায় যে, শিল্পীর মন বারবার ধরাবাঁধা রূপ থেকে মুক্ত হয়ে নানাবিধ রূপান্তর ও রচনার খেলায় মেতে উঠতে চেয়েছে। যে আঁকছে, তার অন্তরের নান্দনিক বোধ তাকে ঠেলে দিচ্ছে ব্রতপালনের নির্দিষ্ট রূপের সঙ্গে নিজস্ব কিছু শৈল্পিক ভাবনা যোগ করতে। এ তো তার না করলেও চলত, কিন্তু সৃজনশীলতা তাকে ঠেলে দিচ্ছে। অবন ঠাকুর তাঁর ‘বাংলার ব্রত’ বইতে আর একটি কথা বললেন যাতে আলপনা যে ধরাবাঁধা কিছু নকশার পুনরাবৃত্তি নয় , সে যে নিত্যদিনের নব নব শৈল্পিক অন্বেষণ, সে কথারই সমর্থন মেলে। তিনি বললেন– 

“মানুষের মনে কোথায় একটি গোপন উৎস রয়েছে, যেখান থেকে এইসব আলপনা নতুন নতুন এক-একটি সৃষ্টির বিন্দুর মতো বেরিয়ে আসছে।”

Sukumari Devi Alpana
সুকুমারী দেবীর আলপনার অনুকৃতি

প্রখ্যাত আলপনা গবেষণাকার সুধাংশুকুমার রায় বলছেন- 

“অবশ্য আমি আলপনা বলিতে কেবলমাত্র চাউলের গোলার দ্বারা অঙ্গুলির স্পর্শে অঙ্কিত শুভ্র চিত্রকেই বুঝি –এভাবেই উপকরণ ও পদ্ধতিগত ইতিহাসই আলপনার লক্ষ্মণগন্ডী রচনা করে রাখে।” 

আলপনা বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে দৃঢ় একটি মত প্রকাশ করলেও শ্রী রায় বিশেষভাবে সচেতন করে দিয়ে বললেন– 

“আলপনাকে রক্ষা ও উন্নত করিতে হইলে কেবলমাত্র পূর্বাবিষ্কৃত ঠাটগুলির আলোচনা ও চর্চা করিলেই চলিবে না, পুনরায় নব নব ঠাটের উদ্ভাবন ভিন্ন ইহার উন্নতি অসম্ভব। কিছু অশিক্ষিত অরসিকা মহিলাদের দ্বারা তাহা সম্ভব নহে। ইহা কেবল রসিকা মহিলাদের অঙ্গুলিস্পর্শেই সম্ভব।” 

শ্রীরায়ের কথা থেকে একথাই লক্ষ হয় যে, অন্যান্য শিল্পকলার মতোই আলপনার মধ্যেও নতুন নতুন ভাবনা ও রূপান্তরের প্রয়োজন আছে এবং অন্তরের সেই শিক্ষা উচ্চস্তরের শিল্পবোধ সকলের মধ্যেই যে থাকবে তা স্বাভাবিকভাবেই সম্ভব নয়।  সুধাংশুবাবু  আরো বললেন– 

“তারপর হইতে এ যুগ পর্যন্ত সেই পূর্ববিশ্রুত ‘ঠাট’ গুলিকে মহিলারা পূজা বা ব্রতের উপকরণ হিসাবেই গণ্য করিয়া আসিতেছেন ; কেহ তাহাকে সাধনার বস্তু হিসাবে দেখেন নাই বা কোনো নতুন ‘ঠাটে’র আবিষ্কারও করেন নাই।”

Indian architectural pattern
ভারতীয় ভাস্কর্য-অলংকরণের প্রভাব শান্তিনিকেতনের আলপনায়

তাহলে একথা অনস্বীকার্য যে আলপনার জন্যেও সাধনার প্রয়োজন আছে। এই সাধনা নান্দনিকতার সাধনা, যা অন্তরের সৌন্দর্যবোধ থেকে জাগ্রত হয়। ব্রত পালনের আলপনা যে দৈব-বিশ্বাসকে ভর করে জন্ম নিয়েছিল, তা উনিশ শতকে বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ও সেই সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ফলে ক্রমশ ক্ষীয়মাণ হতে শুরু করল। মানুষ তার অর্জিত বিদ্যা, শিক্ষা ও কর্মের ওপর জীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিশ্বাস স্থাপন করতে শিখল। দৈববিশ্বাস থেকে সরে এসে আত্মনির্ভরতার মন্ত্রে দীক্ষা নিল। ব্রতপালনের বিশ্বাস থেকে সরে গেলেও আলপনা কি মানুষের জীবনচর্যায় থাকতে পারে না? অবশ্যই পারে– কীভাবে সেটা সম্ভব হল? দৈববিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য ছেড়ে আলপনা প্রাণ পেল এক উদারনৈতিক আশ্রম পরিবেশে। ব্রাহ্মধর্মের মুক্তচিন্তার পরিসরে শান্তিনিকেতনে আলপনার আবির্ভাব ঘটল। শিল্পের পবিত্র প্রকাশই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য। আশ্রমের আনন্দ-অনুষ্ঠান বা উপাসনাই হোক অথবা পরলোকগত ব্যক্তির স্মরণসভাই হোক – সব ক্ষেত্রেই আলপনার প্রয়োগ পবিত্র এবং গাম্ভীর্যপূর্ণ এক পৃ্থক আদর্শ রচনা করল।

শান্তিনিকেতনের আকাশ, বাতাস ও প্রকৃতির কোলে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কাঙ্খিত সাধনাস্থল খুঁজে পেয়েছিলেন। পুত্র রবীন্দ্রনাথও এখানে তাঁর চিত্তের মধ্যে এক সুগভীর প্রশান্তি অনুভব করেছিলেন। তিনি চাইলেন শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি থেকেই বহুমুখী সৃষ্টিচেতনা জাগ্রত হোক– প্রকাশিত হোক শিল্পে, সাহিত্যে, কাব্যে, সাংস্কৃতিক উৎসব ও অনুষ্ঠানের সাজ-সজ্জায়। ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মবিদ্যালয়ের সংগীত ও চিত্রচর্চার পাশাপাশি অনুষ্ঠানের সজ্জায় ও মন্দিরের উপাসনায় আলপনা একটি বিশেষ অঙ্গ হয়ে উঠল। বিভিন্ন ঋতু-উৎসব পালনের সঙ্গে সঙ্গে তার নান্দনিক প্রয়োগের দিকটিও প্রাধান্য পেল। 

Ajanta Painting
অজন্তার অলংকরণ শান্তিনিকেতনের আলপনাকে প্রভাবিত করেছিল

ব্রহ্মবিদ্যালয়ের শুরু থেকে সাধারণ সমস্ত বিষয়ে পাঠগ্রহণ ও সঙ্গীতশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে অঙ্কন-শিক্ষা, ঋতু-উৎসব, ফুলপাতার আলপনা, সাজসজ্জা ও মঞ্চসজ্জার নান্দনিক চর্চা ধীরে ধীরে শুরু হয়েছিল। শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত প্রান্তর, গাছপালা ও তরুলতার নৈসর্গিক পরিবেশে এই নান্দনিক প্রেষণা অবধারিত ছিল। ১৯১১ সালের ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের পঞ্চাশতম জন্মদিন। এই জন্মদিন পালনের যে ফটোগ্রাফটি আমরা পাচ্ছি সেটার মাধ্যমেই শান্তিনিকেতনের আলপনার সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয় ঘটছে। সেই জন্মদিনের একটি সুন্দর বিবরণ পাচ্ছি ‘রবিজীবনী’ গ্রন্থের ষষ্ঠ খন্ডে– 

“২৫ বৈশাখ ( সোমবার, ৮ মে ) ভোরে আম্রকুঞ্জে জন্মোৎসবের আয়োজন হয়। কাশীর ব্যাসবেদীর অনুকরণে বেদী নির্মাণ করে আলপনা, ধূপদীপ, গন্ধপুষ্প প্রভৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছিল।” 

সামান্য উচ্চতাবিশিষ্ট একটি বেদীর উপর আলপনা, কয়েকটি থালায় পাতা, ফুল ও ফুলের মালা দিয়ে সাজানো নৈবেদ্য যে নান্দনিক পরিবেশ রচনা করেছিল তা শান্তিনিকেতনের শিল্প-ইতিহাসে খুবই গুরূত্বপূর্ণ কারণ সৌন্দর্য ও নন্দনতত্ত্বের যথাযথ প্রয়োগে একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত রূপ যে কোন উচ্চতায় প্রকাশ পেতে পারে তারই উদাহরণ এটি। আলপনার এই সজ্জা-সহ অথর্ববেদ, ঋগবেদ, তৈত্তীরীয় আরণ্যক থেকে নির্বাচিত মঙ্গলগীতি, আবাহন, অর্ঘ্যাভিহরণ  ও শান্তি- এই চার ভাগে মূল বঙ্গানুবাদসহ পাঠ কবির জন্মোৎসব পালনের অনুষ্ঠানকে এক বিশেষ ভাবগম্ভীর পবিত্রতার আদর্শে বেঁধে দিল। এইরকমই অনুষ্ঠানসজ্জা ও আলপনা দিয়ে আবার আয়োজিত হল ১৯১৪ সালে শিল্পী নন্দলাল বসুর সম্বর্ধনা-সভা। এই দুটি আলপনার দায়িত্বে ছিলেন ব্রহ্মবিদ্যালয়ের শিক্ষক অসিতকুমার হালদার ও ছাত্র মণি গুপ্ত। 

Santiniketan Alpana
শান্তিনিকেতনের আলপনায় নন্দলাল বসুর ছবির অলংকরণের প্রভাব

উপরোক্ত দুটি আলপনার নক্সা একই। এই আলপনার বর্হিসীমারেখা বর্গাকার চতুষ্কোণ। সেই চতুষ্কোণের ভিতরে আর একটি চতুষ্কোণ। এই চতুষ্কোণের ঠিক মধ্যস্থলে মাটি দিয়ে সামান্য উঁচু করে গোলাকার একটি বেদী। এই বেদীর ওপরে পদ্মপাতা দিয়ে সাজানো এবং তার বর্হিরেখা পদ্মের পাপড়ির নকশা সাদা রেখা দিয়ে আঁকা হয়েছিল। পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেনের মতাদর্শ অনুসারে এই বেদি বৈদিক যাগযজ্ঞের ‘স্থন্ডিল’-এর আদর্শে নির্মিত হয়েছিল এবং পঞ্চগুঁড়ি দিয়ে এই আলপনা রচিত হয়েছিল। বৈদিক যুগের ‘যন্ত্র, এবং ‘মন্ত্র’-এর ভাবাদর্শ ক্ষিতিমোহনের অর্থবহ নির্দেশের মাধ্যমে এই আলপনায় প্রকাশ পেয়েছিল। বাংলার গ্রামীণ আলপনার সহজ সাবলীল যে রূপ আমরা তার আগে পর্যন্ত দেখে এসেছিলাম, সেখান থেকে সরে গিয়ে এই আলপনার নির্মাণ এক নবপর্যায়ের জন্ম দিল। 

একথা অনস্বীকার্য যে আলপনার জন্যেও সাধনার প্রয়োজন আছে। এই সাধনা নান্দনিকতার সাধনা, যা অন্তরের সৌন্দর্যবোধ থেকে জাগ্রত হয়। ব্রত পালনের আলপনা যে দৈব-বিশ্বাসকে ভর করে জন্ম নিয়েছিল, তা উনিশ শতকে বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ও সেই সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ফলে ক্রমশ ক্ষীয়মাণ হতে শুরু করল। 

১৯১১-তে রবীন্দ্রনাথের জন্মোৎসব এবং ১৯১৪ তে নন্দলালের সম্বর্ধনাসভার এই আলপনা দুটির মধ্যে বৈদিক রূপকল্পের অভিনব ভাবনার প্রয়োগ প্রত্যক্ষ করা গেল। তাতে বাংলার আদি আলপনার সহজ গতি লাবণ্য খুঁজে না পাওয়া গেলেও বিশুদ্ধ শিল্পের রসাস্বাদনে কোনও বাধা হয় না। আলপনায় জ্যামিতিক এই রূপের প্রয়োগ শান্তিনিকেতন আশ্রমের ভিন্ন ভাবধারাকে আরো মহিমান্বিত ও আভিজাত্যপূর্ণ করে তোলে। রবীন্দ্রনাথও চেয়েছিলেন যে সমগ্র বিশ্বের যা কিছু ভালো তারই আদর্শ থেকে নির্যাস গ্রহণ করে তাকে নব নব রূপে উপস্থাপিত করা হোক। উপরে উল্লিখিত এই অনুষ্ঠান দুটির আলপনা, বেদি, সঙ্গীত ও মন্ত্রপাঠ– সব মিলিয়ে এক ভাবগম্ভীর স্বতন্ত্র আদর্শ রচনা করেছিল যা একইসঙ্গে ভারতীয় তথা প্রাচ্য ভাবসমৃদ্ধ। শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার এই প্রাথমিক পর্বে বৈদিক ভাবাদর্শ অনুসৃত হইয়েছিল। পরবর্তীকালে আলপনা ও সাজসজ্জায় পরিবর্তন ঘটলেও বেদ-উপনিষদের গাম্ভীর্যপূর্ণ অভিজাত রূপটি বরাবর বজায় আছে।

১৯১৪-তে কবির ইচ্ছানুযায়ী নন্দলাল শান্তিনিকেতনে এলেন অসিতকুমারের আগ্রহে ও সাহচর্যে। অসিতকুমার শান্তিনিকেতনের প্রাকৃতিক রূপের বর্ণনা চিঠিপত্রের মাধ্যমে তুলে ধরে নন্দলালকে আকৃষ্ট করতেন। ১৯১৪-এর এপ্রিলে নন্দলালকে যে সম্বর্ধনা দেওয়ার আয়োজন রবীন্দ্রনাথের ঐকান্তিক ইচ্ছায় করা হয়েছিল, সেই সভার আলপনার আর ১৯১১ সালের রবীন্দ্রনাথের পঞ্চাশতম জন্মোৎসব উপলক্ষে দেওয়া আলপনার নকশা সেই একই বৈদিক আদর্শে ও নক্সায় গঠিত। এই আলপনার কারিগর হিসেবে অসিতকুমার ও তাঁর তিন ছাত্র মণীন্দ্রভূষণ গুপ্ত, মুকুল দে এবং ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মার নাম পাওয়া যায় নন্দলালের লেখাতেই। 

শান্তিনিকেতনী আলপনায় জ্যামিতিক রূপের প্রয়োগ। শিল্পী লেখক স্বয়ং

১৯১৪-এর পর ১৯১৯ সালে নন্দলাল এলেও কলাভবনে যুক্ত হলেন শিক্ষক হিসেবে ১৯২০-তে এবং অধ্যক্ষ হলেন। ১৯২৪-এ শান্তিনিকেতনের আলপনার দায়িত্ব দিয়ে পূর্ববাংলা থেকে সুকুমারীদেবীকে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এলেন। তিনি বাংলার গ্রামীণ আলপনার চিরাচরিত মোটিফগুলিকেই বড়ো করে এঁকে নানাভাবে পুনর্বিন্যাস করলেন। তাঁর নিজস্ব অলংকরণবোধ তার সঙ্গে যুক্ত করে শান্তিনিকেতনের আলপনার মধ্যে এক সাবলীল সহজ সৌন্দর্য এনে দিলেন। বাদ গেল গ্রামীণ আলপনার একান্ত ধর্মীয় মোটিফগুলি। ফলে ব্রত আলপনার সহজ চলন শান্তিনিকেতনের মাটিতে এক নতুন রূপ নিল। সুকুমারীর সঙ্গে নন্দলালও তাঁর ভাবনা যোগ করতে থাকলেন। ঠিক এখানেই আমরা একবার পিছু ফিরে দেখে নেব নন্দলালের অতীত যাত্রাপথটি কারন পরবর্তী কালে তাঁর হাত দিয়েই আলপনার নতুন আদর্শ তৈরি করবে শান্তিনিকেতন।

Cave Painting
বরোদা কীর্তি-মন্দিরে নন্দলাল বসুর আঁকা দেওয়ালচিত্রে অলংকরণ

১৯০৭ ও ১৯০৮ সাল জুড়ে ছিল নন্দলালের উত্তর ভারত ও দক্ষিণভারত ভ্রমণপর্ব। যা দেখতে দেখতে তিনি নিজেকে সমৃদ্ধ করতে থাকলেন তা হল কাশী, সারনাথ, আগ্রা, মথুরা বৃন্দাবন, দিল্লী, ফতেপুর সিক্রি, বুদ্ধগয়ার স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও অলংকরণ। ১৯০৮-এ দক্ষিণভারতের ভ্রমণপথের প্রথমেই ওড়িশা। সেখানে ভুবনেশ্বর মন্দির, গৌরী মন্দির, বিন্দুসাগর মন্দির, বৈতাল-দেউল মন্দিরের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম নকশার কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হলেন। পর্যবেক্ষণ করলেন দক্ষিণ ভারতের প্রায় প্রত্যেকটি মন্দিরের স্থাপত্যনকশা, গোপুরমের গঠন, মন্দিরগাত্রের মূর্তির দেহভঙ্গি এবং অলংকরণ। ১৯০৯-এ দেখলেন অজন্তার গুহাচিত্রাবলী। সেখানে ছবির মধ্যে অলংকরন ও আলংকারিক বিন্যাস অনুধাবন করলেন। দেখলেন মানুষ, পশু-পাখি, লতাপাতার আকারকে আলপনার সঙ্গে কীভাবে তরঙ্গায়িত করা হয়েছে। তাঁর অন্তরে অলংকরন-বাসনার গতি চতুর্গুণ উজ্জীবিত হয়ে উঠল। যেখানেই নতুন কোনও ডিজাইনের সন্ধান পেয়েছেন, সেখানেই ছুটে গিয়ে তার শৈল্পিক গতিপ্রকৃতি আত্মস্থ করতে চেষ্টা করেছেন। স্কেচ করেছেন, নতুন নকশার ছাঁদে রূপান্তরিত করেছেন। জাভা, শ্রীলঙ্কা, তিব্বতী চিত্র, চিন ও জাপানের অলংকরণের বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করে নিজস্ব নকশা-ভাবনায় তার সুচিন্তিত প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। 

Gauri Bhanja Alpana
শান্তিনিকেতনে গৌরী ভঞ্জের আলপনা

এভাবেই তাঁর আঁকা দেওয়ালচিত্রে, চিত্রে, অলঙ্করণে, উৎসব-অনুষ্ঠানের সাজসজ্জায়, নাটক-নৃত্যনাট্যের মঞ্চসজ্জায় ভারতের ও প্রাচ্যের ঐতিহ্যপূর্ণ নকশার সমন্বয় ঘটেছে। সেই সমন্বয়ের ভাবনা থেকেই শান্তিনিকেতনের আলপনার নতুন আদর্শ গড়ে উঠেছে। কলাভবনের অধ্যক্ষের গুরুদায়িত্বে যুক্ত থাকার জন্য তিনি নিজে আলপনার কাজে প্রত্যক্ষভাবে সদাসর্বদা যুক্ত থাকতে না পারলেও তাঁর নান্দনিক আদর্শ তাঁর দুই কন্যার আলপনায় প্রান পেয়েছে– গতিময় হয়েছে। গৌরী ভঞ্জ ও যমুনা সেন রক্তসূত্রে, শিল্পশিক্ষায় ও শৈল্পিক পরিবেশে মানুষ হয়ে সর্বাংশে শান্তিনিকেতনের স্বতন্ত্র সৌন্দর্যধারাকে আত্মস্থ করেছিলেন। 

১৯২৪-এ শান্তিনিকেতনের আলপনার দায়িত্ব দিয়ে পূর্ববাংলা থেকে সুকুমারীদেবীকে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এলেন। তিনি বাংলার গ্রামীণ আলপনার চিরাচরিত মোটিফগুলিকেই বড়ো করে এঁকে নানাভাবে পুনর্বিন্যাস করলেন। তাঁর নিজস্ব অলংকরণবোধ তার সঙ্গে যুক্ত করে শান্তিনিকেতনের আলপনার মধ্যে এক সাবলীল সহজ সৌন্দর্য এনে দিলেন। বাদ গেল গ্রামীণ আলপনার একান্ত ধর্মীয় মোটিফগুলি। 

প্রকৃতিই ছিল তাঁদের আলপনার প্রধান উৎস। নানাবিধ গাছপালা, তাদের শাখাপ্রশাখা, ফুলপাতা, মাছ, পাখি ইত্যাদির মধ্যে যে আলংকারিক বৈশিষ্ট্য পেতেন, তাকেই বিভিন্ন নকশার বিন্যাসে সাজিয়ে নিয়ে আলপনা দিতেন। পিটুলিগোলা থেকে খড়িমাটি, এলামাটি ও গেরিমাটির রঙকে আলপনার বর্ণবিন্যাসের কাজে লাগাতেন। কখনও বিভিন্ন শস্যবীজ, নানারকমের ফুল ও পাতা দিয়ে আলপনা দিলেন উৎসবের ভাব ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী। নন্দলাল বসু, গৌরী ভঞ্জ, যমুনা সেন এবং তাঁদের ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মী শিক্ষকগণ আলপনার এই নতুন ভাবাদর্শ অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। পরবর্তীকালে শিক্ষক ননীগোপাল ঘোষ ও প্রণবরঞ্জন রায় শান্তিনিকেতনের আলপনার এই ঐতিহ্যময় রূপটি সর্বার্থে বহন করেছিলেন।

নন্দলাল আলপনাকে অন্তরের আনন্দময় অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে দেখেছিলেন। আলপনা দেওয়ার মুহুর্তে স্পেস অনুযায়ী ডিজাইনের রূপবিন্যাস, গতি ও ছন্দের প্রয়োগ কীভাবে হবে, তা কল্পনায় সাজিয়ে নিতেন গৌরী ভঞ্জ। আবার কখনও কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই নদীর সাবলীল গতির মতই তাঁর আলপনা এগিয়ে চলত। আলপনার অন্তর্নিহিত স্বচ্ছন্দ গতি বা প্রাণছন্দের কথা বলতে গিয়ে নন্দলাল বলেছিলেন– “গতিই হল আলপনার প্রাণ”। আ্ররো বললেন– ‘আলপনা হল নৃত্যভঙ্গীর মতো’। উপকরণ ও পদ্ধতি অপেক্ষা আলপনার গতিময়তা ও প্রাণছন্দের ওপরেই জোর দিয়েছিলেন। এভাবেই শান্তিনিকেতনের আলপনা হয়ে উঠেছিল শিল্পশিক্ষায় শিক্ষিত মনন, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও নকশা-নির্মাণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রাচীন ব্রত-আলপনার দৈববিশ্বাস থেকে সরে এসে শান্তিনিকেতনের আলপনা সম্পূর্ণ আস্থা রাখল নান্দনিকতায় ও আধ্যাত্মিকতায়। এভাবেই বেদ-উপনিষদের মহাজাগতিক দর্শন শান্তিনিকেতনের আলপনায় প্রতিফলিত হয়েছে।

Mix of Rural and Santiniketani motifs
ব্রত-আলপনা ও শান্তিনিকেতনের আলপনার নকশার সমন্বয় – উপাসনাগৃহের আলপনা – সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়

ঈশ্বর এই জগত সৃষ্টি করে মানুষকে বললেন– জল, স্থল, আকাশ, বাতাস, অগ্নি, এ সমস্তই আমি দিলাম। এই পঞ্চভূতের মধ্যেই সকল আনন্দ নিহিত রয়েছে। তুমি দ্রষ্টা হও– তুমিই স্রষ্টা হও। প্রকৃতি ও মহাজাগতিক দৃশ্যজাত ভাবোদ্দীপনা তোমার মধ্যে যদি চেতনার জাগরণ ঘটায় তাহলে তুমি সৃষ্টি কর– তাকে পুনর্নিমাণ কর। জগতজুড়ে যে অন্তহীন রূপের মাধুরী পরিব্যাপ্ত, তার সৌন্দর্যসুধা পান কর। তার প্রতিমাকল্প গড়ে তোলো। তাকে গতি দাও রেখায় রেখায়– তাকে নব নব রূপে প্রকাশ কর, তাকে ছন্দিত কর– নন্দিত কর। শান্তিনিকেতনের আলপনা এই আধ্যাত্মিক ভাবধারাকেই অনুসরণ করেছে।

 

*তথ্য সৌজন্য: 
ভারতশিল্পী নন্দলাল – পঞ্চানন মণ্ডল
বাংলার আলপনা: সুধাংশুকুমার রায়
রবিজীবনী: প্রশান্তকুমার পাল
ছবি সৌজন্য: 
লেখকের ব্যক্তিগত সংগ্রহ, লেখকের ফেসবুক পেজ, Quora

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com