banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

চোটের চটপট চিকিৎসা

ডাঃ ভাস্কর দাস

জুন ২, ২০২৩

pain relief first aid
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

আজ মাঠের চেহারাটাই পাল্টে গেছে। এমনিতে স্টেডিয়ামের মাঠ। মাপটা তাই মন্দ নয়। দুটো ক্লাবের সারাবছর ক্রিকেট কোচিং হয়। কোণে নেট বাঁধা থাকে। তা বাদে বাকি মাঠে ঘাস বাড়ন্তই বলা যায়। তবুও গরু চরে। ধোপারা কাপড় শুকোয়। এখানেই আজ চারদিন হল শুরু হয়েছে জুনিয়র ন্যাশনাল ভলিবল চ্যাম্পয়নশিপের খেলা। 

volley ball illustration Bhaskar Das
চলছে জুনিয়র ন্যাশনাল ভলিবল চ্যাম্পয়নশিপের খেলা

লোহার খাঁচার ওপরে শেড বিছিয়ে কিছুটা অংশে ইনডোর স্টেডিয়ামের চেহারা দেওয়া হয়েছে। বৈশাখের গরমে নইলে ছেলেমেয়েগুলোর দফা শেষ হয়ে যাবে। সাউথের ছেলেমেয়েরা তবু একরকম, কাশ্মীর উত্তরাখণ্ডের খেলোয়াড়দের কাহিল অবস্থা। খেলছে, ঘামছে, পায়ে টান ধরছে, মেডিকেল ইউনিটে এসে খানিকটা ORS জলে গুলে খেয়ে আবার নামছে।
মেডিকেল ইউনিটে ডিউটি করতে করতে দেখছিলাম ওদের খেলা। ওদেরও দেখছিলাম। অদ্ভুত সুন্দর লম্বা মেদহীন চেহারা। কৈশোরের লালিত্য জড়ানো। সত্যি বলতে কি ওদের পাশে দাঁড়িয়ে সাড়ে পাঁচের মোটাসোটা চেহারা নিয়ে ছবি তুলতে একটু হীনম্মন্যতায় আক্রান্ত হচ্ছিলাম যেন।

খেলা চলছে। স্ম্যাসটা ঠিক জায়গায় ল্যান্ড করতেই সমস্বরে চিৎকার। কেউ লিফটটা দারুণ করেছে। হাততালি, হাই ফাইভ। চিৎকার করে অভিনন্দন। ভাষা নিজস্ব, কিন্তু উচ্ছ্বাস এর প্রকাশটুকু  সর্বজনীন। ঢেউয়ের মতো উঠছে আর মিলিয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে দু নম্বর কোর্টে চিৎকারটা যেন কিছুটা দীর্ঘায়িত। একটু বেসুরো ছোটাছুটি। “স্যার এদিকে একটু আসুন, তাড়াতাড়ি।” অন্ধ্রের নেটে দাঁড়ানো মেয়েটি লাফিয়ে স্ম্যাসটা করে মাটি ছুঁতেই ডান পা-টি এঙ্কেল থেকে ঘুরে গেছে। দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গেলেই দারুণ ব্যথা, গোড়ালির বাইরের দিকটা চড়চড় করে ফুলে যাচ্ছে।
এবার কী করা উচিৎ?

খেলার মাঠের বাইরেও এমন ঘটনা আকছারই ঘটছে। ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে গোড়ালি ঘুরে গেছে। আধ ঘন্টায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা শেষ। সিঁড়ির স্টেপ মিস করে হাঁটু ঠুকে পড়ে গেছে মেজবৌদি। তারপর দাঁড়াতে গেলে হাঁটু আপনাতেই মুড়ে যাচ্ছে। চেয়ারে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছে বৌদি। দেশের বাড়ির কলঘরে শ্যাওলা পরিষ্কার হয় নি ক’দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে বয়স্কা মা পিছলে সেই যে পড়েছেন, আর ওঠার কোনও লক্ষণ নেই। নড়াতে গেলেই একেবারে আর্তনাদ করে উঠছেন “হিপ জয়েন্টটা গেল বোধহয় খোকা”।

এর সব ক্ষেত্রেই তো একটা প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে! ব্যথা কমাতে, আরও ক্ষতি আটকাতে কিছু ব্যবস্থা তো জরুরি! কিন্তু এই এক এক ধরনের চোটের জন্য কি তাহলে এক এক ধরনের চিকিৎসা? নাকি এর কোন সাধারণ সূত্র আছে?

হ্যাঁ, দ্বিতীয়টাই ঠিক।
এই সাধারণ সূত্রের নাম RICE.

R = REST
I  = ICE
C = COMPRESSION
E = ELEVATION

ব্যাপারটা বিস্তারিত আলোচনার আগে চোট লাগামাত্র শরীরের সেই অংশে কী কী প্রতিক্রিয়া হয়, অর্থাৎ response to injury-র একটা ধারণা করা চাই।
চোট লাগলে শরীর যে প্রক্রিয়ায় সাড়া দেয়, তার ডাক্তারি নাম inflammation বা প্রদাহ। এর আবার পাঁচটি উপাদান।

COLOR = উষ্ণতা বৃদ্ধি
DOLOR = ব্যথা হওয়া
RUBOR = লাল হওয়া
TUMOR = ফুলে ওঠা
FUNCTIO LEISA = নড়ার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।

লক্ষ্য করে দেখবেন, আপনার কোথাও একটু বেশি চোট লাগলে এর প্রত্যেকটাই হয়। আচ্ছা হয় তো, কিন্তু কেন আর কীভাবে হয়?

ফিরে যাই অন্ধ্রের মেয়েটির পড়ে যাওয়ার দৃশ্যে। পড়ার পর কী হল? না, সক্কলে দৌড়ে ওর কাছে চলে এল, সকলেই চায় তাকে সাহায্য করতে। শরীরেও সেই একই প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল।
চোট লাগলে চোট সারানোর ক্ষমতা যে কোষ ও রাসায়নিকদের আছে, তারা ওইখানে জড়ো হওয়ার জন্য দৌড় লাগাল। রক্তবাহিত হয়ে তারা আসবে, তাই প্রথমেই সেখানে রক্ত চলাচল বাড়তে থাকবে। তার জন্য রক্তনালীর প্রসারণ ঘটে, বেশি পরিমাণ রক্ত আসে, তাতে লালভাব দেখা দেয় আর আহত জায়গায় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। পাশাপাশি আঘাতের ফলে কিছু রক্তনালী ছিঁড়ে যায়, ক্ষরণ হওয়া রক্ত জমে যায় জায়গাটায়। ফোলা বাড়ে, লালিমা আর উষ্ণতা দুটোই ঊর্ধ্বমুখী হয়। এসবের সম্মিলিত ফলে ব্যথা বাড়ে আর নড়ার ক্ষমতা কমে। তাতে একটা উপকার আছে। না নড়ালে আরও বেশি আঘাতের সম্ভাবনা কমে।  জমা রক্ত, মৃত কোষ, অতিরিক্ত তরলের সমাহারে যে প্রদাহজনিত জঞ্জাল জমা হচ্ছে, তা সরানোর কাজটা কিন্তু ওই প্রদাহের প্রক্রিয়ায় আনা কোষ আর রাসায়নিকদেরই করতে হয়। এ যেন সাপ হয়ে কাটে আর ওঝা হয়ে ঝাড়ে। অর্থাৎ এখানে একটা সূক্ষ্ম ব্যালেন্সের খেলা চলছে। শেষাবধি কম জঞ্জাল মানে ত্বরিতগতির জঞ্জাল অপসারণ এবং দ্রুত কাজে ফেরা।

injury and pain relief
আঘাতের ফলে কিছু রক্তনালী ছিঁড়ে যায়, ক্ষরণ হওয়া রক্ত জমে যায় জায়গাটায়।

এইখানেই RICE এর কার্যকারিতা।
অর্থাৎ চোট লাগলে
১) বিশ্রাম দেবেন আহত দেহাংশটিকে। তাতে আরও আঘাতজনিত ক্ষতি হবেনা। প্রদাহকে একটা সীমার মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব হবে।

Rest ice compression elevation

২) বরফ লাগাবেন। উষ্ণতায় প্রসারণ আর ঠাণ্ডায় সংকোচন আমরা সকলেই জানি। বরফ লাগলে রক্তনালীর প্রসারণ একটা সীমার মধ্যে থাকবে। তাতে অতিরিক্ত জলীয় পদার্থ আর কোষ জমে প্রদাহজনিত জঞ্জালের পরিমাণ বাড়বে না। বাকিটা আগেই বলেছি।
বরফ লাগানোর সাধারণ সূত্র, এক একবারে ৪-৫ মিনিট বরফ লাগাবেন প্রতি ২০ মিনিট অন্তর। পরে তা বাড়িয়ে এক থেকে তিনঘন্টা করতে হবে। চামড়ার ওপর সরাসরি বরফ লাগানো বারণ। তাতে চামড়া পুড়ে যেতে পারে। আইস ব্যাগ হলে ভালো, নইলে প্লাস্টিক মুড়ে লাগাবেন, যাতে বরফ ঠান্ডা জল সরাসরি চামড়া না স্পর্শ করে। 
ফ্রস্ট বাইটের কামড়ে যন্ত্রণা বড় কম নয়।

ice pack for injury and pain relief
আহত জায়গাটিতে আইসপ্যাক লাগান

৩) চাপ দেওয়া। নতুন বউয়ের আঙ্গুলের ডগা কেটে গেছে কুটনো কুটতে বসে। শাশুড়ি বলছেন, ও বৌমা, আঙ্গুলটা চেপে ধরে রাখো খানিকক্ষণ। রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। গেলও তাই। ওই “খানিকক্ষণ”- এর মধ্যে রক্তনালীর কাটা প্রান্ত গুটিয়ে গেল, বাকিটা বন্ধ হয়ে গেল রক্তের বিভিন্ন কণিকারা মিলেমিশে একটা ডেলা তৈরি করে নালীর ফাঁকটুকু বুজিয়ে দেওয়ায়। আঙ্গুলের ক্ষেত্রে যে সমীকরণ, তা সমানভাবে প্রযোজ্য অন্য সব জায়গায়। অতএব আহত জায়গাকে কেন্দ্রে রেখে তার কিছুটা ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত ক্রেপ ব্যান্ডেজ বা ওই জাতীয় কিছু দিয়ে সমানভাবে চাপ দিলে একই প্রক্রিয়ায় ছিঁড়ে যাওয়া রক্তনালী থেকে রক্তপাত বন্ধ হবে, আর প্রসারিত রক্তনালীর সংকোচন হয়ে প্রদাহজনিত রসের ক্ষরণ কমে আদতে প্রদাহের সব কটি উপাদানকেই নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

crepe bandage in injured body part
আহত জায়গা ক্রেপ ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন।

৪) উঁচু করে রাখা – জল উঁচু থেকে নিচের দিকে বয়ে যায়। ধরা যাক আপনার গোড়ালিতে চোট লাগল। আপনি তাকে নীচের দিকে ঝুলিয়ে রাখলেন। প্রদাহের যাবতীয় জলীয় অংশ এবার ওইখানেই জমতে লাগল, ফলে ফোলা আর তজ্জনিত বাকি সমস্যারা ভিড় করল গোড়ালিতেই। এবার আপনি শুয়ে পায়ের নীচে বালিশ দিয়ে এমনভাবে রাখলেন, যাতে গোড়ালি হাঁটুর চেয়েও উঁচুতে আছে। অভিকর্ষের নিয়মে জল গোড়ালির থেকে হাঁটুর দিকে নামবে, অর্থাৎ ফোলা ব্যথা একজায়গায় কেন্দ্রীভূত না হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। তাতে স্থানীয় সমস্যা মিটবে সহজে, গোড়ালি কিছু আগেই সেরে উঠে শরীরের ভার বইবার উপযোগী হয়ে উঠবে।

pain relief
আহত জায়গা বাকি শরীরের থেকে উঁচু করে রাখতে হবে।

চোট লাগা অংশে যা যা করবেন না
১) গরম সেঁক, চুন হলুদ গরম বা ওই জাতীয় কিছু লাগাবেন না কখনওই।
২) কোন মালিশ, ম্যাসাজ, হাড় বসানো জাতীয় অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নেবেন না।
৩) চামড়া কেটে রক্ত বেরোলে, হাড় ভেঙেছে সন্দেহ হলে, বা কখনও দুটোই একসঙ্গে ঘটলে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতাল বা ডাক্তারবাবুর কাছে দৌড়ে যাবেন।

আপনার দৌড়টা অবশ্য এক্ষেত্রে দৌড়তে হবে আপনার বন্ধু ও সঙ্গীদের। কারণ আপনার কাছে তখন অন্ন(RICE)চিন্তাই চমৎকারা।

ছবি সৌজন্য: ডঃ ভাস্কর দাস ও Pixabay

ডাঃ ভাস্কর দাস পেশায় অস্থিশল্য চিকিৎসক। নেশা ফোটোগ্রাফি, লেখালেখি। ভ্রমণ ও বাংলার অতীত কৃষ্টি ও সংস্কৃতির খোঁজ প্রিয় বিষয়।
লেখা প্রকাশিত দেশ, হরপ্পা, কৃত্তিবাস, সাপ্তাহিক বর্তমান, ইত্যাদি পত্রিকায়। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন। এ বছরে ভ্রমণআড্ডা সংস্থার 'কলম' সম্মান প্রাপক।

One Response

  1. অসাধারণ উপস্থাপনায় ভাস্বর ভাস্কর দাস। স্কেচগুলো যোগ্য সঙ্গত করেছে। এত সহজ ভাবে এত কঠিন ব্যাপার গেলানো মনে আপনিই সিদ্ধহস্ত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com