banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

তুমি আছ প্রেমে ও প্লাবনে

নন্দিনী সেনগুপ্ত

মে ৫, ২০২১

love poems of Shankha Ghosh
'না না, বলব না কিছুই। / রোজ রোজ এই একই কথা বলতে বলতে ধ্বস্ত হয়ে গেছি...'
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

আমরা এক কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে আছি। সম্ভবত এ এক যুগসন্ধিক্ষণ। আমরা সবাই এই অতিমারীর সময়ে দিগ্‌ভ্রান্ত। কবি শঙ্খ ঘোষের সদ্যপ্রয়াণ আমাদের বিহ্বল করে দিয়েছে এবং ঠিক এখনই তাঁর কবিতা পড়ে যাওয়া, বারবার পড়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের কাছে অবশ্যকর্তব্য আর কিছু থাকতে পারে না। তাঁর কবিতা পাঠ করবার জন্য এবং কবিতাগুলির কেন্দ্রস্থলের অনুভূতিতে পৌঁছে যাবার জন্য আমরা এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রস্তুত কিনা জানা নেই। তবুও আমরা পড়তে থাকি এবং পরম ধৃষ্টতায় আমাদের সীমিত বোধবুদ্ধি দিয়ে তাঁকে ছুঁয়ে থাকার চেষ্টা করতে থাকি। কবিও তাঁর পাঠকদের স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছেন পঙক্তিগুলি নিজের মতো করে বুঝে নিতে।

তাঁর কবিতা বহুমাত্রিক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। আবেগ, মনস্তত্ব, বোধির সঙ্গে নানা রূপকে, নানা সঙ্কেতে উঠে আসে শ্লেষ, প্রতিবাদ। আবার কখনও লোককথার আঙ্গিকে সহজ ভাষায় বলা হয় জটিল তত্ত্ব। সব কিছু পরিপাক করা কঠিন আমাদের পক্ষে। তবুও তাঁর কবিতার বিচিত্র সম্ভারের কিছু না কিছু মানুষকে ছুঁয়ে যেতে পারে, অবশ করে দিতে পারে। তাঁর কবিতা কখনও অস্ত্র, কখনও শুশ্রূষার জাদুমাখা নরম পালক। সে কারণেই রবীন্দ্রনাথ এবং জীবনানন্দের পরে বাঙালি জাতি যে কবিকে নিয়ে বিশেষ আপ্লূত হয়, তাঁর নাম শঙ্খ ঘোষ।  

কবির শৈশব এবং কৈশোরের বেশ কিছুটা সময় কেটেছে দেশভাগের আগে বরিশালের বানারীপাড়ায়, সন্ধ্যানদীর কূলে। ফেলে আসা সময়ের প্রতিচ্ছবি দেখি- ‘কতদিন মুঠো মুঠো এমন প্রভাত তুমি ধরেছ কিশোর?’  শিকড়ের যন্ত্রণার সুর কি বারেবারে বেজে ওঠে কবিতায়? বেদনা এড়াতে পারে না তাঁর অনেক কবিতা, এমনকী প্রেমের কবিতাও। ‘আহা, কেবল বেদনা বুঝি ভালবাসে তোমার হৃদয়!’ ‘যন্ত্রণা তার পাকে পাকে হৃদয় খোলে, সে খোলাটার/ অন্য মানে আছে’। অন্য মানে খুঁজতে যাওয়া ভালবাসার কবিতার শরীরের বিভঙ্গে লেগে থাকা বেদনার স্বেদবিন্দু কবিতাগুলিকে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যে মহান করে তোলে।

এই সুন্দরের মুখোমুখি দাঁড়াবার সময় এখনই; নচেৎ আমরা আজ এই অসুন্দর কঠিন সময়ের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারব না। ‘বহো রে আলোর মালা অবশা রাত্রি ঘিরে’— কবিতার শরীর জুড়ে তৈরি হওয়া চারটি কলাম যেন অন্ধকার রাতের মাঝে বাতিস্তম্ভ; আলোর মালা কি আমরা বহন করতে পারব? শব্দগুলো এক বিশাল প্যানোরামা খুলে দেয় সামনে এবং আমাদের হৃদস্পন্দনের ছন্দের সঙ্গে মিলে যায় কবিতার ছন্দ। হ্যাঁ, এই মুহূর্ত অবধি এখনও বেঁচে আছি আমরা। এই পাঠ টাটকা অক্সিজেন ভরে দিচ্ছে আমাদের শ্বাসযন্ত্রে… ‘রাত্রির কলস ভেঙে প্রভাত গড়ায় দিকে দিকে’।      

শঙ্খ ঘোষ কি শুধু একমাত্রিক সুন্দরকে মৃদুভাষ্যে তুলে এনেছেন তার কবিতায়? একেবারেই নয়। দীর্ঘ প্রায় সত্তর বছর সময় ধরে লেখা কবিতাগুলিতে ইতিহাস, সমাজচেতনা সবকিছুর প্রতিফলন ঘটছে এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উঠে আসছে প্রতিবাদের সুর। আবার অনেক প্রতিবাদী কবিতার অক্ষরেখা দিয়ে পারাপার করছে নিরুচ্চার প্রেমের রেশমি সুতোর বাঁধন। বেঁধে বেঁধে থাকার কথা বলতে পেরেছেন কবি; এ মানুষের কথা। মানুষকে জেনেছেন বলেই হার্দিক স্পর্শ দিয়ে লিখেছেন মানুষেরই ভালবাসার কথা। কবির ভাষার এবং শব্দের ঝঙ্কারের বৌদ্ধিক প্রকাশে সর্বত্র হৃদয়ের স্পর্শ লেগেছে বলেই তা বেঁচে থাকছে প্রায় তিন প্রজন্মের মানুষের মনে। উদাহরণস্বরূপ, ‘সঙ্গিনী’ কবিতার প্রথম দুটি লাইন হয়ে গেছে বাংলা প্রবাদ এবং শেষ দুটি লাইনে উন্মোচিত হচ্ছে দার্শনিক সত্য। ‘তুমি আমায় সুখ দেবে তা সহজ নয়/ তুমি আমায় দুঃখ দেবে সহজ নয়।’ 

এই জায়গাতেই শঙ্খ ঘোষ অনন্য। সরল ভাষায় জটিল জগতের চরম সত্যের দিশা দেখিয়ে দিতে পারেন। কখনও প্রেমিক, নাকি শিক্ষক বলে ওঠেন… ‘মেঘের কোমল করুণ দুপুর/ সূর্যে আঙুল বাড়ালে-/ তোমাকে বকব, ভীষণ বকব/ আড়ালে।’ আসলে এই আড়ালটুকুর প্রয়োজন শুধু কবিতার ছন্দে নয়, প্রয়োজন জীবনে, প্রয়োজন মানুষের ভালবাসায়, যাপনে। প্রেম আড়ালে নিরাপদে সুরক্ষিত রাখবার জন্যই উচ্চারিত হয় ‘তোমায় নিয়ে যাব অন্য দূরের দেশে’। চিরকাঙ্খিত এই আড়াল যখন দুর্লভ হয়ে ওঠে, তখন ‘হেতালের লাঠি’ কবিতাটিও একাধারে প্রতিবাদ, অন্যধারে প্রেমের কবিতা হয়ে ওঠে। কবিতা, নাকি কাহিনি? প্রেম কীভাবে পৃথিবীকে ‘সুন্দরতর’ করে তুলতে পারে, সেই আখ্যানের সফলতা বিম্বিত হয়।



দুপুরে রুক্ষ গাছের পাতার
কোমলতাগুলি হারালে
তোমাকে বকব, ভীষণ বকব
আড়ালে…
মেঘের কোমল করুণ দুপুর

সূর্যে আঙুল বাড়ালে
তোমাকে বকব, ভীষণ বকব
আড়ালে…


কবি যেন প্রেমের প্রহরী হয়ে জেগে থাকেন হেতালের লাঠি হাতে মনসামঙ্গল কাব্যের চাঁদ বণিকের মত
, যেন রাত্রির কোনও ফণা এসে না কুণ্ডল করে প্রেমের শিয়রে। এই কবিতায় প্রেমের জয়গানের পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে, বর্তমান সময়ে এবং সভ্যতায় কি অতীতের মতই বারে বারে খর্ব হয় প্রেমের অধিকার? প্রেমের আসন কি কলঙ্কিত হয় ‘নাগিনীপিচ্ছিল’ অন্ধকার রাতের হিসেবি আঙুলের স্পর্শে? আশাবাদী কবি প্রেমকে জিতিয়ে দিতে চান; তাই  ‘চম্পকনগরে কানীর চক্রান্ত’ ব্যর্থ করে দেওয়ার শপথ উচ্চারিত হয়।

কোনও কবিতায় আবার মিষ্টি সহজ প্রেমের গল্প শুরু হয় ‘গাঁয়ের নাম উজালডাঙা, সইয়ের নাম জবা।’ শেষ স্তবকে ছন্দে ছন্দে ফেটে পড়ে ব্যর্থ প্রেমের হাহাকার, ‘দু’হাত দিয়েই ধরেছিলাম, রইল না তো তবু/ হাতেই কোনও ভুল ছিল কি তবে?’ যে সময়কালে ভেঙে যাওয়া প্রেম নিজের ভুল খুঁজে ফিরত বিনয়নম্র সহবতে, কবি সেই সময়টাকে অমর করে রেখেছেন এই কবিতায়। বর্তমানে ‘ব্রেকআপ’ ঘটে যখন তখন, ভুল খুঁজে বেড়াবার অবকাশটুকুও থাকে না; কাজেই তরুণ প্রজন্ম হয়তো সেভাবে অনুভব করবে না এই প্রেমের স্বরূপ। যান্ত্রিক সভ্যতার পৃথিবীতে ‘ভালবাসা, বস্তুত প্রান্তিক’, এমনকী ভুমধ্যসাগরের তীরেও ভালোবাসা ‘কখনো মসৃণ নয়’; তবুও প্রেমের মৃদু উচ্চারণের জন্য মানুষকে ফিরে আসতে হবে বৈরাগীতলার মাঠে।  

প্রেমের কবিতা গড়ে ওঠে নানা ধাঁচের চরিত্রকে ঘিরে। ভিখারি বাউল অথবা পুবসাগরের পারে দেখা প্রথম নারী থেকে শুরু করে নীরব পল্লবের মতো নত প্রেমিকেরা অধিকার করে তার পঙক্তি। কখনও রাত্রির অন্ধকার হয়ে ওঠে কবিতার প্রধান চরিত্র। ‘সবকিছু মুছে নেওয়া এই রাত্রি তোমার সমান।’ কখনও বই হয়ে যায় কেন্দ্রীয় চরিত্র, বইকে ঘিরে তৈরি হয় নাটকীয় মুহূর্ত। ঘুমন্ত সঙ্গিনীর মুখে হাত রেখে প্রেমিক যেভাবে কথা বলে, ঠিক সেভাবে বইকে কবি বলে ওঠেন ‘ওঠো / জেগে ওঠো, এইবার একা।’ বসন্তদিন, মেঘের মতো মানুষ- এরাও আসে কবিতার চরিত্র হিসেবে। নরম আলোর মতো সূর্যাস্ত, নদীর কিনারে গ্রামান্তে নতজানু হয়ে থাকা মন্থর দিন, এরকম উপমা ব্যবহার করে কবি বলেন ‘এই প্রেম, আমাদের ভালোবাসা।’ আবার যখন একজীবনের কাজের আমূল ধ্বংসস্তূপের উপরে দিশাহীন মানুষ দাঁড়ায়, তখন অমোঘ বাণীর আশ্বাস পাই ‘ভালোবাসা অর্ধেক স্থপতি!’          

বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থের ‘খড়’ অংশটির মধ্যে পর পর অনেকগুলি কবিতা যেন মালার মতো গেঁথে রেখে তৈরি হয়েছে একটা সম্পূর্ণ কাহিনি। নিরুচ্চার ভালবাসা এভাবে তাঁর মতো আর কে বলতে পারেন? ‘শূন্যতাই জানো শুধু? শূন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে/ সেকথা জানো না?’  ‘পাথরের  উপরে খড় বিছানোর শব্দ/ বুকে তোমার হাত’ – প্রেমহীন পাথরের মতো বুকে প্রেমে ভেজা আঙুলের স্পর্শ থেকে যায়। দাগ থেকে যায় শহরের ‘অ্যাসফল্‌ট বাঁধা’ বুকেও। শুধুই ফেলে আসা শিকড়ের প্রকৃতির ‘শিরার ভিতরে নৌকোনদীর/ সংঘাত’ নয়, ইটকাঠকংক্রিটে গড়া শহর কলকাতায় ছড়িয়ে পড়ে প্রেমের অভিজ্ঞান। ‘ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড’ কবিতায় নেমে আসে বৃষ্টিধারা এবং ‘হাল্কা পায়ে ভিজে যায় ওই দুটি মানব-মানবী/ শিরস্ত্রাণহীন।’

কবি যেন প্রেমের প্রহরী হয়ে জেগে থাকেন হেতালের লাঠি হাতে মনসামঙ্গল কাব্যের চাঁদ বণিকের মত, যেন রাত্রির কোনও ফণা এসে না কুণ্ডল করে প্রেমের শিয়রে। এই কবিতায় প্রেমের জয়গানের পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে, বর্তমান সময়ে এবং সভ্যতায় কি অতীতের মতই বারে বারে খর্ব হয় প্রেমের অধিকার? প্রেমের আসন কি কলঙ্কিত হয় ‘নাগিনীপিচ্ছিল’ অন্ধকার রাতের হিসেবি আঙুলের স্পর্শে?            

প্রেমের জটিল রূপ ফুটে ওঠে ‘অন্ধ তোমার ভালবাসায় পাপ ছুঁয়ে যায় নাকি’ কবিতায়। প্রেমে নিঃস্ব হয়ে যায় মানুষ সব জেনেবুঝে। ‘ভিখারি বানাও, কিন্তু মনে মনে জানোনি কখনো/ তুমি তো তেমন গৌরী নও।’ দ্বিধাগ্রস্ত প্রেমের কথা-  ‘এই মুখ ঠিক মুখ নয়/ মিথ্যে লেগে আছে। এখন তোমার কাছে  যাওয়া ভালো না  আমার।’ আবার স্বীকারোক্তি উচ্চারিত হয় ‘তোমার অনেক দেওয়া হলো/ আমার সমস্ত দেওয়া বাকি।’ সমর্পণের বিন্দুতে এসে রবীন্দ্রনাথ মনে পড়ে ‘আমার যে সব দিতে হবে…’। প্রেমের এই সমর্পণ যেন এক যজ্ঞযেখানে কবি নিজেই হয়ে ওঠেন সমিধ- ‘দু্রন্ত-ঝড়- কল্লোল তুলে আমাকে তোমার/ হোম করে নাও হোম করে নাও!’        

তুমি এসে হাত পাতো, হাত রাখো পাথরে ধুলায়/ গাছ হয়ে যাবে সব গাছের শিরার মতো হবে’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রেম হাত ধরাধরি করে চলে কবিতায়। ‘গাছ কেঁপে যায় ফুল তোলে মুখ, সন্ধ্যা-ভোরের আলোর বিনয়/ সবাই মিলে গান তুলেছে ,প্রেমের মতন আর কিছু নয়।’ নদীর ঢেউয়ের ছন্দে বহে চলা কবিতা যেন গান হয়ে ওঠে। ‘যুগল নিঃশ্বাস প্রবাহিত হলো ধানখেতের উপর তোমারি সংহত শরীরের মতো, দূরে…’ প্রকৃতির সঙ্গে একাকার নানা মাত্রার, নানা রঙের, স্তরে স্তরে খুলে যাওয়া এক ‘হাজারদুয়ারি’ ভালবাসার কথা জানতে পারি তার কবিতায়।      

প্রেমের ক্ষণস্থায়ী ওঠাপড়ায় ‘মুহূর্ত এখানে এসে হঠাৎ পেয়েছে তার মানে।’ তবুও কবি শেষ পঙক্তিতে বলেন, ‘এখনও বুঝিনি ভালো কাকে ঠিক ভালোবাসা বলে’। যৌবন ‘দিন আর রাত্রির মাঝখানে পাখিওড়া ছায়া’, তবুও চিরকালীন ভালবাসায় আস্থা আছে তাঁর- ‘কবি রে, আজ প্রেমের মালায়/ ঢেকে নে তোর দৈন্য!’ মানুষে মানুষে বিদ্বেষহিংসা সবকিছুই অনায়াসে উঠে আসে তাঁর কবিতায় ‘মানুষ কী করে এত পারে?’ কিন্তু আশাবাদী কবির শেষ কথা ‘মানুষ তবুও তার ভালোবাসা রেখে গেছে পায়ে।’ শুভকামনার মতো, উপহারের মতো পঙক্তি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে- ‘আর সবই মৃত্যুর কবিতা, কেবল এইটে জীবনের/ আর সবই আমার কবিতা, কেবল এইটে তোমার’।      

প্রেমের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা থাকে। থেকে যায় হারিয়ে ফেলার ভয়- ‘আজ ধ্বংস হয়ে যাবে সমস্ত যৌবন/ আজ রাত্রে ধ্বংস হবে প্রেম’। উচ্চারিত হয়- ‘সঙ্গ দেবার জন্য কোনও হাত নেই আর কোথাও/ সংগোপনের মন বুঝবার মন।’ আশাভঙ্গের এই পৃথিবীতে মানুষ ‘প্রেম বলে কোনও ঋণ রাখেনি কোথাও’। প্রেমের কষ্ট থেকেও বেশি পীড়া দেয় অপ্রেম- ‘তোমার কথাতে কোনও কষ্টের আঘাত পাইনি দেখে/ অবিরাম কষ্ট হতে থাকে।’  প্রেমের শিকড় ঘেঁষে উঠে আসে অভিমান ‘এখন আমি অনেকদিন তোমার মুখে তাকাব না’/ প্রতিশ্রুতি ছিল, তুমি রাখোনি কোনো কথা।’ অভিমানের প্রকাশ অনেক কবিতাতেই- ‘অনেকদিন তেমন কোনো কথাও বলছি না/ কেন তা তুমি ভালোই জানো।’ 

সেই সনাতন ভরসাহীন অশ্রুহীনা
তুমিই আমার সব সময়ের সঙ্গিনী না ?
তুমি আমায় সুখ দেবে তা সহজ নয়
তুমি আমায় দুঃখ দেবে সহজ নয় |

কোথাও খুলে যায় আত্মপ্রেমের আকাশ- ‘ঘর ছেড়ে পথে যাই/ পথ ছেড়ে আনন্দ নদীর।’ আবার সচেতন হয়ে প্রেমিক বলে ‘ভোলাও এ আত্মময় পাতালপ্রোথিত শল্যপাত’। ফিরে আসতে চায় সে দয়িতার কাছে– ‘তোমার দেবতা নেই, তোমার প্রেমিক শুধু আছে।’ ‘গলিত দ্রব নীরবতা’র মতো ‘সামান্য সম্বল’ নিয়ে অনুক্ত প্রেম ধ্বংস হতে হতেও বেঁচে যায়। দিনের শেষে তাঁর কবিতা বেঁচে থাকার কথা বলে- ‘নিথর ধমনী নিয়ে দু-মুহূর্ত বাকি আছে জেনে/ গান্ধর্ব আমরা আজ সমস্ত উড়িয়ে এসো বাঁচি।’ আশাবাদে জারিত হওয়া প্রেমের কথা বলে ‘চুম্বন করেছ তাকে শঙ্খের ফুৎকারের মতো, আর/ ধ্বনি তার আলো হয়ে গড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে’। আলোকবর্তিকা হয়ে দিশা দেখায় পঙক্তিগুলি আজ এই বিপন্ন সময়ে।

আঙুল, ধানের শিষ, তুমি আছো প্রেমে ও প্লাবনে’- বিভিন্ন প্রতীকে প্রেম জেগে ওঠে ছন্দে ছন্দে। ছন্দের এবং যতিচিহ্নের পরোয়া না করে মুক্তগদ্যের আঙ্গিকে লেখা ‘অনেকদিন মেঘের সঙ্গে কথা বলোনি তাই এত শুকনো হয়ে আছো এসো তোমার মুখ মুছিয়ে দিই।’ প্রেম কি তবে ব্যথার উপশম, যা নেমে আসে আঙুলের স্পর্শে? নাকি ফসলের গানে পরিণতি পায় প্রেম? উত্তর পাই অন্য কবিতায়- ‘যে-শুশ্রূষা জেগে ওঠে তোমার দুচোখে, আমি চাই/ তার সবখানি আজ আমার শরীরে এসে বিন্দু হয়ে যাক।’ পাঁজরে পালক বুলিয়ে দেওয়া সান্ত্বনায় পরম উপলব্ধি ‘তোমার আঙুলে আমি ঈশ্বর দেখেছি কাল রাতে।’ প্রেম জলের মতো শীতল শান্তি আনে- ‘মনে হয় একদিন তুমি/ জলাধার হয়ে তবু দাঁড়াবে আমারই সামনে এসে।’ ভবিতব্যের মতো তৈরি হয় প্রেমের এক কক্ষপথ- ‘আমারও নিয়তি এই, তোমাকেই ঘিরি পাকে পাকে।’ অবশেষে সেই কক্ষপথে স্থির, অবিচল হয়ে থাকে প্রেম– ‘…সমস্ত দিনমান পথে পথে পুড়ে বেড়াই/ কিন্তু আমার ভালো লাগে না যদি ঘরে ফিরে না দেখতে পাই/ তুমি আছো, তুমি।’ জীবনের যাত্রাপথের শেষে সুরলোকের গৃহে ফিরে কবির ভালো লাগেনি একা, তাই কিছু সময়ের ব্যবধানে ডেকে নিলেন তার সঙ্গিনীকে। স্থির বিশ্বাস থেকে যায়…  

‘… আবার আমাদের দেখা হবে কখনো
দেখা হবে তুলসীতলায় দেখা হবে বাঁশের সাঁকোয়
দেখা হবে সুপুরি বনের কিনারে…’    

আকর হিসেবে ব্যবহৃত শঙ্খ ঘোষের  কাব্যগ্রন্থের তালিকা   

দিনগুলি রাতগুলি
নিহিত পাতালছায়া
তুমি তো তেমন গৌরী নও
আদিম লতাগুল্মময়
মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়
পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ
প্রহরজোড়া ত্রিতাল
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
বাবরের প্রার্থনা
ধূম লেগেছে হৃৎকমলে
গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ

জন্ম জুলাই, ১৯৭১, কলকাতায়। ২০০৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূবিদ্যায় পিএইচডি। গল্প, কবিতা লেখালেখি ছাড়াও ইংরেজি এবং জার্মান ভাষা থেকে অনুবাদের কাজ বিশেষ পছন্দের। ২০১৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতার বই ‘অরণ্যমেঘবন্ধুর দল’ বিশেষ সমাদৃত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com