নিষাদ, তুমি রেশম ফিরি করো?
দূরের আকাশে আজ অঞ্জন পরিয়েছ পাখির দু‘চোখে
রেশম তোমার কথাই তো বলে
ঠায় দাঁড়িয়ে মানুষটা
পিঠে তার অসম্ভব ব্যথা
পাখনা আজ খুলে রেখে এসেছে সে
আজ সে পার্থিব
আজ তাকে সবাই পেয়েছে
গুমটির আগুন থেকে ধোঁয়া ওঠে উত্তরের মাঠে
দিগন্তে পদচারণার অক্ষর, সে গুনে গেঁথে রাখে
মার্কশিট শূন্যতায় ওড়ে
তার ধারাই অমন
অংক করে, উত্তর মেলাতে পারে না কোনওদিন!
সবাই আসছে ধীরে ধীরে
পুঁটুলির মতন সন্তান, পায়ের চামড়া ছিঁড়ে রক্তের কৃষ্ণঠাকুর
তারা
যারা
অগুনতি আঁচড় কাটে পৃথিবীর পাতায়, তবু চিহ্ন পড়ে না মৃত্যুর!
ছেলেটি দেখছে
পেটে বাচ্চা নিয়ে ঘরে ফিরতে চাওয়া মায়েরা ঠিক কেমন হয়
তার মনে পড়ছে জন্মের কথা
সোঁদা সোঁদা ভাত বাড়ত একা
বইখাতা গুছিয়ে নিয়ে স্কুল
ছুটতে ছুটতে সে নক্ষত্র হয়ে যেত কখন
বাবা বাজতেন একতারার মতন
মা বড় বুনিয়াদি শরিকের মতন বিস্ময়
হিসেবপত্র থেকে খুঁজেই পেতেন না নিজেকে–
জীবনানন্দ শুধু পড়ে থাকত ছেলের বিদ্যালয় ব্যাগে
কেউ জানত না
খোঁজ রাখত না
ছেলেটি যে কবিতা লেখে, ছেলেটি যে কবিতাও লেখে…
দক্ষিণদিক থেকে কারা আসে পশ্চিমপ্রান্তে
সীমান্তে শাঁখ নেই কোনও, গরিব মানুষকে বুঝি বরণ করতে হয় কখনও!
ছেলেটি দেখে পদ্মার গর্ভের জলে সে-ই যেন ভাসছে কতকাল
মায়েরা জন্ম দিচ্ছে তাকে, খেতে দিচ্ছে অপাঙক্তেয় আঁধার
সে চুপ সে নির্জন সে কালপুরুষ দেখে আজ দিকশূন্য আকাশ হয়ে গেছে
পরিযায়ী ডিউটি তার শেষ
সে-ও ফিরে আসে বুঝি— পরিযায়ী ছেলে পরিযায়ী ঘরদোরে ফেরে?
পরিযায়ী মা, স্ত্রী, অমূর্ত সন্তানের কাছে?
নাঃ! ফিরে আর আসে না আবার
সে তার বোধের রেশম ফিরি করবে সারাজীবন
পরিযায়ী সীমান্তের ধারে….
*ছবি সৌজন্য: The Guardian
ঝিলমের জন্ম ১৯৮৪ -তে। দর্শনের ছাত্রী ছিলেন। লেখায় প্রবেশ সাতাশ বছর বয়সে। অনুভূতির গভীরে তাঁর লেখার শিকড়। ২০১৫ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ "নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত ঘোষণা"। ২০২০-তে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "বৃষ্টি পড়া বাড়ি", প্রতিভাস থেকে। ২০২১-এ প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই "আখরোট" এবং ওই একই বছর, কাশ্মীর থেকে তাঁর বাংলা কবিতার ইংরাজি অনূদিত কাব্যসংকলন- "Memoir Of a Girl" প্রকাশিত হয় মৌলীনাথ গোস্বামীর অনুবাদে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে চলেছেন। "দেশ" অনলাইন পত্রিকায় "নির্বাচিত কবি"-র সম্মান পেয়েছেন। লিখতেই হয় তাঁকে ঈশ্বরের অদৃশ্য নির্দেশের মতো।
One Response
খুব ভালো লাগল। কবিকে একরাশ শুভেচ্ছা।