প্রবাসের পটভূমিকায় লিখিত বলে উপন্যাসে ইংরিজি সংলাপ ও শব্দের বহুল ব্যবহার রয়েছে।
আগের পর্ব পড়তে: [১] [২] [৩] [৪] [৫] [৬] [৭] [৮] [৯] [১০] [১১] [১২] [১৩] [১৪] [১৫] [১৬] [১৭] [১৮] [১৯] [২০] [২১]
(৩৮)
সব জট পাকিয়ে গেছে রোহিণীর৷ ও মনে মনে জানে ওর চেয়েও বেশি নাড়া খেয়েছে রণো৷ রণোর মধ্যে ওর বাবার জেনেটিক ট্রেট পুরোমাত্রায় রয়েছে৷ বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ভীষণ আউটগোয়িং, যে হালকার উপর দিয়ে নিয়েছে জীবনটাকে৷ কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভীষণরকম অন্তর্মুখী৷ নিজের ভিতরে কী টানাপোড়েন চলছে, সহজে তা জানতে দেওয়া দূরে থাক, অনেক সময় পাশের লোকও বুঝে উঠতে পারবে না, যে ভিতরের কোন ইমোশনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে মানুষটা৷ এই কদিনে, রণোকে যেন আবার নতুন করে চিনতে পারছে রোহিণী৷
সেদিন বৃন্দা গোল্ডস্টাইনের সঙ্গে দেখাটা দৈবনির্দিষ্ট ছিল কি না, জানে না রোহিণী। তবে ওই সংক্ষিপ্ত এনকাউন্টারটা যে রণোকে ভিতর থেকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে, এ ব্যাপারে ও নিশ্চিত৷ ফেরার পথে রণো একদম চুপচাপ হয়ে গেছিল৷ নিজের মধ্যে যেন একেবারে গুটিয়ে গেছিল ও৷ রোহিণীও চুপ করে ভাবছিল৷ অসংখ্য ছোট ছোট অমীমাংসিত ধাঁধাঁ ঘুরছে ওর মনেও৷ যার একটারও উত্তর ও জানে না৷
বৃন্দাদের সঙ্গে ফোন নম্বর বিনিময় হয়েছিল৷ সেই ফোন নম্বর দিয়ে রোহিণী ঠিক কী করবে সে ব্যাপারে ও খুব নিশ্চিত ছিল না৷ ও রণোর দাদু জ্যোতির্ময় সেনের ডায়েরিটা পড়তে পড়তে বৃন্দার নাম পেয়েছিল বেশ কয়েকবার৷ পরে আলোলিকা সেনের ব্লগ থেকে ও এটাও আঁচ করেছিল যে এই বৃন্দাই ছিল জ্যোতির্ময়ের ছোট ভাই স্বাধীন সেনের এক সময়ের প্রেমিকা৷ পরে নকশাল মুভমেন্ট জোরদার হলে মেয়েটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আমেরিকায়৷ কিন্তু এই বৃন্দার যে একজন দিদি ছিল, এবং সেই দিদিই যে মাম্মার মা, সে বিষয়ে ও শ্বশুরবাড়ির কারুর কাছ থেকেই কখনও শোনেনি৷ ইন ফ্যাক্ট, মাম্মার মা মাম্মার ছোটবেলায় মারা গেছেন, আর মাম্মার বাবাও মারা গেছেন বিয়ের পর মাম্মা আমেরিকায় চলে আসার পরের বছরেই, সেটুকুই ও জানে৷ রণোও সেরকমই ভাবে৷ অন্তত ভাবত এতদিন৷ এখন আবার গল্পটা একদম আলাদা হয়ে যাচ্ছে৷ মাম্মার তার মাসির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই কেন?
‘বৃন্দা কে?’ এই প্রশ্নটা রোহিণী আগেই একবার ডিনারের সময় রণোর বাবা মাকে করেছিল৷ মাম্মা কোনও কথাই বলেনি সেদিন৷ শরীর খারাপ লাগছে বলে উঠে চলে গেছিল৷ বাবাই খুব আমতা আমতা করে কী একটা বলেছিল৷ বৃন্দা নামটা যেন ওদের কাছে একটা নিষেধের পাঁচিল তুলে দাঁড়িয়ে আছে৷ মাম্মা তার ছোটবেলার কথা এড়িয়ে যেতে চায় সবসময়৷ তার পিছনে তাহলে একটা সিক্রেট ছিল৷ একটা নিষ্ঠুর সত্যি, যাকে মাম্মা কারুর কাছে কোনওদিন বলেনি৷ নিজের ছেলের কাছেও না৷ রণো যাকে বলে ব্লিসফুলি আন্যাওয়ার অব দ্য হোল ট্রুথ৷ কিন্তু বাবাই কি সব জানে? জানে বলেই কি চুপ করে ছিল বৃন্দার কথা ওঠায়? বাবাই আর মাম্মার দেখা হবার পিছনে কি অন্য কোনও গল্প আছে? সবচেয়ে বড় কথা মাম্মা কি জানে তার বোন আছে একজন? প্রশ্নগুলো কুরে কুরে খাচ্ছে রোহিণীকে৷
ও রণোর দাদু জ্যোতির্ময় সেনের ডায়েরিটা পড়তে পড়তে বৃন্দার নাম পেয়েছিল বেশ কয়েকবার৷ পরে আলোলিকা সেনের ব্লগ থেকে ও এটাও আঁচ করেছিল যে এই বৃন্দাই ছিল জ্যোতির্ময়ের ছোট ভাই স্বাধীন সেনের এক সময়ের প্রেমিকা৷ পরে নকশাল মুভমেন্ট জোরদার হলে মেয়েটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আমেরিকায়৷ কিন্তু এই বৃন্দার যে একজন দিদি ছিল, এবং সেই দিদিই যে মাম্মার মা, সে বিষয়ে ও শ্বশুরবাড়ির কারুর কাছ থেকেই কখনও শোনেনি৷
দুদিন গুম হয়ে থাকার পরে রণো এ বিষয়ে কথা বলল৷ একই ধরণের প্রশ্ন ওর মাথায়ও এসেছে৷
‘আমি ভাবছিলাম একদিন বৃন্দা গোল্ডস্টাইনকে ফোন করব৷ তুই কী বলিস?’ রোহিণী জিজ্ঞেস করেছিল৷
‘বাট রোহিণী ইফ মাম্মা চোজ নট টু রিভিল দ্য ট্রুথ, শি হ্যাড হার ওন রিজন্স্৷’
‘কিন্তু রণো, এমনও তো হতে পারে, মাম্মা ইজ আন্যাওয়ার অব দ্য হোল স্টোরি৷ ইন ফ্যাক্ট পুরো গল্পটা আমরাও জানি না৷ সেটা জানেন একমাত্র বৃন্দা গোল্ডস্টাইন৷’ রোহিণী বলে৷
‘এই বৃন্দা বলে মহিলা, শি অ্যাপিয়ারস্ আ লিটল মিস্টিরিয়াস টু মি৷ উনি যা বলছেন সেটাই যে অ্যাবসলিউট ট্রুথ, সেটাই বা আমি বুঝব কী করে? উনি বললেই আমি বিশ্বাস করব যে সিমোন আমার মাসি?’
‘রণো, ডোন্ট ফরগেট শি ওয়াজ টেলিং অ্যাবাউট ইয়োর দাদাই, ইয়োর ড্যাড, অ্যাজ ইফ শি নিউ দেম ভেরি ক্লোজলি৷’
রোহিণী বলে চলে— ‘তাছাড়া উনি যদি তোদের ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু নাও বলতেন, দ্য ফ্যাক্ট রিমেইন্স্ দ্যাট সি ইজ বৃন্দা গোল্ডস্টাইন৷ দাদাই-এর খাতায় শুধু নয়, বাবাই-এর পিসি আলোলিকা সেনের ব্লগেও আমি এঁর কথা পড়েছি৷ তোর দাদাই-এর ছোটভাই ছোটকুর সঙ্গে ওঁর একটা সম্পর্ক ছিল৷
রোহিণী দাদাই-এর ডায়েরিতে যে সব অংশে বৃন্দার কথা আছে সেসব অংশ পড়ে শোনাতে থাকে রণোকে৷ আলোলিকার ব্লগ-পোস্টও খুব অবাক হয়ে শোনে রণো৷
‘এবার উনি যে মাম্মার সঙ্গেও রিলেটেড সেটা বিশ্বাস করা বা না করা তোর উপর৷ কিন্তু মাম্মার মায়ের জীবনটায় কী হয়েছিল আসলে, সিমোনের জন্ম কখন, কোথায়, এসব জানতে চাইলে আমাদের ওদের সঙ্গে কনট্যাক্ট করতেই হবে৷’ রোহিণী বলল৷

পরের শুক্রবার ওরা ফোন করার আগেই সিমোনের ফোন এল।
‘রোহিণী, আমি সিমোন৷ এই শনিবার কী প্ল্যান তোমাদের? যদি তেমন ফিক্সড কিছু না থাকে, তবে শনিবার চলে এস আমাদের এখানে৷ রাতে এখানেই থেকে সানডে ফিরে যেও৷’ খুব সহজ, স্বাভাবিক ব্যবহার সিমোনের৷
রোহিণী একটু ইতস্তত করছে৷ ‘রণোকে একটু জিজ্ঞেস করে জানাই?’
‘ঠিক আছে৷ নো রাশ৷ টেক ইওর টাইম৷ উই উইল বি ওয়েটিং ফর ইউ৷’
রণো তবু দোনামোনা করছিল৷ মাম্মা-বাবাইকে ফোনে একবার বলে নিলে হত না যে আমাদের সঙ্গে ওদের মানে বৃন্দা আর সিমোনের কনট্যাক্ট হয়েছে?
‘আই থিংক দে উইল বি ইন ফর আ ভেরি রুড শক৷ আমার মনে হয় এখনই ওদের বলার দরকার নেই৷’ রোহিণী সাজেস্ট করেছে— ‘আমরা বরং ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে অসি৷ পুরো গল্পটা শুনি৷ তারপর মাম্মাকে জানাবি কি না ডিসিশন নিস৷’
‘পুরো গল্পটা ওরা নাও বলতে পারে রোহিণী৷ হয়তো ওরা কার্টসি কল করছে৷ দেখছে আমাদের কী রি-অ্যাকশন হয়৷’ রণো বলছে৷
‘আই ডোন্ট থিংক সো রণো৷ আমার মনে হয় আমরা যেরকম অবাক হয়েছি, ওরাও এই হঠাৎ দেখা হওয়ায় সেইরকমই অবাক হয়েছে৷ বৃন্দা বলে ওই ভদ্রমহিলা হয়ত এমন অনেক কিছু বলতে চান যেগুলো শোনার জন্য আমি অনেক দিন থেকে অপেক্ষা করছি৷ দেখাই যাক না৷ লেট্স্ টেক আ চান্স রণো৷ যদি কোনও কিছুই না জানতে পারি, তাহলে না হয় ওদের বাড়ি দেখে নেমন্তন্ন খেয়েই চলে আসব৷ কিন্তু প্লিজ চল্, না বলিস না৷
***
ওরা জি.পি.এস-এর সাহায্যে যখন গোল্ডস্টাইন ম্যানশনে গিয়ে পৌঁছল তখন দুপুর বারোটা বাজে৷ সিমোন ঠিকানাটা পাঠিয়ে বলেছিল— ‘ফিল ফ্রি টু কাম আর্লি৷ উই হ্যাভ নাথিং এল্স টু ডু আদার দ্যান টু এনজয় ইওর কম্প্যানি৷ শনি-রবিবারের মধ্যে একদিন সাধারণত স্কাইপে কথা হয় সীমন্তিনীদের সঙ্গে৷ দিল্লিতে শিপ্রাদের সঙ্গেও৷ কিন্তু এবার শুক্রবার রাতেই ওরা ফোন করে বলে দিয়েছিল— ওরা নতুন পাওয়া বন্ধুদের সঙ্গে উইকেন্ড কাটাতে যাবে৷ তাই স্কাইপ করতে পারবে না৷ আগে থেকে বলা থাকলে ওরা আর চিন্তা করবে না৷
পৌঁছনোর আগে অবধি রোহিণীরা ঠিক বুঝতে পারেনি গোল্ডস্টাইন ম্যানশন যে কী বিশাল৷ কয়েক একরের উপর জায়গা নিয়ে ছড়ানো এস্টেট৷ তার মধ্যে বিভিন্ন ফল আর ফুলের গাছ তো আছেই, আছে ছড়ানো ভেজিটেবল গার্ডেন, সুইমিং পুল, জিমনাশিয়াম অ্যান্ড মেডিটেশন সেন্টার৷ সেদিন আলাপে ওঁদের বাড়িতে কে কে থাকে, বৃন্দা আর সিমোন ছাড়া কেউ আছে কি না, বৃন্দার স্বামী এবং সিমোনের পরিবারের লোক কেউ রয়েছে কি না— এসব রোহিণীদের অজানা ছিল৷ ঘোরানো একটা ড্রাইভওয়ে দিয়ে অনেকটা ঘুরে ঘুরে মূল ম্যানশনটায় উঠতে হয়৷ একটা ছোট হিলকের উপর দাঁড়ানো বাড়িটা বাইরে থেকে দেখেই এই বাড়ির লোকেদের বৈভবের বিষয় টের পাওয়া যায়৷ ড্রাইভ করে বাড়ির দিকে যেতে যেতেই রণো উদ্বিগ্নভাবে বলল— ‘এদের নিয়ে কিছুই না জেনে বাড়ি অবধি চলে এসে তুই ভালো করিস্নি রোহিণী৷’
সেটা অবশ্য রোহিণীরও মনে হচ্ছিল৷ রোহিণী এতদিন আমেরিকায় বসবাসে অনেক সম্পন্ন লোকের বাড়ি দেখেছে৷ কিন্তু প্রকৃত ধনী বলতে কী বোঝায়, তা এই গোল্ডস্টাইন এস্টেটে পা না রাখলে বুঝতেই পারত না ও৷ রোহিণীর মনে হচ্ছিল— এই ম্যানশন, এর লাগোয়া এস্টেট যে কোনও হলিউডের সিনেমায় দেখা যেতে পারত৷ রণোও ঠিক সেই কথাই ভাবছিল বোধহয়৷ ও স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে বলল— ‘আই হ্যাভ সিন দিস ইন সাম মুভিজ আই ক্যান্ট্ রিমেমবার৷
কয়েক একরের উপর জায়গা নিয়ে ছড়ানো এস্টেট৷ তার মধ্যে বিভিন্ন ফল আর ফুলের গাছ তো আছেই, আছে ছড়ানো ভেজিটেবল গার্ডেন, সুইমিং পুল, জিমনাশিয়াম অ্যান্ড মেডিটেশন সেন্টার৷ সেদিন আলাপে ওঁদের বাড়িতে কে কে থাকে, বৃন্দা আর সিমোন ছাড়া কেউ আছে কি না, বৃন্দার স্বামী এবং সিমোনের পরিবারের লোক কেউ রয়েছে কি না— এসব রোহিণীদের অজানা ছিল৷ ঘোরানো একটা ড্রাইভওয়ে দিয়ে অনেকটা ঘুরে ঘুরে মূল ম্যানশনটায় উঠতে হয়৷ একটা ছোট হিলকের উপর দাঁড়ানো বাড়িটা বাইরে থেকে দেখেই এই বাড়ির লোকেদের বৈভবের বিষয় টের পাওয়া যায়৷
সিমোনের সঙ্গে আসতে আসতেই ফোনে কথা হচ্ছিল রোহিণীর৷ তাই ওদের কখন পৌঁছনোর কথা, সিমোন মোটামুটি আন্দাজ করেছিল৷ ওদের গাড়িটা একটু এলিভেটেড পোর্টিকোতে পৌঁছতেই সিমোন বেরিয়ে এসে হাসিমুখে হাত নাড়ল৷ ভিতর থেকে একজন কর্মচারীও বেরিয়ে এসেছে, গাড়িটা পাশের দিকে পার্কিং লটে নিয়ে যাবার জন্য৷ রণো আর রোহিণী খুব কৌতূহল নিয়ে প্রাসাদোপম বাড়িটাকে দেখছে দেখে সিমোন বলল— ‘বাড়িটা খুব যত্ন নিয়ে তৈরি করা৷ জন লটনার, আ ভেরি ফেমাস আর্কিটেক্ট বিল্ট দিস হাউস ইট দ্য লেট এইট্টিস, অ্যান্ড দ্য এরিয়া অ্যারাউন্ড ইট ওয়াজ ডেভেলপ্ড্ থ্রু দ্য নাইনটিস্৷ আই ফার্স্ট স দিস অ্যাজ আ টুয়েন্টি ইয়ার ওল্ড্ গার্ল, অ্যান্ড বিলিভ মি, আই ওয়াজ রিয়েলি অস্ট্রাক বাই দ্য গ্র্যাঞ্জার অ্যান্ড ম্যাগনিফিসেন্স অফ দ্য হোল থিং৷
কুড়ি বছর বয়েস অবধি সিমোন কোথায় ছিল? মাম্মার সঙ্গে কি ওর দেখা হয়েছে কখনও? শুধু রোহিণী নয়, রণোর মনেও এই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে৷ আস্তে আস্তে নিশ্চয়ই পুরো গল্পটা আনফোল্ড করবে৷ আপাতত সিমোনের সঙ্গে ওরা বিশাল রিসেপশন এরিয়ায় গিয়ে বসেছে৷ অ্যালিস বলে একজন পরিচারিকা ওদের জল, জুস এসব পরিবেশন করে গেছে৷ সিমোন বলছে— এই বাড়িটা কেন অর্গানিক আর্কিটেকচারের টিপিক্যাল উদাহরণ৷ বলতে বলতে হঠাৎ মনে পড়ে গেছে সিমোনের— ‘আচ্ছা, তোমাদের খুব খিদে পেয়ে গেছে নিশ্চয়ই! মানি উইল জয়েন আস ইন দ্য ডাইনিং হল৷’

বাড়িটায় তল বিভাজনের একটা খেলা আছে৷ দোতলার পর পুরো তিনতলায় নয়, বরং বলা যায় আড়াইতলায় ওদের প্রাইভেট ডাইনিং রুম৷ নীচে আরেকটা বড় ডাইনিং হল আছে৷ আগে পার্টি হলে ওটা ব্যবহার হত৷ এখন পড়েই থাকে সারা বছর৷
ডাইনিং টেবিলে পরিপাটি করে প্লেট, গ্লাস, ন্যাপকিন, স্পুন, ফর্ক সাজানো৷ ওরা ঘরে পৌঁছতেই পাশের একটা ঘর থেকে বৃন্দা বেরিয়ে এসে ওদের গ্রিট করলেন৷ রোহিণীর মনে হল— উনি খুব আন্তরিক, কিন্তু ঠিক ওর পরিচিত অন্য পাঁচটা বাঙালি মহিলার মত নয়৷ বৃন্দার চুলগুলো বেশ ছোট, প্রায় ক্রু-কাটই বলা চলে৷ চোখে নীল রঙের আইব্রাও পেন্সিলের সামান্য ছোঁওয়া৷ কাটা কাটা শার্প ফিচার্স্৷ রোহিণীর মনে পড়ল না জ্যোতির্ময় সেনের ফ্যামিলি অ্যালবামে সে বৃন্দার কোনও ছবি দেখেছে কি না৷ দেখে থাকলেও কেউ তাকে বলে দেয়নি ছবির এই মেয়েটিই বৃন্দা৷ এখন বৃন্দাকে দেখে রোহিণী বুঝতে পারছে বৃন্দা অ্যাভারেজ গড়পরতা ভারতীয় মেয়েদের তুলনায় অনেকটাই বেশি লম্বা৷ মাম্মার সঙ্গে তাঁর চেহারায় কোথাও যেন একটা মিল আছে, কিন্তু কোথায় যে মিলটা ভেবে পাচ্ছে না রোহিণী৷ কারণ ওঁর ব্যক্তিত্ব প্রখর এবং সীমন্তিনীর থেকে তা পুরো আলাদা৷ সীমন্তিনী সবসময়ই একটু দিশাহারা, উদ্ভ্রান্ত৷ সামান্য ইল অ্যাট-ইজ, কিন্তু-কিন্তু— অন্তত বাইরের লোকেদের কাছে৷ বৃন্দাকে দেখে মনে হয় উনি শান্ত, স্থিতধী, যাকে বলে অ্যাট পিস উইথ হারসেল্ফ্৷ বয়স ওঁকে একধরণের প্রজ্ঞা দিয়েছে, নাকি উনি অল্পবয়স থেকেই এরকম, রোহিণী ঠিক বুঝতে পারল না৷ তবে এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে বৃন্দা এই বয়সেও অসামান্য সুন্দরী৷
রূপসী বৃন্দার মধ্যে এমন এক সহজাত আভিজাত্য আছে যার জন্য সামনাসামনি হলে সম্ভ্রম জাগে ওঁকে দেখে৷ ওঁর ব্যক্তিত্বের মধ্যে একধরণের দূরায়ত ব্যাপারও রয়েছে৷ আগের দিন ওঁরা দুজনেই শাড়ি পরে ছিলেন, আর আজকে বৃন্দা পরে আছেন একটা গেরুয়া ঢিলেঢোলা জোব্বা৷ রবীন্দ্রনাথের ছবিতে এই ধরনের জোব্বা দেখেছে রোহিণী৷ তার সঙ্গে ওঁর গলায় একটা রুদ্রাক্ষের মালা৷ ওঁর রুপোলি চুলে এবং ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খুব মানিয়ে গেছে এই বিশেষ সাজসজ্জা৷ এইভাবে আর কোনও মহিলা এই গেরুয়া জোব্বা আর রুদ্রাক্ষ ক্যারি করতে পারবেন কি না সন্দেহ৷ সিমোন আর বৃন্দা দুপাশের হেড অব দ্য টেবলে বসেছেন৷ রণো আর রোহিণী টেবিলের লম্বা অংশটাতে৷ এই টেবিলেও ছ’জন অনায়াসে খেতে পারে৷ অনেক পদের আয়োজন৷ বৃন্দা হেসে বললেন— ‘এগুলো যদিও আমাদের কুকের করা, কিন্তু সিমোন আজ অনেকগুলোতেই হাত লাগিয়েছে৷ ও আজকাল বাঙালি রান্নায় বেশ এক্সপার্ট হয়ে গেছে৷’
খেতে খেতে মূলত রোহিণী আর রণোর বিষয়েই জিজ্ঞেস করছেন ওঁরা৷ সিমোনের মধ্যে একটা আন্তরিক ব্যাপার রয়েছে৷ রোহিণীর খুব ভালো লাগছে ওকে৷ রোহিণী দিল্লির মেয়ে শুনে সিমোন বলল— ‘আমাদের ইন্ডিয়ার এন জি ও তে দুজন দিল্লির মেয়ে আছে৷ মুনা আর শ্রাবণী৷’ কলকাতার আউটস্কার্টসে অরফ্যান বাচ্চাদের স্কুল, হোস্টেল চালায় ওরা৷ কথা বলে রোহিণীরা বুঝতে পারছে অনেকরকম জিনিসের পেট্রন ওরা৷ চ্যারিটিতে ওদের অর্গানাইজেশন বহু অর্থ ব্যয় করে৷
আগের দিন ওঁরা দুজনেই শাড়ি পরে ছিলেন, আর আজকে বৃন্দা পরে আছেন একটা গেরুয়া ঢিলেঢোলা জোব্বা৷ রবীন্দ্রনাথের ছবিতে এই ধরনের জোব্বা দেখেছে রোহিণী৷ তার সঙ্গে ওঁর গলায় একটা রুদ্রাক্ষের মালা৷ ওঁর রুপোলি চুলে এবং ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খুব মানিয়ে গেছে এই বিশেষ সাজসজ্জা৷ এইভাবে আর কোনও মহিলা এই গেরুয়া জোব্বা আর রুদ্রাক্ষ ক্যারি করতে পারবেন কি না সন্দেহ৷
খাওয়ার পর সিমোন বলল— ‘এবার তোমরা একটু বিশ্রাম নাও৷ তোমাদের বাগানটা ঘুরিয়ে দেখাব, আর যদি চাও, একসঙ্গে উই ক্যান গো টু দ্য বিচ৷’ রণো যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে নিতে পারে৷ ওর ঘুমের কোনও প্রবলেম নেই৷ রোহিণীর অচেনা জায়গায় সহজে ঘুম আসতে চায় না৷ দোতলার লেভেলে একটা ঘরে ওদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরকম ঘরে তার সারা জীবনে রোহিণী কোনওদিন থাকেনি৷ ঘরের মাঝখানে একটা ফোর পোস্টার বেড৷ নরম গদি আর সুদৃশ্য পিলোতে ফাইভ-স্টার হোটেলের মতো সাজানো৷ ঘরের একপাশে দেওয়াল জোড়া বেলজিয়ান গ্লাসের আয়না৷ উল্টোদিকে দেওয়ালটা পুরোটাই স্বচ্ছ কাচের বে-উইন্ডো৷ রোহিণী এসে ভারী পর্দা সরাতেই সমুদ্র তার সমস্ত ব্যাপ্তি নিয়ে ওর চোখের দখল নিল৷ বিছানায় আধশোয়া হয়ে ও দেখতে লাগল সমুদ্রের উপর দিয়ে অনেক দূরে মন্থর গতিতে ইয়াট চলছে৷ ওপাশে বিশাল বড় আয়নার কাচে তার প্রতিফলন৷
রণো একটু আগে যেমন বলছিল, রোহিণীরও মনে হয়েছে ওঁরা সাংঘাতিক ধনী ৷ স্টিঙ্কিং রিচ যে, সে বিষয়ে সন্দেহ করার কোনও অবকাশ নেই৷ তবে ওঁদের বিষয় শুধুই নিজেদের ভোগের জন্য নয়৷ ওদের কথা থেকে আন্দাজ হয় যে এদেশে এবং দেশের বাইরেও প্রচুর চ্যারিটি ওয়ার্ক ওঁদের ট্রাস্ট করে থাকে৷ শুয়ে শুয়ে রোহিণী ভাবছিল ওদের নিজেদের কথা ইতিমধ্যেই ওরা সব বলে দিয়েছে এই দুই মহিলাকে৷ জ্যোতির্ময়ের ডায়েরিতে যে বৃন্দার উল্লেখ পেয়েছে, তাও বলেছে বৃন্দাকে৷ বৃন্দা বেশ অ্যামিউজ্ড্ হয়েছেন, ওঁর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল৷ উনি খুব আস্তে আস্তে কথা বলেন— মধুঝরা কণ্ঠে৷ সেইরকম ধীরস্থির ভঙ্গিতেই উনি বলেছিলেন— ‘হ্যাঁ, সে সব কতদিন আগের কথা৷ আই ওয়াজ আ ডিফারেন্ট পার্সন দেন৷’ উনি বিশেষভাবে রণোকেই বলেছিলেন— ফর্টি ইয়ার্স্ হ্যাভ পাস্ড্ সিন্স্৷ তোমার বাবা সেসময় টিন এজার৷ তখন আমি ইউ পেনে পি এইচ ডি করছি৷ তখন দাদা বৌদির সঙ্গে প্রায়ই দেখা হত৷ মানে তোমার দাদু আর ঠাকুমা৷ বৌদির শরীর এখন কেমন আছে?’ জিজ্ঞেস করেছিলেন উনি৷
আলোলিকা সেনের ব্লগের কথাটা বলব বলব করেও তখন বলেনি রোহিণী৷ বললেই একসময় জ্যোতির্ময়ের ভাই যে ওঁর প্রেমিক ছিল এই তথ্যটা যে ও অলরেডি জানে, সেটাও ওকে বলতে হত৷ দেখাই যাক্ না, উনি কতটা বলতে চান নিজে থেকে৷ উনি যে পুরনো সব গল্প, বিশেষত যে গল্পে মাম্মাও জড়িয়ে আছে, সেটা বলতেই ওদের ডেকেছেন এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন উনি নিজেই৷ খাবার পর যখন উপরের কোজি লিভিং রুমে বসে অরেঞ্জ কাস্টার্ড উইথ কেক খাচ্ছিল ওরা, তখন বৃন্দা বলেছিলেন— ‘তোমাদের কথা তো খানিকটা শুনলাম৷ তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছ আমাদের বিষয়ে তো এখনও কিছু জানলে না৷ সেইজন্য বলছি— আমারও একটা গল্প আছে৷ উই উইল টেল ইউ দ্যাট স্টোরি, ইফ ইউ আর ইন্টারেস্টেড৷ কী বল সিমোন? সিমোনকে জিজ্ঞেস করছি কারণ ওর জীবনের গল্পটাও ইম্পর্ট্যন্ট৷ তোমাদের সবটাই জানা দরকার বোধহয়৷ তিরিশ বছর আগে সিমোন এখানে চলে আসে৷ ওর জীবনের প্রথম কুড়ি বছর ও কাটিয়েছে স্কটল্যান্ডের ইনভারনেস বলে একটা জায়গায়৷ আমার দিদি সেখানেই থাকত মৃত্যু অবধি৷ সিমোন এদেশে চলে আসার পর আমাদের জীবন একই খাতে বইতে থাকে৷’
সিমোন ঘাড় নেড়েছিল— ‘ইয়েস, উই উইল টেল আওয়ার স্টোরি ইন দ্য ইভনিং৷’
‘উই আর সার্টেনলি ইন্টারেস্টেড৷’ রণো বলেছিল৷
***
ভাবতে ভাবতে কখন রোহিণীর চোখটা লেগে এসেছিল ও বুঝতে পারেনি৷ যখন চোখ খুলল, তখন রোদ পড়ে এসেছে৷ সাড়ে চারটে বাজে৷ পড়ন্ত আলোয় সমুদ্রের ধারটায় একটা লালচে আভা৷ ঘরে খাটের পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠল তখুনি৷ সিমোন জিজ্ঞেস করছে ওরা একটু আশপাশটা বেড়াতে চায় কি না!

তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়েছে রণো আর রোহিণী৷ সিমোন বেশ ডিটেলে গোল্ডস্টাইন এস্টেটের একটা ট্যুর দিচ্ছে ওদের৷ বেশ কয়েক একরের স্প্রলিং বাগান ঘুরতে গেলে সন্ধে হয়ে যাবে৷ তাই একটা ব্যাটারি-চালিত স্বয়ংক্রিয় কার্টে ঘুরছে ওরা৷ চালাচ্ছে একটি হাসিখুশি চাইনিজ মেয়ে সিন্থিয়া৷ তার পাশে সিমোন৷ ওদের দিকে পিছন করে বসেছে রণো আর রোহিণী৷ কোথায় মাস্টার্ডের খেত, কোথায় ব্রকোলি, ক্যাবেজ, কলিফ্লাওয়ার— সব দেখাচ্ছে সিমোন৷ বিভিন্ন রকম ফুলের গাছও চেনাচ্ছে৷ যেটা জানে না, সিন্থিয়াকে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছে৷ সিমোনের পরনে একটা ফুল ফুল ছাপ লং স্কার্ট আর সি-গ্রিন সুতির হালকা ব্লাউজ৷ সমস্ত জায়গাটা ঘুরে একচক্কর দিতেই প্রায় চল্লিশ মিনিট লেগে গেল৷ ফিরে এসে ব্যাটারি কার্ট বাড়ির পাশে পশ্চিম দিকে ওদের নামিয়ে দিল৷ একটা উঁচু গোলাকার বেদির চারপাশে বড় বড় পোর্সেলিনের টবে গাছ বসানো৷ বেদির উপরে গোটা কয়েক গদিওয়ালা কাস্ট আয়রনের অর্ধচন্দ্রাকৃতি ছড়ানো চেয়ার৷ মাঝে একটা ভারি গোল কালো কাস্ট আয়রনের টেবিল৷ বৃন্দা চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন৷ চিনি, দুধের পরিমাণ জিজ্ঞেস করে কাপে চা ঢেলে দিলেন৷ রোহিণী মুগ্ধ বিস্ময়ে অনেকক্ষণ টি-সেটটার দিকে তাকিয়ে রইল৷ এত সুন্দর কারুকাজের টি সেট ও দেখেনি৷ ফুল লতা পাতা পাখির মোটিফ দেওয়া গোল্ড রিমড সেটটা ভুরু কুঁচকে সিমোনও দেখছিল৷ ‘দিস ইজ নট আওয়ার ইউজুয়াল সেট৷’ ও বলল
‘নো৷ দিস ইজ নট৷ দিস ইজ মার্টিন’স ফ্যামিলি এয়ারলুম, রিমেমবার?’ হেসে বললেন বৃন্দা৷ রোহিণীকে বোঝাবার জন্য বলছেন— ‘এটা আমার দিদিশাশুড়ির, বুঝলে রোহিণী৷ এই টি সেটটার বয়স প্রায় দেড়শো বছর৷ আমার স্বামী মার্টিন গোল্ডস্টাইনের ঠাকুমা ইউরোপ থেকে আসার সময় যে সব জিনিস নিয়ে অ্যাটলান্টিক পাড়ি দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একটি এই ওয়েজউডের টি অ্যান্ড কফি সেট৷ আমি সাধারণত এসব বের করি না৷ তবে আজকে তো স্পেশাল দিন৷ আজ আমার নাতি আর নাতবউ আমার কাছে এসেছে৷ তাই এটা বের করেছি৷’ উনি রণোর দিকে তাকিয়ে খুব স্নেহের হাসি হাসছেন৷ রণোর মধ্যেও কোনও একটা তন্ত্রী উনি স্পর্শ করেছেন— রণোর মুখ দেখে বুঝতে পারছে রোহিণী৷
সিমোনের পরনে একটা ফুল ফুল ছাপ লং স্কার্ট আর সি-গ্রিন সুতির হালকা ব্লাউজ৷ সমস্ত জায়গাটা ঘুরে একচক্কর দিতেই প্রায় চল্লিশ মিনিট লেগে গেল৷ ফিরে এসে ব্যাটারি কার্ট বাড়ির পাশে পশ্চিম দিকে ওদের নামিয়ে দিল৷ একটা উঁচু গোলাকার বেদির চারপাশে বড় বড় পোর্সেলিনের টবে গাছ বসানো৷ বেদির উপরে গোটা কয়েক গদিওয়ালা কাস্ট আয়রনের অর্ধচন্দ্রাকৃতি ছড়ানো চেয়ার৷ মাঝে একটা ভারি গোল কালো কাস্ট আয়রনের টেবিল৷ বৃন্দা চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন৷ চিনি, দুধের পরিমাণ জিজ্ঞেস করে কাপে চা ঢেলে দিলেন৷
‘এস্টেট দেখলে?’ উনি আবার প্রশ্ন করলেন ৷
ওরা ঘাড় নাড়ল —‘ইটস ফ্যান্টাস্টিক৷’
উনি বলছেন ‘মার্টিনের অনেক যত্ন মিশে ছিল এই বাড়ি আর এস্টেটে৷ হিজ হার্ট অ্যান্ড সোল ইজ হিয়ার৷’
একটু চুপ করে থেকে আবার বলছেন বৃন্দা —‘তোমাদের প্রমিস করেছিলাম আমার গল্পটা তোমাদের বলব৷ গল্পটা একটু দীর্ঘ৷ তবে আজ পর্যন্ত অন্য কাউকেই আমি ঠিক এভাবে পুরোটা বলিনি৷ শুধু মার্টিন জানত প্রায় পুরোটাই, আর সিমোন জানে৷ সি হ্যাজ বিকাম পার্ট অফ মাই লাইফ৷ তবে এখন আগে সানসেটটা দেখে নাও৷ এই বাড়ি খুব অ্যাডভান্টেজিয়াস লোকেশনে৷ প্যাসিফিকের সানসেট আর বে-র সানরাইজ দুই-ই এখান থেকে দেখা যায়৷’
সত্যিই প্রশান্ত মহাসাগরের জলে সূর্য ডুবছিল৷ সমস্ত জলটা অদ্ভুত লালচে৷ ওপাশে গোল্ডেন গেটের মরচে ধরা রংটা লালচে হয়ে গেছে৷ ব্রিজের একটা অংশ দেখা যায় এদিক থেকে৷
‘বাঃ, ব্রিজটাকে কী সুন্দর লাগছে!’ রোহিণী বলল৷
‘পার্শিয়াল ভিউ পাওয়া যায় এদিক থেকে৷’ সিমোন বলল৷
বৃন্দা হাসছেন, ‘সবই তো পার্শিয়াল ভিউ৷ সারা জীবন ধরে অনেক ব্রিজ তৈরি করি আমরা৷ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন সম্পর্কের দিকে এগোতে থাকি৷ সাম ব্রিজেস টেন্ড টু ব্রেক ডাউন৷ মাঝপথে গিয়ে হঠাৎ দেখা যায় ব্রিজটা শেষ হয়ে গেছে৷ কিংবা তৈরিই হয়নি৷ তখন ওই পার্শিয়াল বা ইনকমপ্লিট ভিউগুলো নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়৷’
সমুদ্রের জলে সূর্য ডোবা দেখে সিমোনও কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গেছিল৷ অথবা বৃন্দার কথার অনুরণন চলছিল ওর মনে৷ ‘সানসেট অলওয়েজ মেক্স্ মি মেলাংকলি৷ একটু দুঃখ হয় আমার৷ আমার জীবনের হিসেব থেকে আরও একটা দিন লস্ট৷ মনে হয় আরও একটু মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেলাম আমি৷’
‘দ্যাটস্ আ পেসিমিস্টিক ওয়ে অব লুকিং অ্যাট লাইফ৷ তোমাদের মায়ের মনের গড়ন ছিল এইরকম৷ লোকে বলত দিদি আর আমি টুইন সিস্টার, এত মিল! কিন্তু দিদির সঙ্গে সবচেয়ে বড় ডিফারেন্স ছিল দ্য ওয়ে উই লুকড অ্যাট লাইফ৷ শি ওয়াজ দ্য আল্টিমেট পেসিমিস্ট অ্যান্ড আই অ্যাম হিয়ার— দ্য ইটারনাল অপটিমিস্ট৷ আমার বাবা সন্ধে নামা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা বলতেন…
—‘দিবা হয়ে এল অবসান
ওরে মন, নত করো শির
সন্ধ্যা আসে শান্তিময়ী তিমিরের তীরে
অসংখ্য প্রদীপ জ্বালায়ে বিশ্বমন্দিরে
এল আরতির বেলা’

রোহিণীর কেমন ঘোর লাগছে৷ রণোর মা’র মাসি এই ভদ্রমহিলা৷ তাঁর এই বিশাল প্রাসাদের মতো বাড়ির চত্বরে বসে অনেক উঁচু থেকে সন্ধে লাগা সমুদ্রতীর দেখতে দেখতে ওরা বহুকাল আগে শেষ হয়ে যাওয়া অন্য এক সময়ের সন্ধে নামার গল্প শুনছে, যা সীমন্তিনীরও অজানা৷ প্রায় সাররিয়েল এই অভিজ্ঞতা৷
রোহিণী শুনল, বৃন্দা রণোকে বলছেন ‘একত্রিশ বছর আগে তোমার বাবাও এখানে এসেছিল৷ অ্যারাউন্ড মার্চ অর এপ্রিল৷ আমরা সেদিনও একসঙ্গে বসে সানসেট দেখেছিলাম৷ কিন্তু ফার্স্ট থিংস ফার্স্ট৷ আমার জীবনটা আরও আগের থেকে না বললে তোমার মায়ের পুরো গল্পটা বুঝতে পারবে না৷
রোহিণী বুঝতে পারল বৃন্দা এবার গল্পে ফিরছেন৷ তখনই সিমোন বলল— ‘গল্প শুরু করার আগে লেট্স্ হ্যাভ ডিনার ফার্স্ট৷ আমরা কিন্তু খুব আর্লি ডিনার করি৷ স্পেশালি মানির সার্জারি হওয়ার পর থেকে খুব রেগুলেটেড লাইফ৷ রোহিণীদের এস্টেটের ট্যুর দিতে দিতেই সিমোন বলেছে, তিন বছর আগে ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়ে বৃন্দার৷ তখন বৃন্দা আর সিমোন কাজের সূত্রে ভারতবর্ষে৷ সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এসেছিল দুজনেই৷ একাধিক সার্জারি, কেমো, রেডিয়েশন সব কিছুর পরে এখন ভালোই রয়েছেন বৃন্দা৷ ‘তবে কলকাতায় যাওয়ার ফ্রিকোয়ন্সি কমে গেছে মানির৷’
‘এখন সিমোন ইজ মাই লোকাল গার্জেন৷ আমরা দুজনে দুজনের সঙ্গে গল্প করি, হাসি, জীবনটাকে এনজয় করার চেষ্টা করি৷’ বৃন্দা হাসছিলেন৷
রোহিণীদের এস্টেটের ট্যুর দিতে দিতেই সিমোন বলেছে, তিন বছর আগে ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়ে বৃন্দার৷ তখন বৃন্দা আর সিমোন কাজের সূত্রে ভারতবর্ষে৷ সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এসেছিল দুজনেই৷ একাধিক সার্জারি, কেমো, রেডিয়েশন সব কিছুর পরে এখন ভালোই রয়েছেন বৃন্দা৷
ডিনারের জন্য বৃন্দা বার করেছেন রূপোর সেট৷
‘এটাও দেখছি নাতির অনারে বেরিয়েছে’ —সিমোন একটু ঠাট্টার সুরে বলছে৷
‘তা ঠিক, এটা আমার বাবার বাড়ির জিনিস৷’ বৃন্দাও হেসে বলছেন৷
খাওয়ার পর ওরা বৃন্দার শোবার ঘরের লাগোয়া পুবের ওপেন টেরেসে এসে বসেছে৷ বৃন্দার গায়ে একটা পশমিনা শাল আলগা করে জড়িয়ে দিয়েছে সিমোন৷ এদিক থেকে গোল্ডেন গেট আর ওকল্যান্ড বে ব্রিজ দুটোই দেখা যায়৷ শুধু বে ব্রিজটা অনেক দূরে৷ গোল্ডেন গেট ব্রিজের ওপরে গোল চাঁদ৷ ‘ইটস্ আ ফুল মুন নাইট’ সিমোন বলল৷
বৃন্দার গল্প শুরু হল৷
‘সত্যেন্দ্র প্রসন্ন সিংহ যাঁকে লোকে এস পি সিনহা বলে জানত তিনি আমার বাবার দূর সম্পর্কের দাদা৷ তাঁরই দেখাদেখি আমার বাবাও বিলেত গিয়ে লিঙ্কনস্ ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে এসেছিলেন৷ তখনকার দিনে ক্রিমিনাল সাইডের ল-ইয়ার হিসেবে বাবার প্রচুর নামডাক ছিল৷ বাবারা ছিলেন বীরভূমের রায়পুরের জমিদার৷ কলকাতার বিত্তবান পরিবার হিসেবে পরিচিত এমন একটি পরিবারে দিদি আর আমি বেড়ে উঠি৷ সুন্দরী হিসেবে দিদির খ্যাতি ছিল৷ কুড়ি বছর বয়সে দিদির ছবি ‘ফেমিনা’তে কভার হয়েছিল৷ দিদির প্রথম বিয়ে হয় ডাক্তার এ সি রায় বা অম্বিকাচরণ রায়ের সঙ্গে, কলকাতা সার্কিটে আপ অ্যান্ড কামিং ডাক্তার হিসেবে যার তখন প্রচুর খ্যাতি আর সম্মান৷ বিয়ের পরের বছরই সীমন্তিনীর জন্ম৷ দিদির তখন সবে তেইশ আর আমার আঠেরো৷ সীমন্তিনীর জন্মের বছরখানেক পরেই কলকাতায় আসেন ইংল্যান্ডের এক নামকরা থিয়েটার পার্সোনালিটি ডেভিড ব্রুক৷ ইনি ডক্টর রায়ের পূর্বপরিচিত৷ কলকাতায় শেক্সপিয়রের থিয়েটার প্রোডাকশনের কাজে ইনি কয়েকজন অ্যাসিস্ট্যান্ট খুঁজছিলেন৷ আমার দিদি রাধিকা ওঁকে সাহায্য করার কাজে যোগ দেয় এবং অচিরেই দুজনের মধ্যে তুমুল প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ আমার জামাইবাবু অত্যন্ত লিবারেল একজন মানুষ ছিলেন৷ এই সম্পর্কে তিনি ভিতরে ভিতরে ধ্বংস হয়ে গেছিলেন, বিশেষ করে যখন তিনি শোনেন তাঁর স্ত্রী আবার সন্তানসম্ভবা এবং সন্তানের বাবা ডেভিড৷ দিদি ডিভোর্স নিয়ে শিশুমেয়েটি সহ ইংল্যান্ডে পাড়ি দিতে চেয়েছিল৷ কিন্তু অম্বিকাচরণ শর্ত দেন— বিচ্ছেদ নিয়ে চলে গেলে মেয়েকে ত্যাগ করতে হবে৷ অগত্যা উনসত্তর সালের শেষের দিকে দিদিকে নিয়ে জামাইবাবু ইংল্যান্ডে যান৷ স্ত্রীর ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা করানোর অজুহাতে এবং দুমাস বাদে একাই ফিরে আসেন৷ আত্মীয়-বন্ধুমহলে বলা হয় স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে৷ দিদি তার নতুন সংসারে আরেকটি কন্যার জন্ম দেয়, যদিও সে বিয়ে সুখের হয়নি৷ দিদির সিঙ্গল পেরেন্টিং-এ সিমোন বড় হতে থাকে স্কটল্যান্ডের ইনভারনেসে৷
দুটি বিয়ে এবং বিচ্ছেদ, এক শিশুকে ছেড়ে আসার গিল্ট, অন্য শিশুকে সিঙ্গল পেরেন্টিং-এ বড় করার চাপ এসব ভিতরে ভিতরে ওকে খুইয়ে দিয়েছিল৷ কয়েকবছর পরে কলকাতার এক সময়ের বিখ্যাত সুন্দরী রাধিকা সিনহা মানসিক ভারসাম্যহীন নার্ভাস রেকে পরিণত হয়৷ অন্যদিকে সীমন্তিনী জানত তার মা ছোটবেলায় মারা গেছে৷ তার বাবা কতদিন পর্যন্ত তার কাছ থেকে সত্য গোপন করে রেখেছিলেন আমি সঠিক জানি না৷ তবে আমাকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হত না, কারণ যদি তার মা’র সিক্রেট আমি প্রকাশ করে দিই৷ সীমন্তিনীকে আমি ওর দু’বছর বয়সের পর আর দেখিনি৷’ একটানা বলে একটু থেমে ভাবলেন বৃন্দা— ‘যাইহোক গল্পের এই পর্যন্ত হয়ত তোমরা সীমন্তিনী বা অরুণাভর কাছে শুনে থাকবে৷

বৃন্দা একটু থামেন৷ রণো ঘাড় নাড়ছে৷ না, ওর মা বাবা এই গল্প কখনও বলেনি ওকে৷
‘লাইফ হ্যাজ স্ট্রেঞ্জ ওয়েজ৷’ বৃন্দা বলেন —‘এতদিন পরে তোমার মায়ের গল্প শুনছ এমন একজন মহিলার কাছ থেকে, যে সম্পর্কে তোমার মার মাসি হলেও, তোমাদের, এমনকি তোমার মারও সম্পূর্ণ অপরিচিত৷’
‘বাট আই অ্যাম শিওর অ্যাবাউট ওয়ান থিং৷ আমার দিদির জীবনের পরের অংশটা শুধু তোমরা নয়, সীমন্তিনীরাও জানে না৷ কারণ ত্রিশ বছর ধরে তোমাদের পরিবারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ হয়নি আমার৷ সীমন্তিনীর হয়তো তার মা’র বোন বলে আমার সম্পর্কে গভীর কোনও অস্বস্তি বা অভিমান রয়ে গেছে৷ বিয়ের পর থেকেই ওরা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে৷ দাদা বৌদির নিমন্ত্রণ সত্ত্বেও আমি যেতে পারিনি, কারণ সে সময় সিমোনের প্রয়োজনে আমাকে যেতে হয়েছিল স্কটল্যান্ডে৷ দিদিকে কেয়ার হোমে রাখা, সিমোনকে এদেশে নিয়ে আসা, অনেক দায়িত্ব ছিল আমার উপর৷ কিন্তু ভেবেছিলাম বিয়ের পর সীমন্তিনী একবার হলেও অন্তত আসবে আমার কাছে৷ কিন্তু মানুষ যা ভাবে, সব সময় তো তা হয় না৷ শি মাস্ট হ্যাভ হ্যাড হার ওন রিজন৷’ দীর্ঘ সময় চুপ করে রয়েছেন বৃন্দা৷ গায়ের শালটা জড়িয়ে নিচ্ছেন আরেকটু ভালো করে৷
আমার জীবনের ধারা আলাদা হয়ে গেছিল৷ প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় স্বাধীন সেন নামে এক উজ্জ্বল ছাত্রের কাছাকাছি আসি৷ নকশাল আন্দোলনের সে ছিল ফোরফ্রন্টের নেতা৷ আমার বাড়ি থেকে আমাকে এদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তার ছোঁয়া থেকে দূরে রাখার জন্য৷ ভেবেছিলাম একদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷ সে যে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মারা যাবে, আর যে দেখা হবে না তখন তো জানতাম না৷ রোহিণী তুমি নিশ্চয়ই জ্যোতির্ময় সেনের অটোবায়োগ্রাফিতে স্বাধীন বা ছোটকুর কথা পড়ে থাকবে৷ ফিলাডেলফিয়াতে আসার পরে আমার স্বামী মার্টিন গোল্ডস্টাইনের সঙ্গে আলাপ হয়৷ তিরিশ বছরেরও বেশি বড় ছিল মার্টিন আমার চেয়ে ৷ সে ছিল আমার ফ্রেন্ড, ফিলসফার অ্যান্ড গাইড৷ তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের বন্ধুত্বে কখনও ফাটল তৈরি হয়নি৷ ইতিমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় শিফট করেছিলাম৷’
বৃন্দা থেমে থেমে বলছেন —‘রণো রোহিণী, তোমরা যদি আমাকে আরও ক্লোজলি দেখতে, তাহলে বুঝতে, আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি না, কর্মের শক্তিতে বিশ্বাস করি৷ কিন্তু সেদিন বেদান্ত সোসাইটিতে তোমাদের সঙ্গে দেখা হওয়াটা আমি দৈব ছাড়া কোনওভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারিনি৷ নয়তো তোমরা সেদিন হঠাৎ কেন বেদান্ত সোসাইটিতে যাবে, কেনই বা আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে?’
সিমোন বলল হঠাৎ বৃন্দার কথার সূত্র ধরে—
‘অ্যান্ড ইউ নো, দ্যাট ডে ওয়াজ মাই বার্থডে৷ পঞ্চাশ বছর বয়স হল আমার৷ ওয়াট এল্স্ মোর ভ্যালুয়েবল কুড আই গেট, অ্যাজ আ গিফট দ্যান দিস রিনিউড ফ্রেন্ডশিপ উইথ মাই সিস্টারস্ ফ্যামিলি?’ সিমোন হাসছে৷ ঝরনার মতো সেই স্ফটিক স্বচ্ছ হাসিতে বিচ্ছুরিত হচ্ছে পূর্ণিমা ছুঁয়ে থাকা চাঁদ৷
পরদিন সন্ধেবেলাও চাঁদ ছুঁয়ে ছিল পূর্ণতাকে, যখন বৃন্দা আর সিমোনের কাছে বিদায় নিয়ে সানিভেলে ফিরছিল ওরা— রণো আর রোহিণী৷ রোহিণী ভাবছিল, এতদিনে ওর জানতে চাওয়া গল্পটা একটা গোল নিটোল শেপ পেয়েছে৷ এবার ও ওর জানা কাহিনিটাকে রাউন্ড আপ করতে পারবে, আকাশে ঝুলে থাকা গোল চাঁদটার মতো৷ আর কোনও বাধা নেই ৷ এবার ও বেরিয়ে পড়তে পারে দেশের পথে শিকড়ের সন্ধানে৷ রণোও ড্রাইভ করছিল একটু অন্যমনস্কভাবে৷ সীমন্তিনী আর অরুণাভর সামনের মাসেই সানি ভেলে আসার কথা ওদের ঘর-সংসার দেখতে৷ পিছনে আবছা হয়ে আসা গোল্ডস্টাইন ম্যানশন ছাড়িয়ে অনেকদূর চলে এসেছে ওরা৷ রিয়ার ভিউ মিররে অনেক দূরে দেখা যাচ্ছে গোল্ডেন গেট ব্রিজ৷ আলোর মালায় সাজানো ব্রিজ এবার পুরো অবয়ব নিয়ে ধরা পড়ছে পিছনে তাকাবার আয়নায়৷
*পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ২৫ জানুয়ারি ২০২৩
ছবি সৌজন্য: Stockvault, Pixnio, Depositphotos, Pexels, Peakpx,
অপরাজিতা দাশগুপ্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক। আগে ইতিহাসের অধ্যাপনা করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট মেরিজ কলেজে ইতিহাস ও মানবীচর্চা বিভাগের ফুলব্রাইট ভিজিটিং অধ্যাপকও ছিলেন। প্রেসিডেন্সির ছাত্রী অপরাজিতার গবেষণা ও লেখালিখির বিষয় উনিশ শতকের শেষে ও বিশ শতকের গোড়ায় বাঙালি হিন্দু ভদ্রলোকের চিন্তাচেতনায় এবং বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারী। অধ্যাপনা, গবেষণা, ও পেশা সামলে অপরাজিতা সোৎসাহে সাহিত্যচর্চাও করেন। তিনটি প্রকাশিত গ্রন্থ - সুরের স্মৃতি, স্মৃতির সুর, ইচ্ছের গাছ ও অন্যান্য, ছায়াপথ। নিয়মিত লেখালিখি করেন আনন্দবাজার-সহ নানা প্রথম সারির পত্রপত্রিকায়।