সম্প্রতি শোভাবাজার রাজবাড়িতে উৎসব’ নামে তিন দিনের একটি অনুষ্ঠানসূচী পালিত হয়। উদ্যোক্তা পুত্রবধূ সুস্মিতা দেব বৌরাণী। প্রথম দিন, ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছটায় ‘বনেদিবাড়ির আড্ডা’ দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বিশিষ্ট চিকিৎসক, বাংলার হেরিটেজ ও সংস্কৃতির প্রচারক ডাঃ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং সঞ্চালনা করেন। বাংলালাইভ ডট কম-এর তরফে পৃথিবীর প্রায় ৩৪ টি দেশে এই অনুষ্ঠানটির লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত সাবর্ণ রায়চৌধুরী, ছাতুবাবু-লাটুবাবু, ঠনঠনিয়া লাহাবাড়ি, ধান্যকুড়িয়া গায়েন বাড়ি, পটলডাঙা বসুমল্লিক বাড়ি, মহেন্দ্র শ্রীমানী বাড়ি, শোভাবাজার রাজবাড়ি, জোড়াসাঁকো দাঁ বাড়ি, জানবাজার রানি রাসমণির বাড়ি, বউবাজার ঝুলনবাড়ি, কলুটোলা বদন চাঁদ রায় বাড়ি ও বটকৃষ্ণ পাল বাড়ির সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বংশধর জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়, মহিষাসুরমর্দিনী খ্যাত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উত্তরসূরি দেবাশীষ সরকার, কাজী নজরুল ইসলামের বংশধর নূপুর কাজী।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নৃত্যশিল্পী অলকনন্দা রায়, সৌন্দর্য্য বিশেষজ্ঞ কেয়া শেঠ, টেকনো ইন্ডিয়ার কো-চেয়ারম্যান মানসী রায়চৌধুরী, মুখরোচক চানাচুর-এর কর্ণধার প্রণব চন্দ্র প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
শোভাবাজার রাজবাড়ির গরিমাময় অতীত ইতিহাস নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন থেকে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র কে আসেননি এই রাজবাড়িতে! এখানেই গহরজান গান গেয়ে গেছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাঁদের বংশধররা সেই বাড়ির ঠাকুরদালান আলো করে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করলেন, পুজোর গন্ধ মেখে জমাটি আড্ডাও দিলেন। সময় যেন থমকে গেছিল তিনঘণ্টার জন্য। শুধুমাত্র স্থানটুকু এক রেখে প্রায় একশো বছরের ছড়ানো কালচিত্রে ঘুরে বেড়ালেন আড্ডার কুশীলবেরা, মাতিয়ে রাখলেন আড্ডার তিনঘণ্টা আলোচনা জুড়ে। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটির সাক্ষী রইল শোভাবাজার রাজবাড়ির ঐতিহ্য-মণ্ডিত ঠাকুরদালান, ঝাড়বাতির হলুদ আলো এবং মাটির রঙে নির্মিত সময়ের স্রষ্টা- মা দুর্গা ।
‘BOURANI by Susmita’ নামক ব্রান্ডের উদ্যোগে ‘উৎসব’ নামক এই প্রাক-পুজো আড্ডা-অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছিলেন অন্যান্য আরও বনেদি বাড়ির সদস্যরা। প্রত্যেকে তাঁদের নির্ধারিত স্টলে প্রদর্শন করলেন বউরানিদের নানা রকম হাতের কাজ, পারিবারিক ঐতিহ্য বহনকারী পোশাক, শাড়ি-গয়না থেকে খাওয়া–দাওয়া সবই। আশ্চর্যের বিষয়, এর মধ্যে একটি বাদ দিলে প্রায় প্রত্যেকটি স্টলই মহিলা বা বউরানিদের দ্বারা পরিচালিত। এই বউরানিদের কেউ উচ্চতর বিজ্ঞান সাধনায় যুক্ত, কেউ বা কর্পোরেট জগতে আসীন ছিলেন খুব উচ্চপদে, কেউ আবার শিক্ষিকা। সবাই তাঁদের নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে হাজির হয়েছিলে। প্রবেশ অবাধ ছিল জনসাধারণের জন্যও।
প্রথম দিনের এই বৈঠকি আড্ডার পর, দ্বিতীয় দিন ছিল নৃত্য ও শিল্পকলার ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’, যেখানে অংশগ্রহণ করে শীর্ষ বাছাই দশটি স্কুল। প্রাথমিকভাবে এই ইভেন্টে শহরের প্রায় দুশো স্কুল অংশগ্রহণ করেছিল। তৃতীয় দিন পরিবেশিত হয় কত্থক নৃত্য ও পুরাতনী বাংলা গান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছিলেন ‘স্পিরিট অফ কলকাতা’ নামক সংস্থা।
এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি সিদ্ধার্থ পালের তোলা।
সিদ্ধার্থ পালের গল্প এবং ছবি অনেকটা গল্পের মতো। ছবি তোলার ব্যকরণ তিনি মন দিয়ে শিখেছেন, তবে তা নিয়ম ভাঙবার জন্যই। আলো-ছায়া, মানব-শরীর, নিয়ে তিনি নিরন্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে চোখের এক মারাত্মক অসুখ তাঁর দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দিয়ে ছবি তোলায় বাধা হয়ে দাঁড়ালেও, তিনি কম আলোয় ছবি তোলা চালিয়ে গেছেন এবং বহু আকর্ষণীয় ছবি তুলেছেন।