banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আহারেণু: পর্ব ১০ – আনন্দনাড়ু

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Anandanaru
Anandanaru Bengali sweetmeat

বাংলার শুভ কাজ অর্থাৎ বিয়ে, পৈতে, মুখেভাত ইত্যাদি অনুষ্ঠানের অন্যতম এবং উল্লেখযোগ্য স্ত্রী আচার হল আনন্দনাড়ু। “আনন্দদায়ক যে নাড়ু”- এই  হল আনন্দনাড়ুর সাহিত্যগত রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। দোকানে নয়, বাড়িতেই বানানো এই আনন্দনাড়ুর মূল কথা হল, বাংলা লোকসমাজের আনন্দ উজ্জীবিত করা। তার জন্য পরিবারের মেয়েদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোকে নতুনভাবে আস্বাদন করা। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে উৎসব বাড়ির সমস্ত সদস্যের মধ্যে শুভেচ্ছা, স্নেহ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আদানপ্রদান। 

নাড়ু শব্দটি এসেছে লাড্ডুক থেকে। লাড্ডুক> লাড্ডুঅ > লাড়ু > নাড়ু। তবে আনন্দনাড়ু হল এক রাজকীয় এবং এলাহি স্ত্রী আচার আর তাই আর সব নাড়ু থেকে এটি আলাদা, কারণ এর মধ্যে মিশে থাকে শুভ উৎসবের আনন্দ। নারকেল, তিল, ডালের ছাতু দিয়ে অতন্ডুল জাতীয় নাড়ু আর মুড়ি, চিঁড়ে, খই, দিয়ে তণ্ডুল জাতীয় নাড়ুর রেওয়াজ আমাদের বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্য। তবে গুড় বা চিনি হল নাড়ু তৈরির প্রধান উপকরণ। সাধারণ আর পাঁচটা নাড়ুর ওপরে রয়েছে আনন্দনাড়ু, যেটি বাকী সব নাড়ুকে কয়েক গোল দিতেই পারে।

Anandanaru02
চলছে নাড়ু মথার কাজ

আমাদের ঘটিবাড়ির শুভকাজের অন্যতম ঐতিহ্য হল আনন্দনাড়ু। অনুষ্ঠান বাড়িতে সে এক পর্ব। সাজোসাজো রব পড়ে যেত। বাড়ির বয়স্ক স্ত্রীলোকদের সেই নাড়ু তৈয়ারের চিন্তায় ঘুম থাকত না কারণ সফল এবং উৎকৃষ্ট নাড়ু তৈরি হলেই তবে মুখরক্ষা হবে সেইসব সুগৃহিণীদের। দিদা, ঠাম্মা বলতেন “নাড়ুহাত”, যার অর্থ হল বিয়ে, অন্নপ্রাশন, উপনয়নের আগের দিন পাঁচ এয়োস্ত্রী মিলে এই অভিনব মিষ্টান্ন প্রস্তুতির আগে শুদ্ধাচারে আনন্দনাড়ুর সব উপকরণ একে একে বিশাল পেতলের গামলা বা পরাতে নিয়ে ঢালবেন একত্রে। নির্ধারিত মাপ অনুযায়ী কেউ ঢালবে চালের গুঁড়ো, কেউ শুকনো আখের গুড়। কেউ নারকোল কোরা আবার কেউ সাদা তিল। তারপর একজন কেউ সেই নাড়ুর মিশ্রণ মাখবে। মেয়েরা এ ওকে ছুঁয়ে থাকবে। ঠিক যেন ‘আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি’ … এর নাম নাড়ুহাত। বাড়িতে শুভ উৎসবের সূচনা লগ্নে মহিলা মহলে এ এক দেখবার মতো স্ত্রী আচার।

আজও বাড়িতে বিয়ে, পৈতে, মুখেভাত লাগলেই মনে পড়ে মায়ের হম্বিতম্বি। আনন্দনাড়ুর বাজার ঠিক মাপমতো হল কিনা। সে এক যজ্ঞ। আত্মীয়স্বজন মুখিয়ে থাকেন সেই নাড়ুর জন্য। সত্যনারায়ণের সিন্নির মতো মাপ তার। যত নিখুঁত মাপ তত সুস্বাদু হবে সেই নাড়ু।  মায়েদের মাপ মুখস্থ থাকত। সেইমত বাজার করানো হত আগেভাগে। শুভকাজের আগের দিন বিশাল পরাতে নারকোল কোরা হত। চারটে বড় বড় নারকোলের জন্য এক কিলো আটশো আতপচালের মিহি গুঁড়ো, আটশো গ্রাম সাদা তিল আর দেড়কিলো শুকনো আখের গুড়ের জোগাড় থাকত। আর ভাজার জন্য সরষের তেল। এবার আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি, মাখিবে নাড়ু সবে ভাজিবে তায়।

প্রথমেই নারকোলের ওপর চালের গুঁড়ো (সেকালে ঢেঁকিতে কোটা হত, এখন বাজার থেকে ভাঙিয়ে নেওয়া হয়) আর গুড় দিয়ে ঠাসা। ভাগে ভাগে পেতলের গামলায় এক একটি অংশ নিয়ে ঠাসত বাড়ির মেয়েরা। তারপর তিল ছড়িয়ে আবার ঠাসো। মোলায়েম করে, মসৃণ করে। এই মণ্ডকে ‘ন্যাড়াই’ বলে। এবার পাকানোর পালা। ঘণ্টা তিনেক কাবার হত এই ঠাসাঠাসি বা মেখে নেওয়াতেই। এবার বিশাল চুলায় বিশাল পিতলের কড়াই। সরষের তেলে ধোঁয়া উঠতেই প্রথম খোলায় একুশটা নাড়ু ভাজতে হবে। ভাজবেন কে? না, শুভকাজ যে পাত্র বা পাত্রীকে নিয়ে, তার মা। ভেজে তুলে রাখতে হবে মাটির শ্যামের হাঁড়িতে। শুভকাজ মিটলে নারায়ণের পুজোয় এই নাড়ু নিবেদন হবে।

Anandanaru03
ভাজার জন্য তৈরি

এই একুশটি নাড়ু কিন্তু নানা আকারের। গোল, চৌকো, ত্রিকোণ, তারা, আবার কখনও চোঙাকৃতি। বেশিটাই অবশ্য হবে নিটোল গোল। গনগনে আঁচে গরম তেলে নাড়ু ভাজা শুরু হল। শাঁখ বাজল। উলুধ্বনি। নাড়ুভাজার সময় আচমকা বৃষ্টি নাকি আনন্দের বার্তা বহন করে আনে। বলা হয় বিধাতাপুরুষ নাকি খুশি হয়ে ওপর থেকে পুষ্পবৃষ্টি করছেন। মহিলা মহলে নাড়ুভাজার মুহূর্তটি চমৎকার। আড্ডা, গান, হাসাহাসি, ঠাট্টা ইয়ার্কির বন্যা। সেই নাড়ু ভোজবাড়িতে বিতরণ আরেক কাজ। বয়ামবন্দি করে চুপিসাড়ে সবার অলক্ষ্যে রেখেও দিতেন কোনও ঠানদিদি, যেগুলি শুভকাজের অনেকদিন পর বের করে তাক লাগিয়ে দিতেন চায়ের টেবিলে। উপনয়নে যারা সদ্যব্রাহ্মণকে ভিক্ষা দেবেন, তাঁদের হাতে মাটির হাঁড়ি করে নাড়ু দেবার রেওয়াজ দেখেছি আমাদের বাড়িতে।

Anandanaru
ভাজার পরে নানা আকারের আনন্দনাড়ু

তবে একটা ব্যাপার, যে পরিবারে আনন্দনাড়ু বানানোর রীতি নেই তাদের নাকি নেহাত শখ করে এই নাড়ু বানাতে নেই। যদিও বাড়িতে আনন্দানুষ্ঠান ছাড়াও কোনও শুভ সংবাদ এলে “ইচ্ছেনাড়ু” বানানো যায়, বলেছিলেন আমার ঠাকুমা। পরীক্ষা পাশের সংবাদে বা সংসারে নতুন সদস্য আগমনের কারণে, গৃহপ্রবেশ উপলক্ষেও “ইচ্ছেনাড়ু” বানাতেন তিনি। সে যুগে বিয়ের কথা পাকা হলেই বাড়িতে রব উঠত এমন “তাহলে আর কি? এবার আনন্দনাড়ুর চাল কুটতে শুরু করে দাও তবে!” ‘শেষের কবিতা’য় অমিত তার যোগমায়া মাসিমাকেও বলেছিল এমনটি। 

“মাসিমা, … জাগতিক নিয়মে এক ভদ্রলোক এক ভদ্ররমণীকে বিয়ে করবার জন্যে খেপেছে। দোষে গুণে ছেলেটি চলনসই, মেয়েটির কথা বলা বাহুল্য। এমন অবস্থায় সাধারণ মাসিমার দল স্বভাবের নিয়মেই খুশি হয়ে তখনই ঢেঁকিতে আনন্দনাড়ু কুটতে শুরু করেন।”

মিথ্যে নয়। সে যুগে ঢেঁকিতেই কোটা হত আনন্দনাড়ুর চাল। এখন আমরা ভাঙিয়ে আনি গম ভাঙানোর চাক্কী থেকে। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেও রেওয়াজ ছিল এই আনন্দনাড়ুর। সেকালে কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে এর ব্যবহার ছিল। সাধারণতঃ চালের গুঁড়োতে জল দিলে তা সকড়ি বা এঁটো ভাবা হত সে যুগে। অথচ পুজো পার্বণের মতো শুভ অনুষ্ঠানে চালের গুঁড়ো দিয়ে নাড়ু? নাহ! আনন্দনাড়ুতে চালের গুঁড়ো মাখা হয় শুকনো আখের গুড় দিয়ে। এক ফোঁটা জল বা দুধ পড়বে না সেখানে। গুড়ের রসেই মথে নেওয়া হবে নাড়ুর তাল। তাই সকড়ি হবার কোনও প্রশ্নই ছিল না।  

 

আনন্দনাড়ুর ছবি সৌজন্যে: দোলন মুখোপাধ্যায়ের (ফেসবুক) কাছ থেকে লেখকের সূত্রে প্রাপ্ত।
ভিডিও সৌজন্য: Youtube

রসায়নের ছাত্রী ইন্দিরা আদ্যোপান্ত হোমমেকার। তবে গত এক দশকেরও বেশি সময় যাবৎ সাহিত্যচর্চা করছেন নিয়মিত। প্রথম গল্প দেশ পত্রিকায় এহং প্রথম উপন্যাস সানন্দায় প্রকাশিত হয়। বেশ কিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যেই। সব নামীদামি পত্রিকা এবং ই-ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখেন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, রম্যরচনা ও প্রবন্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com