(Poetry)
(১)
গ্রীষ্মের পাদানিতে সারাদুপুর ঝুলছে এই দুর্ভেদ্য শহর
শুকনো কুয়োতলা থেকে অস্থির পিপাসানাদ
কুকুরের লকলকে জিভ, রক্তচোখ–
দমকল ঘন্টি বাজিয়ে চলেছে শহর পরিক্রমায়
পঙ্গু পায়ের মতো জল কুয়ো থেকে খুঁড়িয়ে ওঠে,
দড়ি বালতি (হা: আ আ!) শব্দ করে নীচে নেমে যায়,
শূন্যতাজাত সে শব্দ এসে থামে অপেক্ষার শূন্যতায়
অসমাপ্ত গানে ঘনিয়ে ওঠে অন্ধকারের ছায়া–
সভামুখ্য বোঝাতে থাকেন রথের রশি, অচলায়তন
ক্রমাগত খুঁচিয়ে চলা নিভন্ত চুল্লী, জমাট রক্ত–
ফিনকি দিয়ে ওঠে ছাইচাপা অক্ষর
নাভিদেশ ছুঁয়ে হল্কা হাওয়া। (Poetry)
সাদা-কালো লেখা: রাহুল পুরকায়স্থ
(২)
দ্বিধাদীর্ণ শালবন তোমাকে পাঠাতে চাই
গেরুয়া নদীর দেশে
আজ অবেলায় জরিপের ধানক্ষেত
জলে ও কান্নায় ডুবে আছে,
আরো ঋণে ডুবে আছে যেসব বিনিদ্র ভিটে মাটি
সেইখানে ধানে-তুঁষে
মানুষের মর্যাদার কাছে তুমি যাও।
ডেকে নাও ভোরের ইস্কুল,
ছেঁড়া কামিজের দুটি ডানা–
ওকে দিও আখগুড়, ফল, ওকে দিও জল। (Poetry)

(৩)
নদীর ভিতরে কেউ গান রেখে গেছে
মাঠের জটিল হাওয়া
বাতাস থেকে সুঘ্রাণ নিতে গিয়ে কথা আটকায়
সারারাত জোৎস্না ও শিশিরে ভেজা হারানো মুখ
আকাশে শতভিষা নক্ষত্র ফোটে
আমাদের আকাঙ্খার মতো ভাবলেশহীন
নক্ষত্ররা ডুবে গেলে মানুষের কী বা যায়
কী বা আসে! (Poetry)
(৪)
অশ্রুরেখার এক নির্বোধ গহ্বরে ঢুকে পড়ি
মৃতের চোখে ফুল ও চন্দন
চারপাশে ছড়িয়ে খৈ ও শোক
যে রাস্তা আঁকড়ে ধরি–
ধ্রুবপদে বাঁধা, ক্লান্ত-বিষাদময়
শবগাড়ি চলতে থাকে আর নিরুত্তর পথে জ্যোৎস্না চলকে পড়ে,
এলো চুলে—
কু-বাতাস দৃষ্টি হেনেছিল, বিবর্ণতা স্পষ্ট-
আশ্চর্য আয়নার কাছে কিছু হাসি ধরা রইল,
আগুন কি রথ?
ধোঁয়া কি চক্র?
চিতাকাঠ কি ক্ষয়ে আসা সিঁড়ি?
ঘিলু ফাটার শব্দে থরহরি, হেঁটমুন্ড সময়ছুরি
হৃদয়ের জলজ উদ্ভিদে গেঁথে দেয়
বন্ধ ঘড়ির মুখোমুখি দুলছে বিশ্বাসের জন্ম-জন্মান্তর
অশ্রুরেখা সেই দাগ
মুছতে মুছতে একদিন চিহ্ন থাকে না। (Poetry)
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
কবি, সমালোচক