Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

হোমস্টে: এসো আমার ঘরে এসো

শুভেন্দু দাশমুন্সী

নভেম্বর ১০, ২০২৫

Homestay
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Homestay)

‘হোমস্টে’, যে শব্দের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এক অগাধ আতিথেয়তা। অতিথি হয়ে আসা পরিচিত অথবা অপরিচিত মানুষকে নিয়ে এক অস্থায়ী সংসার যাপন! তাঁদের দেখভাল, ভালো থাকা, ঘোরা ফেরা সবকিছুর দায়িত্ব এই গৃহস্থের কাঁধে। আর তাই ছোট হয়ে আসা পরিবারের পৃথিবী ঘুরতে গিয়ে খুঁজতে শুরু করল সেই আন্তরিকতাই, যা সে হেলায় হারিয়ে এসেছে নিজের ভেঙে যাওয়া যৌথ পরিবারের কাছে… তবে বাঙালির এই যৌথযাপনের নাম, হোমস্টে হওয়ার অনেক আগে থেকেই এই ভাবনা নিয়ে পথ চলেছিলেন তাঁদের প্রাণপুরুষ। তাঁদের প্রিয় কবিগুরু, শান্তিনিকেতন বা শিলাইদহে, আশ্রয় হয়ে উঠেছিলেন বহু মানুষের। তাঁদের স্মৃতিকথা ঘাঁটলে উঠে আসে সেসব গল্প। আসুন আজ এই অলিখিত হোমস্টে ভাবনা নিয়েই শুনে নেওয়া যাক দু’এক কথা… (Homestay)

রবীন্দ্রনাথ ভারী অতিথি বৎসল। তা সে জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই হোক বা শিলাইদহের কুঠিবাড়ি, সে শান্তিনিকেতনের আশ্রমই হোক বা সেখানে পরবর্তীকালে অতিথিনিবাস স্থাপনার উদ্যোগেই হোক! রবীন্দ্রনাথ কখনও অতিথি বৎসল গৃহকর্তা, কখনও অতিথি বৎসল জমিদার আবার কখনও বা তিনি অতিথি বৎসল আশ্রমগুরু। তাঁর আতিথেয়তায় যেমন তাঁর বন্ধুরা দিনযাপন করেছেন, তেমনই করেছেন তাঁর কাছে এসে পৌঁছনো দেশে-বিদশের কত-না স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব! (Homestay)

আরও পড়ুন: শঙ্কু, ঘনাদা, কাকাবাবুরা: হারানো পুজোসংখ্যার গপ্পো

সেই তালিকায় কে নেই! একদিকে গান্ধিজি ও তাঁর স্ত্রী কস্তুরবা, একদিকে বুদ্ধদেব বসু ও তাঁর  স্ত্রী প্রতিভা বসু আবার কখনও বনফুলের মতো লেখক, জগদীশচন্দ্র বসুর মতো বিজ্ঞানী। অন্যদিকে বিদেশের মাটি থেকে এখানে পা রাখলেন লেনার্ড এলমহার্স্ট, হ্যারি টিম্বার্স কিংবা সি এফ এন্ডরুজ বা গ্রেচেন গ্রিনের মতো সেইসব বিদেশিরা— যাঁরা নিজেদের যুক্ত করলেন শান্তিনিকেতনের কর্মধারায়। (Homestay)

আবার এখানে আসেন, কিছুদিনের জন্য কবির আতিথেয়তায় থাকেন এমন সকল শিল্পী, রাজনীতিক, সাহিত্যিকের সংখ্যাও সুপ্রচুর। তাঁদের মধ্যে একদিকে যদি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এসে থাকেন শিল্পী উইলিয়ম রটেনস্টাইন, তো শিলাইদহে থেকেছেন সস্ত্রীক জগদীশচন্দ্র বসু আবার শান্তিনিকেতনে এসেছেন সমকালের প্রায় সকল কবি-সাহিত্যিক। (Homestay)

Homestay
রবীন্দ্রনাথ ভারী অতিথি বৎসল

এই যে এক জায়গাতে পৌঁছনো আর সেখানে কোনও বাণিজ্যিক অতিথিশালা বা বাণিজ্যিক হোটেল বা আম-জনতার সরাইখানাতে না উঠে, স্থানীয় কারও বাড়িতে, গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর আন্তরিক পারিবারিক পরিবেশে তাঁদের আতিথেয়তায় দিনযাপনের মধুর মনোরম অভিজ্ঞতা তো রবীন্দ্রনাথ নিজেও পেয়েছিলেন। সেই প্রথম যেবার বিলেত যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলেন, তখন। মনে পড়বে, নিজের আত্মকথায় উল্লিখিত ডাক্তার আত্মারাম পাণ্ডুরঙ নামক মারাঠি ভদ্রলোকের বাড়িতে তাঁর থাকার ঘটনা। সেখানে ওই ডাক্তারবাবুরই বড় মেয়ে ছিলেন অন্নপূর্ণা বা আনা তরখড়।

তাঁর উপরেই ছিল কবিকে বিলিতি আদব কায়দা শেখাবার দায়িত্ব। বছর সতেরোর কিশোর রবীন্দ্রনাথ, থাকতেনও সেই বাড়িতেই। তাঁদের আতিথেয়তায় ছিলেন তিনি, আর বিলেত যাওয়ার প্রস্তুতি-পর্বও চলেছিল সেখানেই। দিলীপকুমার রায়কে কবি পরে স্পষ্টই বলেছিলেন, ‘আমার সঙ্গে সে [আনা] প্রায়ই যেচে মিশতে আসত। কত ছুতো করেই সে ঘুরত আমার আনাচে কানাচে।– আমাকে বিমর্ষ দেখলে দিত সান্ত্বনা, প্রফুল্ল দেখলে পিছন থেকে ধরত চোখ টিপে।’ সে এক পরিবারে অন্য-ভাবে দিনযাপনের গল্প যেমন, তেমনই কবির আতিথেয়তারও তো কতই কাহিনিমালা। (Homestay)

“রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিজ্ঞানী বন্ধুকে শোনাতেন তাঁর লেখা নতুন গল্প আর কবিতা আর জগদীশচন্দ্র কবিকে জানাতেন সাম্প্রতিক বিজ্ঞান-বিষয়ক গবেষণার খবরাখবর থেকে জড় ও জীবের সম্পর্ক নিয়ে এক বিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ।”

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু তখনও বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী নন, রবীন্দ্রনাথও তখন কবি-পরিচিতির প্রথমার্ধে। রবীন্দ্রনাথ জমিদারির কর্মসূত্রে তখন শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে আর পদ্মাবোটে থাকছেন নিয়মিত। রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র রথীন্দ্রনাথ তাঁর পিতৃস্মৃতি লিখতে গিয়ে বলেছিলেন, জগদীশচন্দ্র প্রতি সপ্তাহে শনিবার দিন শিলাইদহে আসতেন, শনি-রবি কাটিয়ে সোমবার ফিরতেন কলেজের কাজে। কখনও দুই বন্ধু থাকতেন কুঠিবাড়িতে, কখনও পদ্মাবোটে। রথী ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘আমার পিতা যেমন উদগ্রীব হয়ে জগদীশচন্দ্রের আগমনের প্রতীক্ষা করতেন, আমারও তেমনি ঔৎসুক্য কম ছিল না।
আমার সঙ্গে তিনি গল্প করতেন, নানা রকম খেলা শেখাতেন, ছোট বলে আমাকে উপেক্ষা করতেন না।’ (Homestay)

নদীর পাড়ে কীভাবে কচ্ছপের ডিম খুঁজে পাওয়া যায়, তা বন্ধুপুত্র কিশোর রথীন্দ্রনাথকে শেখাতেন আবার দুই বন্ধু সন্ধ্যাবেলা বসতেন এক আশ্চর্য ভাবনার বিনিময়ের আসরে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিজ্ঞানী বন্ধুকে শোনাতেন তাঁর লেখা নতুন গল্প আর কবিতা আর জগদীশচন্দ্র কবিকে জানাতেন সাম্প্রতিক বিজ্ঞান-বিষয়ক গবেষণার খবরাখবর থেকে জড় ও জীবের সম্পর্ক নিয়ে এক বিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ। (Homestay)

Homestay
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধী

এই শিলাইদহ কুঠিবাড়ির নিত্যব্যবহার্য সবজির ব্যবস্থা কীভাবে হত? সেখানকার অধিবাসী শচীন্দ্রনাথ অধিকারী জানিয়েছিলেন, সেই সময়ে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী নাকি কুঠিবাড়িতে নিজের হাতে বানিয়েছিলেন শাকসবজি আর তরিতরকারির বাগান। কী চমৎকার তার বন্দোবস্ত। কুঠিবাড়িতে যাঁরা থাকতেন, তাঁদের জন্যে তো বটেই, এমনকি সেখানে উৎপন্ন শাক-সবজি পাঠানো হত কর্মচারীদের বাড়ি-বাড়িও। (Homestay)

আতিথেয়তায় যত্ন করে খাওয়ানোর অন্য দুই কাহিনি আছে বনফুল লিখিত রবীন্দ্র-স্মৃতিতে। এক তো, বনফুল বোলপুরে এসেছেন, জেনে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ বিকেলে চা-এর আসরে নিমন্ত্রণ করে বলেন, ‘বিকেলে চা খাবে, তোমার লেখা পড়ে মনে হয় তুমি ঝাল খেতে ভালবাসো। বিকেলে বড় বড় কাবলে মটরের ঘুগনি করলে কেমন হয়? ঘুগনির মাঝখানে একটা লাল লঙ্কা গোঁজা থাকবে।’ অন্য এক অতিথি আপ্যায়নে বনফুলকে রবীন্দ্রনাথের খাওয়ানোর গল্প ভারী চমকপ্রদ। (Homestay)

আরও পড়ুন: আসলেই শোলে: ‘শোলে’-র গান: গানকথার সংলাপ

সকালবেলা কবির সামনে হাজির বনফুল। কবি নিজে প্রাতরাশে খেলেন একটু ক্রিম, তার সঙ্গে ভিজোনো মুগের ডাল, ছোলা, বাদাম, পেস্তা, কিসমিস, আখরোট আর উচ্ছের বীজ। তার পাশে, তাঁর অনুগত ভৃত্য নীলমণি একটি বাটিতে ভেঙে দিলেন দুটি ডিম, রবীন্দ্রনাথ তাতে নিজে হাতে গোলমরিচের গুঁড়ো আর নুন ছড়িয়ে তা খেয়ে নিলেন মাখন-লাগানো দুটি রুটিসহ। শেষে একেবারে তখুনি তখুনি ব্রিউ করা কফি। অন্যদিকে বনফুলের জন্য প্রাতরাশে আনা হল, বনফুলের ভাষাতেই বলা যাক: ‘গরম ফুলকো লুচি, আলুর ছেঁচকি, গরম সিঙারা, কচুরি, সন্দেশ। তাছাড়া কেক, বিস্কুট, আপেল, কলা। তার সঙ্গে চায়ের সমস্ত সরঞ্জাম। আরও কত খাবার ছিল, এখন ঠিক মনে পড়ছে না। অত সকালে আমার জন্যে এত রকম খাবারের আয়োজন করা হয়েছে দেখে অবাক হয়ে গেলুম।’ একেই বুঝি বলে অভিজাত আতিথেয়তা! (Homestay)

আর অতিথির প্রতি প্রশ্রয়েরও দু-তিনটি ছোট-কথা রয়েছে বনফুলের ওই রবীন্দ্র-স্মৃতিতেই। বনফুল রবীন্দ্রনাথের ঘরে পুত্র চিরন্তন মুখোপাধ্যায়কে কোলে আগলে রেখেছেন দেখে কবি বলে উঠলেন, ‘ওকে ধরে রেখেছ কেন? ছেড়ে দাও না।’ বনফুল কবিকে সবিনয়ে জানান পুত্রের দৌরাত্ম্যের কথা। বলেন, ‘ঘরের চারিদিকে এত সব দামী জিনিস ছড়ানো রয়েছে। ওকে ছেড়ে দিলে এখুনি গিয়ে ধরবে, ভেঙেও ফেলতে পারে’। রবীন্দ্রনাথের স্নেহশীল উত্তরটি ছিল ‘ফেলুক। ওসব শিশু-স্পর্শ-বঞ্চিত হতভাগ্য জিনিস। ওর হাতে কোনওটা ভেঙে গেলে তার মুক্তি হবে। ছেড়ে দাও ওকে—।’ (Homestay)

‘এই ছোটো জগতে সবচেয়ে বেশি অলস আমরা। প্রার্থনা এবং উপাসনার জন্য সূর্য ওঠার কিছু আগে এখানে সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। এখানে দিন শুরু হয় গান দিয়ে আবার গান গেয়েই বিদ্যার্থীরা তার সমাপ্তি ঘটায়।’

অন্য কাহিনির চরিত্র বনফুলের গ্রামবাসী বাবা-মা। তাঁরা রবীন্দ্রনাথের লেখার ভক্ত। তাঁরা দেখা করতে চান কবির সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথকে সে কথা জানাতে বনফুলকে সাদর আমন্ত্রণ জানালেন কবি। দেখা করলেন বনফুলের বাবা-মা-র সঙ্গে। বনফুল লিখছেন; ‘একদিনের জন্য গিয়েছিলাম। রবীন্দ্রনাথ যে কী সম্ভ্রমপূর্ণ সহৃদয়তার সঙ্গে আমার বাবা-মাকে অভ্যর্থনা করেছিলেন, তা লিখে বোঝানো যাবে না। মনে হচ্ছিল তিনি যেন, কোনও নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে আলাপ করছেন। অতিথিদের সঙ্গে যে দূরত্ব রেখে সাধারণত আমরা আলাপ করি তা যেন ছিল না তাঁর আন্তরিক আলাপে সেদিন। মনে হচ্ছিল, তিনি যেন আমাদের নিতান্ত আপনার লোক। কোনো সাহিত্যিক আলোচনা হয়নি সেদিন।’ (Homestay)

১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন মাদাম লেভি আর ১৯২৯-এ আসেন হাঙ্গেরির জি রোজা হইনোসি। দুজনেই তাঁদের শান্তিনিকেতন বাসপর্বের এক বিবরণ লিখেছিলেন। মাদাম লেভি লিখেছিলেন ডায়ারির মতো দিনলিপি আর হইনোসি লেখেন কতকটা স্মৃতিকথা। দিনলিপির অনুবাদ করেন নন্দদুলাল দে আর হইনোসির বিবরণীরটির হালে একটি বাংলা অনুবাদ করেছেন বিচিত্রা ভট্টাচার্য। দুজনেই শান্তিনিকেতনে এসে দুই বিপরীত সভ্যতার ও তার সাংস্কৃতিক দূরত্বের মেরুপ্রমাণ পার্থক্যে চমকে ওঠেন। (Homestay)

হইনোসি তো যেদিন এসে পৌঁছলেন, সেদিন রাত্রেই এমনকি এখান থেকে দেশে ফেরার কথাও ভেবেছিলেন। এখানকার প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হলেন, বুঝতে পারলেন এখানকার মানুষগুলির মধ্যে তাদের মতো করে এই সাগরপারের মানুষদের আপন করে নেওয়ার ধরনগুলি। শেষ পর্যন্ত দুজনেই দু-ভাবে অনুভব করেন এখানকার আতিথেয়তার আর মানবসম্পর্কের মধ্যবর্তী সুরটি। মাদাম লেভি আর তাঁর স্বামী সিলভা লেভি এলেন যেদিন, সেদিন আম্রকুঞ্জে তাঁদের আগমন উপলক্ষ্যেই আয়োজিত হল এক অনুষ্ঠান। এই যে অতিথি সমাগমে সকলের একত্রে উপস্থিত হয়ে বরণ করে নেওয়া, এ তো শান্তিনিকেতনের বহুল প্রচলিত রীতি। (Homestay)

আরও পড়ুন: হাতের লেখা শেখা

লেভি দম্পতিকেও আশ্রমিকরা গান আর স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে, গলায় মালা পরিয়ে বরণ করে নিলেন। থাকার ধরন, খাওয়ার ধরন আলাদা রকমের হলেও, মাদাম লেভি লিখছেন, ‘এখানকার বস্তু ও লোকজনের মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যা গভীরভাবে মনকে ছুঁয়ে যায়। খুব একটা স্নিগ্ধ কোমলভাব। ব্যঙ্গবিদ্রুপ নেই বললেই হয়। নিপুণতা এদের চরিত্রের আরেকটা দিক। আর আছে অসীম মানবতাবোধ। এমনকি এখানকার জীবজন্তুদের মনের কথা পর্যন্ত বোঝা যায়। এদের মধ্যে একটা আন্তরিক সৌজন্যবোধ লক্ষ করা যায়। পাশ্চাত্যে গজিয়ে ওঠা মাত্রাতিরিক্ত অভব্যতার লেশমাত্রও এদের মধ্যে নেই।’ (Homestay)

Homestay
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার মরিস গয়ার এবং ড. এস. রাধাকৃষ্ণন

পরে তিনি এক জায়গায় লিখেছেন, ‘এই ছোটো জগতে সবচেয়ে বেশি অলস আমরা। প্রার্থনা এবং উপাসনার জন্য সূর্য ওঠার কিছু আগে এখানে সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। এখানে দিন শুরু হয় গান দিয়ে আবার গান গেয়েই বিদ্যার্থীরা তার সমাপ্তি ঘটায়।’ (Homestay)

অন্যদিকে তার আট বছর পরে হইনোসি এখানে এসে পৌঁছবার পরের দিন ভোরবেলা, ঘুরতে বেরিয়ে দেখা পেলেন লাইব্রেরি ঘরে সেখানকার গ্রন্থাগারিকের। তিনিও প্রতিদিন এই ভোরেই উপস্থিত লাইব্রেরি ঘরে। মানুষটির নাম প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, তিনিই পরে রবীন্দ্রজীবনী লিখবেন। প্রভাতকুমার শ্রীযুক্ত হইনোসিকে জানালেন, তাঁরা এখানকার মানুষরা ‘রাতে তাড়াতাড়ি শুতে যাই আবার ঘুম থেকে উঠিও তাড়াতাড়ি। পড়াশুনার জন্য ভোরের সময়টা খুবই অনুকূল। আমরা দুপুরে ঘুমোই কারণ গরমের ক্লান্তি মস্তিষ্কের ক্রিয়া শ্লথ করে দেয়। এর প্রতিকার হচ্ছে ঘুমিয়ে আবার সতেজ হওয়া’। ধীরে ধীরে এই মানুষদের চেনা, তাঁদের সঙ্গে আলাপের মধ্যে দিয়ে পরিচিত হওয়া, এখানকার স্থানীয় মানুষজন আর এখানকার প্রাচীনতর জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে জানার মধ্য দিয়ে এই এলাকার সঙ্গে মিশে যাওয়া, এই বিনিময়ের কাহিনিটিই সত্য। (Homestay)

“কবির আন্তরিক আতিথেয়তার এই বিস্তারিত ইতিবৃত্তকে স্মরণে রেখে আধুনিক পর্যটনশিল্পে বহুল প্রচলিত এক নব্য-ধারণা হোম-স্টের বাংলা প্রতিশব্দ যদি করা হয় শান্তি-নিকেতন!”

তাই এখান থেকে ফেরার সময় হইনোসি লিখছেন, ‘টেগোরের কাছ থেকে বিদায় নেওয়া ছিল মর্মস্পর্শী এবং আবেগপ্রবণ। শান্তিনিকেতনের প্রত্যেক ব্যক্তি স্টেশনে উপস্থিত ছিল। গাড়ি যখন চলতে থাকল তখন ছাত্রছাত্রীদের সেই বিষণ্ণ সংগীত শোনা গেল, শান্তিনিকেতনের গান। যে শেষ আওয়াজটা আমাদের কানে পৌঁছল তা হল শাস্ত্রী মহাশয়ের উত্তেজিত হাসি।’ (Homestay)

মনে পড়বে, প্রথম যেদিন এখানে এলেন, সেদিনও এই বিধুশেখর শাস্ত্রী মশাইয়ের কথা দিয়েই এখানকার মানুষ দেখা শুরু হয়েছিল তাঁদের। এর আগে, লেভি দম্পতির শান্তিনিকেতন ত্যাগের দিন ঘটে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সমস্ত আয়োজন তৈরি। তার মধ্যেই খবর এল গান্ধিজিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেদিন আবার ছিল বসন্তোৎসবের আয়োজনও। সব অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল। থমকে গেল নাচ-গানের অনুষ্ঠান, নিস্তব্ধ পড়ে রইল হাতে আঁকা বিরাট আলপনা। যা আঁকার দক্ষতা আর কারিগরি দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন মাদাম লেভি। তবু বিষণ্ণ মনে কেবলমাত্র বিদায় অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হল মাত্র। দিনেন্দ্রনাথ গান গাইলেন, গান গাইলেন ছাত্রছাত্রীরা। বিদায় নিলেন সিলভা দম্পতি। (Homestay)

আরও পড়ুন: এক অন্য জ্ঞানপ্রকাশের কথা

মাদাম লেভি লিখেছিলেন তাঁর দিনপঞ্জিতে, ‘এই ধরনের একেবারে আলাদা বিষয়ের কথা বলতে আলাদা সব ভাষা খুঁজে বার করা দরকার।’ এই বিনিময়ই তো সবচেয়ে বড় আর গভীর সত্য এই সাংস্কৃতিক সংশ্লেষ-পর্বের। এখানেই এই হল বুঝি আতিথেয়তার পরমসুন্দর রূপলোক। (Homestay)                             

বুদ্ধদেব বসু একবার প্রস্তাব করেছিলেন, বিদেশি ‘অটোবায়োগ্রাফি’ শব্দের বাংলা পরিভাষা হিসেবে গৃহীত হোক ‘জীবনস্মৃতি’। কবির আন্তরিক আতিথেয়তার এই বিস্তারিত ইতিবৃত্তকে স্মরণে রেখে আধুনিক পর্যটনশিল্পে বহুল প্রচলিত এক নব্য-ধারণা হোম-স্টের বাংলা প্রতিশব্দ যদি করা হয় শান্তি-নিকেতন! (Homestay)

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Subhendu Dasmunshi

শুভেন্দু দাশমুন্সী
অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, স্যর গুরুদাস মহাবিদ্যালয়। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, গবেষক, সত্যজিৎ রায় বিশেষজ্ঞ। চিত্রনাট্যকার। গুপ্তধন সিরিজের সোনাদা চরিত্রের স্রষ্টা। গীতিকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রকাশিত সার্ধশতবার্ষিক রবীন্দ্র রচনাবলীর সম্পাদক।

Picture of শুভেন্দু দাশমুন্সী

শুভেন্দু দাশমুন্সী

শুভেন্দু দাশমুন্সী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, স্যর গুরুদাস মহাবিদ্যালয়। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, গবেষক, সত্যজিৎ রায় বিশেষজ্ঞ। চিত্রনাট্যকার। গুপ্তধন সিরিজের সোনাদা চরিত্রের স্রষ্টা। গীতিকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রকাশিত সার্ধশতবার্ষিক রবীন্দ্র রচনাবলীর সম্পাদক।
Picture of শুভেন্দু দাশমুন্সী

শুভেন্দু দাশমুন্সী

শুভেন্দু দাশমুন্সী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, স্যর গুরুদাস মহাবিদ্যালয়। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, গবেষক, সত্যজিৎ রায় বিশেষজ্ঞ। চিত্রনাট্যকার। গুপ্তধন সিরিজের সোনাদা চরিত্রের স্রষ্টা। গীতিকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রকাশিত সার্ধশতবার্ষিক রবীন্দ্র রচনাবলীর সম্পাদক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সৌমাল্য গরাই
মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
আলোলিকা মুখোপাধ্যায়

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

মণিদীপা ব্যানার্জী
মণিদীপা ব্যানার্জী
প্রদীপ্ত চক্রবর্তী

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

নির্মাল্য চ্যাটার্জি
মাধবেন্দু হেঁস
নির্মাল্য চ্যাটার্জি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com