banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

মনলোভানী বাখরখানি

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Bakarkhani

আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি
বেচো না বেচো না বন্ধু তোমার চোখের মণি

সমীর রায়ের লেখা এই গানটি গেয়েছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায় বাখরখানি এক রকমের রুটি, তবে সাধারণ রুটি নয় নবাবি আমলের শেষ দিকে জমিদার আগা বাখর খানের নাম অনুযায়ী এই রুটির নামকরণ, এমন কথা পাওয়া যায় হাকিম হাবিবুর রহমান (১৮৮১-১৯৪৭)-এর ‘ঢাকা পচাস বরস পহলে’ গ্রন্থে গও, জোবান, শুকি, নিমশুকি, চিনশুখা, কাইচারুটি, মুলাম, ভিগারুটি— নানা ভাগ আছে বাখরখানির সাধারণ তাপমাত্রায় এই রুটি প্রায় মাসখানেক পর্যন্ত ভাল থাকে রমজান মাস এবং অন্যান্য সময়ে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বাখরখানি বিক্রি হয় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর এই রুটির পেছনে আছে নানা গল্প 

আগা বাখর নামে এক তুর্কি ক্রীতদাসকে কিনে নেন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ বাখরের বুদ্ধি, শারীরিক শক্তি ও কুশলতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে লেখাপড়া ও সমরবিদ্যায় শিক্ষিত করে তোলেন তারপর যুবক বাখরকে সুবেদার পদে নিয়োগ করেন বাখরের নামানুসারে ‘বাখরগঞ্জ’ (বরিশাল) জেলার উৎপত্তি বলে গল্পকথা চালু আছে ‘খানি’ নামের এক নর্তকীর প্রেমে পড়েছিলেন বাখর তাঁর প্রতিদ্বন্দী ছিলেন উজির জাহান্দার খাঁর পুত্র কোতোয়াল জয়নাল খাঁ দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়তে থাকে একদিকে প্রধানমন্ত্রী পিতা ও অন্যদিকে নিজে কোতোয়াল হওয়ার সুবাদে নবাবের কান ভারি করতে ও বাখরকে অপরাধী সাব্যস্ত করতে বেগ পেতে হল না জয়নালকে মুর্শিদকুলি খাঁ বাখরকে শাস্তি হিসাবে বাঘের খাঁচায় ছুঁড়ে ফেলার আদেশ দিলেন খাঁচার মধ্যে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে তাকে ঘায়েল করে বেরিয়ে এলেন বীর বাখর ওদিকে কোতোয়াল জয়নাল খাঁ নর্তকী খানি বেগমকে অপহরণ করে দুর্গম চন্দ্রদ্বীপে নিয়ে যায় বাখর সেখানে রণসাজে উপস্থিত হলে কোতোয়াল খানি বেগমকে হত্যা করে নিজে আত্মঘাতী হয় আগা বাখর বিমূঢ় হয়ে বসে রইলেন প্রেমের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে আগা ‘বাখরখানি’ নামের রুটি বানালেন ঝলসানো চাঁদ ও জীবন্ত রুটি একাকার হয়ে গেল   

Bakarkhani
তৈরি হচ্ছে বাখরখানি। ছবি সৌজন্য – wikipedia.org

রুটি মানুষের জীবনে এক অমোঘ বস্তু সংসারে যিনি খাবার খরচ উপার্জন করেন তাঁকে ‘ব্রেড আর্নার’ বলা হয় ‘রুটি’ নিছক রুটি নয়, তা হল জীবন ক্ষুধার চেয়ে ব্যবহারিক সত্য আর নেই, তেমনি আহারের তুলনায় পরমার্থ সৎ আর কিছু হয় না শরীরের উপর দিয়ে নির্মম রাষ্ট্রের পেষণ চললে, থেঁতলে দিলেও মানুষ তার রুটি ছাড়ে না রুটির জন্যই বেঁচে থাকা বাঁচার জন্য রুটি চাই কাজেই রুটি বানানো মুখের কথা নয়। 



কী কী লাগবে বাখরখানি বানাতে?

১। সূক্ষ্ম ময়দা— ১০০ গ্রাম
২। ঘি— প্রয়োজনমাফিক
৩। চিনি— প্রয়োজনমতো
৪। নুন—প্রয়োজনমাফিক
৫। ১/২ চামচ (ছোট) এলাচ গুঁড়ো
৬। ডিম— ২টো
৭। শুকনো ইস্ট— প্রয়োজনমাফিক
৮। তিল বা পোস্ত (উপরে ছড়ানোর জন্য)— এক চামচ (ছোট)
৯। দুধ-ময়দা মাখতে যতটুকু লাগবে।



পুরাণ অনুসারে, পৃথিবীতে মানুষের প্রথম খাদ্য ছিল রুটি
পুরাণ বলে, এই পৃথিবীর প্রথম নর হল আদম ও এবং প্রথম নারী ইভ বা বিবি হবা বাইবেল অনুযায়ী, ইভকে আদমের পাঁজরের হাড় থেকে বানানো হয়, আদমের একাকীত্ব কাটানোর জন্য অর্থাৎ সৃষ্টির উৎস থেকেই নারী পুরুষনির্ভর এবং তার মনোরঞ্জনের উদ্দেশে তৈরি সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয়, নারীর আত্মা নেই অবশ্য সব সেমীয় ধর্মে এমন কথা নেই যদিও বাইবেলের কথা ধরে এবং কিছু হাদিসকে অবলম্বন করে মৌলবিরা এমন বয়ান দিয়ে থাকেন ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরানের চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম ভার্সে রয়েছে– People, be mindful of your Lord, who created you from a nafsun wahida, and from it created zawjaha and from the pair of them spread countless men and women. বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায়, “হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন নফসুন ওয়াহিদা থেকে, এবং সেই নফসুন ওয়াহিদা থেকে বানিয়েছেন যওজাহা এবং সেখান থেকে অগণিত নর ও নারী।”

বহু ব্যাখ্যাকার বলেন, নফস ওয়াহিদা হল আদম, প্রথম পুরুষ এবং যওজ হল ইভ বা হবা, প্রথম নারীকিন্তু মজার কথা হল, নফস স্ত্রীলিঙ্গ এবং যওজ পুংলিঙ্গ। তবে কি হবা বিবি থেকে আদমের সৃষ্টি? ‘নফস’ শব্দের অর্থ হল আত্মা এবং যওজ হল জুড়ি। আত্মা থেকে জুড়ি (হবা ও আদম) তৈরি হয়েছে, এমন ব্যাখ্যাও করা যায়ইডেন গার্ডেন থেকে বিতাড়িত হয়ে আদম নামলেন কোথায়? ইভ বা হবা বিবিই বা নামলেন কোথায়? কী খেলেন তাঁরা? পুরাণ বলছে, রুটি। এবং খুব সন্তর্পণে মিথ পড়লে বোঝা যাবে, সেই রুটি আসলে ছিল বাখরখানি—তবে তার নাম কী ছিল, তা বলা মুশকিল।

Bakarkhani
পাকিস্তানে তৈরি চিনি আর তিল ছড়ানো মিষ্টি বাখরখানি। ছবি সৌজন্য – pakistani-cuisine.com

পুরাণ বলে, সদাপ্রভু হবা এবং আদমকে শব্দার্থ শিখিয়েছিলেন। পৃথিবীতে আদম প্রথম পা রাখলেন শ্রীলঙ্কার শ্রীপাদ নামক এক পাহাড়চূড়ায়, যা আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ‘অ্যাডাম’স পিক’ নামে খ্যাত হবা বিবি নেমেছিলেন সৌদি আরবের জেড্ডায় দেবদূত জিব্রাইল তাঁদের দু’জনকেই বলদ-গাভী দিলেন, দিলেন গমের বীজ এবং শেখালেন তা চাষ করার কৌশল তাঁরা গম থেকে আটা বানালেন, কিন্তু আগুন কোথায় পাবেন? দোজখ থেকে আগুন আনা হল। সেই অগ্নি রহমতের সাগরে সাত বার ধুয়ে জ্বালানির কাজে ব্যবহার হল রুটির পর মাংস রান্না, ঘর বানানো সব শিখে নিলেন তাঁরা। দু’জায়গায় যে যার নিজের মতো করে

ইবনে আব্বাস বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে আদমের প্রথম খাদ্য ছিল গম গম থেকে আটা, তার পর তা থেকে খামির প্রস্তুত করে রুটি বানালেন আদম কোরানের একাদশ অধ্যায়ে আছে তন্নূর নামক চুল্লির কথা দীর্ঘ বিরহ চলল আদম ও ইভের অবশেষে অ্যাডাম’স ব্রিজ তৈরি হল জিব্রাইলের মাধ্যমে সেই সেতু দিয়ে পার হয়ে আদম প্রবেশ করলেন আজকের তামিলনাড়ুতে, তার পর খোদার নিজস্ব দেশ কেরল, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাত হাঁটছেন তো হাঁটছেন, নিজের পরিবারের জন্য একাকী কী করে থাকা সম্ভব? পৃথিবী নামক বস্তুতে রুটির পাশাপাশি প্রয়োজন আপনজনের সান্নিধ্য অবশেষে আজকের পাকিস্তান, ইরান, ইরাক হয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারলেন আদম ইভের সঙ্গে মিলন হল আদম শিকার করে আনেন, ইভের রান্নাঘরে পাক হয়  

তাঁরা কি পুনরায় ফিরে এসেছিলেন শ্রীলঙ্কায়? নাকি আদম থেকে গিয়েছিলেন ঘর-জামাই হয়ে সৌদিতে? সে কথা সুস্পষ্টভাবে পুরাণ না বললেও বহু নিদর্শন ছড়িয়ে রেখেছে শ্রীলঙ্কার আদম চূড়া, আদম সেতু ছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশের অযোধ্যায় রয়েছে পৌরাণিক শিস বা সেঠ (আদমের তৃতীয় পুত্র)-এর দরগা, অযোধ্যায় রয়েছে নোয়া বা নুহ-র দরগা। নুহ বা নোয়া (হিন্দু পুরাণে মনু) মহাপ্লাবন থেকে জগতকে রক্ষা করেন মনুকে ‘অযোধ্যা নগরী’-র প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়মনুর অনেক পরে রঘুর জন্ম। তার বহু পরে রামচন্দ্রের।

Bakarkhani
শিরমল হল নানা ধরনের বাখরখানির মধ্যে সবচেয়ে নামকরা। ছবি সৌজন্য – facebook.com

রামরাজ্যে রুটির অভাব হয় না। আদমের কাছে রুটি (পড়ুন, বাখরখানি) বানানোর সব উপকরণ ছিল। যেমন, গমের আটা, দুধ, দই, ঘি, আগুন, জল। কিন্তু খামির বানাতে গেলে ইস্ট লাগে, নিদেনপক্ষে তাড়ি। দই থেকেও হতে পারে খামির। খোদা তাঁকে রুটি সেঁকার কৌশল বাতলে দিয়েছিলেন (আল-তাবারি, দ্য হিস্ট্রি অব আল-তাবারি, নিউ ইয়র্ক: স্টেট য়ুনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক প্রেস, ১৯৮৯)  



কী ভাবে বানাবেন বাখরখানি?

ময়দা, ঘি, চিনি, নুন, এলাচ গুঁড়ো, ডিম ও ইস্ট নিন একটা গামলায়। অল্প অল্প দুধ দিয়ে মাখতে থাকুন। চার পাঁচ মিনিট মাখার পর খামিরটিকে ভাল করে ঢেকে এক ঘন্টার জন্য রেখে দিন। এর পর রুটি বানানোর মতো গোলাকার লেচি করুন। গোল করে বেলে তার উপরে ঘি দিয়ে ভাঁজ করুন। অর্ধবৃত্তাকার রুটির উপর আবার একটু ঘি বুলিয়ে ভাঁজ করলে ত্রিভুজ পাবেন। ত্রিভুজকে ভাঁজ করে গোল করে সাধারণ রুটির মতো বেলুন। সেঁকে নিন কম আঁচে। বেকিং ট্রেতেও করা যায়। রুটির উপরে অল্প ঘি দিয়ে তিল বা পোস্ত ছড়িয়ে দিন। গরম গরম খেলে ভাল লাগবে। পরে খেলে অল্প গরম করে নিয়ে খেতে পারেন। চা দিয়ে, মাংস দিয়ে কিংবা সাধারণ ব্যঞ্জন দিয়ে এই রুটি অপূর্ব লাগে খেতে। কেউ কেউ এমনি-এমনি মানে শুধু-শুধু খেয়ে থাকেন। 



হবা বিবি ও আদম রুটি খেয়ে ভালোই ছিলেন, গোল বাধল পুত্র কাবিল বা কেইনকে নিয়ে। সে যদিও কৃষিজীবী, কিন্তু একদিন সে খুন করে ফেলল পশুপালক ভাই হাবিল বা এবেলকে
তার পর চলে গেল কোথায় কে জানে! আদমের মনে পড়ে শয়তানের কথা, যে শয়তান তাঁকে ও হবা বিবিকে সন্দেহ করতে শিখিয়েছিল, বলেছিল, কেন বিনা বিচারে মেনে নেবে খোদার হুকুম, ওই যে জ্ঞানবৃক্ষের ফল! ওটা খাও তার পর আদম ও হবা বিবির স্বর্গ থেকে পতন, পৃথিবীতে আসা এবং রুজিরুটির জন্য লড়াই সে লড়াই সুদীর্ঘ কালের 

One Response

  1. জাকারিয়া স্ট্রিট এ কিন্তু এই বস্তু কে বাকরখানি বলে না। শুধুই রুটি বলে , মোমিনপুর বাজারে এক বাঙালী মুসলমানের দোকানে সকালে গেলে যে বাকরখানি মেলে সেটা একেবারে আলাদা। গোল্ডেন সিরাজ এ বাকরখানি দেওয়া হতো একরকম পাঁপড়ের মধ্যে ছানা ঢুকিয়ে। অর্থাৎ কলকেতা শহরেই বিভিন্ন জায়গায় বাকরখানি বিভিন্ন রূপ। যাই হোক সবগুলোই বেশ স্বাদু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com