১। এই ওমিক্রন বিষয়টি কী?
উঃ এক কথায় বলতে গেলে এই ওমিক্রন হল সার্স-কভ-দুই ভাইরাস (যা কোভিভ-১৯ রোগটির জন্য দায়ী)-এর এক ধরনের ভ্যারিয়েন্ট বা প্রকার যার বৈজ্ঞানিক নাম B.1.1.529 দেওয়া হয়েছে।
উঃ গত ৯ই নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় এক কোভিভ সংক্রমিত রোগীর দেহ থেকে সংগৃহীত নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিল। গত ২৪শে নভেম্বর ২০২১ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার তরফ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে প্রথমবার এই বি ৫২৯ ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে জানানো হয়। গত ২৬শে নভেম্বর ২০২১ তারিখে এই টেকনিক্যাল গ্রূপে এই B.1.1.529 নিয়ে আলোচনা হয়। টেকনিক্যাল গ্রূপ এটিকে “ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন” বলে চিহ্নিত করেন।
৩। এই ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন বিষয়টি কী?
উঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল এডভাইসরি গ্রুপ দুটি সংজ্ঞা প্রস্তুত করে রেখেছেন সার্স-কভ-টু ভাইরাসের এভলিউশন বা বিবর্তন সম্পর্কেঃ (ক) ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট এবং (খ) ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন।
সার্স-কভ-টু “ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট” হল সার্স-কভ-টু ভাইরাসের সেই প্রকার যার মধ্যে:
- সেই সব জিনগত পরিবর্তন আছে যার ফলে ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যগুলি প্রভাবিত হয় যেমন সংক্রমণ বিস্তারের ক্ষমতা, রোগের গুরুতর আকার ধারণ করার সম্ভাবনা, ইমিউন এসকেপ, ডায়াগনোসটিক বা থেরাপিউটিক এসকেপ এবং
- একাধিক দেশে তাৎপর্যপূর্ণ গোষ্ঠী সংক্রমণ বিস্তার অথবা একাধিক কোভিভ-১৯ ক্লাস্টার সহ ক্রমবর্ধমান আপেক্ষিক বিস্তার ও সময়ের সাথে কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি অথবা মহামারী বিজ্ঞানের প্রতিভাত অভিঘাতের কারণ হিসেবে যা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে যার জন্য বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের বিপদ জন্ম নিতে পারে।
সার্স-কভ-টু “ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন” হল সার্স-কভ-টু ভাইরাসের সেই প্রকার যা ওপরে উল্লেখিত “ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট” এর সংজ্ঞা মেনে চলছে এবং তুলনামূলক মূল্যায়ণ পদ্ধতির মাধ্যমে দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের নিম্নলিখিত পরিবর্তনের সাথে যুক্ত:
- রোগ বিস্তার ক্ষমতায় বৃদ্ধি অথবা কোভিভ-১৯ এর মহামারীতত্বে ক্ষতিকর পরিবর্তন অথবা
- ভিরুলেন্স বা মারণক্ষমতা বৃদ্ধি অথবা রোগের উপসর্গ-লক্ষণ এর পরিবর্তন অথবা
- জনস্বাস্থ্যমূলক এবং সামাজিক নিদানগুলির কার্যকারিতা হ্রাস অথবা চালু ভ্যাকসিন, রোগ নির্ণয় বা রোগনিরাময়-এর নিদানগুলির কার্যকারিতা হ্রাস।
৪। ওমিক্রন এর সংক্রমণ বিস্তারের ক্ষমতা কেমন?
উঃ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সহ সার্স-কভ-টু ভাইরাসের অন্যান্য প্রকারগুলির তুলনায় এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর বিস্তার ক্ষমতা বেশি না কম – বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু জায়গায় এই ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমিত রুগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান কিন্তু মহামারীতাত্ত্বিক গবেষণা সম্পূর্ণ না হলে এ নিয়ে বলা যাচ্ছে না।
৫(ক)। রোগের গুরুতর আকার ধারণ করার সম্ভাবনা কতটা ?
উঃ এই ওমি ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত রোগীর রোগ অন্য ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণের তুলনায় বেশি গুরুতর আকার ধারণ করবে কিনা- বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার বেড়ে গেছে। কিন্তু সেটা সবমিলিয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে নাকি ওমি-র দৌলতে – সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না।
৫(খ)। এই ক্ষেত্রে রোগ লক্ষণ-উপসর্গ কতটা আলাদা ?
উঃ রোগ লক্ষণ-উপসর্গ আলাদা হওয়ার কোনও নিদর্শন আসেনি এখনও। প্রাথমিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল – অল্পবয়সী যাদের এমনিতেই রোগ লক্ষণ মৃদু হয়। রোগের গতিপ্রকৃতি বুঝতে কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ লাগবে। ততদিন সতর্কতা মেনে চলার কোনও বিকল্প নেই।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সহ সার্স-কভ-টু ভাইরাসের অন্যান্য প্রকারগুলির তুলনায় এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর বিস্তার ক্ষমতা বেশি না কম – বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু জায়গায় এই ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমিত রুগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান কিন্তু মহামারীতাত্ত্বিক গবেষণা সম্পূর্ণ না হলে এ নিয়ে বলা যাচ্ছে না।
৬। এক্ষেত্রে আগে থেকে টিকা নেওয়া থাকলে তার কার্যকারিতা কতটা?
উঃ প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এটা বলা যায় যে যার আগে একবার সংক্রমণ হয়েছে যার আরেকবার সংক্রমিত হওয়ার (রিইনফেকশন) সম্ভাবনা এক্ষেত্রে বেশি। ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে গুরুতর আকারের রোগ ও মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা কম।
৭। এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের জন্য চালু টেস্ট বা পরীক্ষানিরীক্ষা কতটা কার্যকর ?
উঃ বহুল ব্যবহৃত RTPCR টেস্ট এক্ষেত্রেও সমানভাবে কার্যকর। রেপিড এন্টিজেন টেস্ট সহ অন্যান্য টেসটের ক্ষেত্রে ওমি কি প্রভাব ফেলবে সেটা নিয়ে গবেষণা চলছে।
৮। চালু চিকিৎসা পদ্ধতি এক্ষেত্রে কতটা কার্যকর ?
উঃ গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ও IL6 Receptor ব্লকার একই রকম কাজ করবে। অন্যান্য চিকিৎসাপদ্ধতিগুলি কেমন কাজ করবে তার মূল্যায়ন চলছে।
৯। আমাদের কী করণীয় ?
উঃ আলাদা করে এই মুহূর্তে জনসাধারণের বিশেষ কিছু করণীয় নেই। তারা অযথা আতংক ছড়াবেন না। টিকাকরণ কর্মসূচিতে ভাগ নেবেন, কোভিভ আদর্শ আচরণবিধি মেনে চলবেন। সরকারি বিভিন্ন দপ্তর দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে রোগের সার্ভালেন্স বা নজরদারি ব্যবস্থা আরো জোরালো করার চেষ্টা করবেন, সময়ে সময়ে জন সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য হাল নাগাদ তথ্য অনুযায়ী কর্মসূচি নেবেন।