banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরি

প্রান্তিক বিশ্বাস

মার্চ ৬, ২০২৪

Travelogue on John Rylands library
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

“লাইব্রেরি!”(Library)

আমার জার্মান (German) কলিগ আর্মিনের দুচোখে অপার বিস্ময়। ওর প্রশ্ন ছিল এখান থেকে আমি হোটেলে না ফিরে কোথায় যাব।

আজ ১৪ই ডিসেম্বর, ২০১৮, শুক্রবার, দুপুর একটা। ইংল্যান্ডের (England) ম্যানচেস্টারে (Manchester)  যদিও তাপমাত্রা এক থেকে চার ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, কিন্তু সকাল থেকেই দিনটা খুব ঝলমলে। চড়া রোদেও জবর ঠাণ্ডা। আজকেও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। আগের সপ্তাহে মিউনিখে ছিলাম। অফিসের একটা কঠিন প্রকল্পের রূপায়ণে দু’জনেই গত শুক্রবারে ম্যানচেস্টারে (Manchester) পৌঁছেছি। পাঁচদিনের ওয়ার্কশপের আজ শেষদিন। অফিসের কাজ একটু তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ার মুখে, হাতে কিছুটা সময় আছে। আমাদের অফিস ওরসলির প্রিস্টলি রোডে, ম্যানচেস্টারের (Manchester) উত্তর-পশ্চিম শহরতলিতে। হোটেল নোভোটেলও কাছেই, মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে, শহরমুখী।  

ঠিক করলাম হোটেলে না ফিরে সোজা ঢুঁ মারব ম্যানচেস্টার (Manchester) সিটি সেন্টারে। সেখানে ঝটিকা সফরে কিছু টুকটাক কেনাকাটা করার আগে ঘুরে দেখব জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরি (John Rylands library)। বিকেল পাঁচটা অবধি খোলা।

“ওখানে কী দেখার আছে?”

“ওয়েল, দ্য অনেস্ট আনসার ইজ – আমি জানি না। তবে ‘ট্রিপ অ্যাডভাইজার’ বলছে খুব ইন্টারেস্টিং। ওদের র‍্যাঙ্কিংয়ে এটা ম্যানচেস্টারের এক নম্বর অ্যাট্রাকশন!”

“বল কি! গুড লাক দেন…কাল সকালে ব্রেকফাস্টে দেখা হবে।”

আর্মিনের ফ্লাইট কাল বিকেলে, আমারটা রাতে। তাই কালও দুপুর অবধি একটু ঘোরার ইচ্ছে আছে। কেনাকাটা, প্যাকিং শেষ করে রাখতে হবে রাতেই।

আমার ইংরেজ কলিগ র‍্যাচেল হাফ-ডে করে বাড়ি ফিরছিল। ওর গাড়িতেই একটু উজিয়ে এসে একটা লাল ডবল ডেকার বাসে উঠলাম। ফাঁকা বাস, ড্রাইভারের কাছ থেকে টিকিট কাটলাম। এখানে কনডাক্টর থাকে না। ড্রাইভারের সিট ডানদিকে, আমাদের দেশের মতন। তার বাঁপাশে একটা কন্টাক্টলেস টিকিট-ভেন্ডিং মেশিন, ওখানে ট্র্যাভেলার্স কার্ড ছুঁইয়ে আমি দু’পাউন্ডের টিকিট নিলাম। একেবারে টার্মিনাসে নামব – ম্যানচেস্টার সিটি সেন্টার বা আর্ন্সডেল। 

বছরের এই সময়ে বিকেল চারটেয় সূর্যাস্ত হয়। সন্ধ্যে নামার আগে আকাশ বেশ লালচে। যে রাস্তাগুলো দিয়ে গেলাম, দেখলাম বেশ ছিমছাম। ছোট ছোট লালচে বাদামি বা সাদা রঙের দোতলা বা তিনতলা টালিছাওয়া, চিমনিওলা বাড়ি। সামনে ছোট ছোট বাগান আর গ্যারেজ। শহরে ঢুকতেই পেল্লায় পেল্লায় পুরনো আর নতুন বাড়ির মিশেল। আমি বরাবরই কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে একটু গুগল করে দেখে নিই গন্তব‍্যস্থল আর তার দ্রষ্টব্য স্থানগুলো – এবারে জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরি হিসেবের বাইরে থাকায় ওটার সম্পর্কে কিছু জানা হয়নি। 

ম্যাঞ্চেস্টারের (Manchester) আবহাওয়া খুবই খামখেয়ালি। হঠাৎই আকাশ পাঁশুটে হয়ে টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হল। আমি ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বার করে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে ব্যাগে ঢোকালাম, বার করলাম রেন-জ্যাকেটটা।

John Rylands library photo
জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরি - ব্রিটেনের অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি

বাস থেকে নেমে গুগল ম্যাপের ডিরেকশন মেনে সহজেই গন্তব্যে পৌঁছলাম। এই জায়গাটার নাম ডিন্সগেট। বিশাল চারচৌকো বাড়ি। প্রকৃতির ঝিমিয়ে পড়া আলোয় বুঝলাম, যে পাথর দিয়ে বাড়িটার বাইরের দেওয়াল তৈরি সেটা হাল্কা বাদামি। স্থাপত্য স্পষ্টত নিও-গথিক। প্রথমত এটা অপ্রতিসম – বেশিরভাগটা চারতলা, বাঁদিকের একটা অংশ একটু এগোনো। ডানদিকটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। মাঝখানে একটু পরেই  একটা টাওয়ার উঠেছে । তার ডানদিকের অংশে দুটো তলা, কিন্তু উচ্চতায় বাঁদিকের তলাগুলোর থেকে বেশি। এদিকের মাথায় পশ্চিমদেশের দুর্গশীর্ষে থাকা নজররক্ষীদের ঘরের মতো দুটো ঘর। 

দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য, খাড়া ফ্রেমে কারুকার্য করা ত্রিকোণ প্রান্তগুলো। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হল আলম্ব বা দেওয়ালের ঠেকনোগুলোর উচ্চতা, প্রায় বাড়ির সমান। ছোট জানলার কারণে, গথিক স্থাপত্যে্র ভেতরটা একটু স্যাঁতস্যাঁতে আর অন্ধকার হত। নিও-গথিকে এই আলম্বগুলোর দৌলতে এক একটা তলা আর জানলাগুলো বেশি উচ্চতার। এই বাড়িটা আর রঙিন জানলাগুলো দেখে অনেকেই বাড়িটাকে চার্চ বলে ভুল করতে পারে।

John Rylands library interior
অনেকেই বাড়িটাকে চার্চ বলে ভুল করতে পারে

ভেতরে পা দিতেই একটা অদ্ভুত, অব‍্যক্ত অনুভূতি হল। বাসে ইন্টারনেট খুলে যে লিঙ্কটা প্রথম দেখেছিলাম তাতে বলা ছিল যে এই লাইব্রেরির মেজানাইন ফ্লোরে কেউ কেউ ভূত দেখেছে। অনেকের দাবি, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতেও নাকি ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়। এখানেও হয়ত কারোর সেরকম কিছু মনে হয়েছে। যাইহোক, প্রায় চল্লিশ লক্ষের ওপর মুদ্রিত বই, পাঁচ লক্ষের ওপর ই-বই আর চল্লিশ হাজারেরও বেশি ই-জার্নালের দৌলতে এটা এখন ব্রিটেনের অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি। 

একতলাটা বেশ নিচু, প্রথম চত্বরটায় কোন জানলা নেই। যেন একটা সুড়ঙ্গে প্রবেশ করছি। দু’পাশের দেওয়ালে মাঝে মাঝে পিলার, সেগুলোর মাথা আর্চের আকারে মিশে গেছে সিলিংয়ের কারুকার্যে। সিলিং যেন শিরা আর তার উপশিরা ছড়িয়ে পড়েছে দেওয়ালে। কারুকার্যের মধ্যে উল্লেখ্য হল, প্রত‍্যেকটা শিরা-উপশিরার মিলনস্থলে ড্রাগনের আধিক্য। কয়েকটা জায়গায় অবশ্য মানুষের মুখের আদলের মুখোশও আছে।

John Rylands library first floor
যেন একটা সুড়ঙ্গে প্রবেশ করছি

ভেতরে আলো কম, অন্ধকার বেশি। দেওয়ালের পাথরের রঙ বালির রঙের থেকে গাঢ়, গোলাপির কোনও একটা শেড। হলুদ আলোয় জায়গাটা আধো মায়াবী। আমার সাথে সাউথ ইস্ট এশিয়ার কয়েকজন প্রবেশ করল লাইব্রেরিতে, তাদের সঙ্গে পা মিলিয়ে এগোলাম। কোনও টিকিট লাগে না, কিন্তু পুরোনো কোনও মুদ্রিত বই পড়তে হলে আগেই আবেদন করতে হয়। 

একতলার রাস্তা এঁকেবেঁকে ওপরে ওঠার চওড়া সিঁড়িতে গিয়ে মিশেছে। বাড়ির ভেতরটা দেখে আমার হ্যারি পটারের হগওয়ার্টসের কথা মনে পড়ছিল। যেন হ্যারি, রন আর হার্মাওনি-র সাথে হগওয়ার্টস গ্রেট হল-এ খাবার খেতে যাচ্ছি! এডিনবরার ক্যাসল বা অন্যান্য প্রাচীন বাড়ি থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই লেখিকা জে কে রাউলিং হগওয়ার্টস সৃষ্টি করেন জনমানসে। আমি এডিনবরা গেছি, কিন্তু হগওয়ার্টসের সাথে এই লাইব্রেরির মিল অনেক বেশি। ব্রিটিশ জৌলুসের ছাপ এই বাড়ির প্রতিটা কোণে। পরে কারণটা জানলাম ইন্টারনেট ঘেঁটে। হ্যারি পটারের প্রথম ফিল্ম বানানোর আগে তার ডিরেক্টর দলবল নিয়ে অনেকবার এসেছেন এই লাইব্রেরিতে। ছবি, ভিডিও তুলেছেন শ’য়ে শ’য়ে, ফিল্মের সেট সেকারণেই অনেকটা ঐ আদলেই তৈরি হয়েছে। 

John Rylands library - British architecture style
ব্রিটিশ জৌলুসের ছাপ এই বাড়ির প্রতিটা কোণে

সিঁড়ি দিয়ে যত উঠছি ততই টের পাচ্ছি একটা গন্ধের আধিক‍্য। হালকা স্যাঁতসেঁতে, পুরনো জিনিসের গন্ধ। কোনভাবেই সেটাকে কটু বলা যায় না, কিন্তু একটু যেন অন‍্যরকম, হালকা অস্বস্তির। দোতলায় মেন রিডিং রুমে ঢোকার দরজা দেখে চক্ষু চড়কগাছ। কাঠের কারুকার্য নয়নমনোহর‌। দরজার হাতলগুলোও এত সুন্দর যে আমি ওগুলোরই খান দুয়েক ছবি তুলে ফেললাম। দরজা দিয়ে ঢুকে যা দেখলাম – আগে কখনো দেখিনি। সিলিং প্রায় তিরিশ ফিট উঁচু। মেঝে  লম্বায় কম করে দুশো ফিট আর চওড়া কমবেশি তিরিশ ফিট হবে। ডিন্সগেটের গাড়িঘোড়ার কর্কশ আওয়াজ থেকে এই রিডিং রুম এমনভাবে আড়াল করা যে যতক্ষণ ছিলাম দুটো কানের পুরোপুরি বিশ্রাম। 

John Rylands library reading room
রিডিং রুমের বুক চিরে রাখা সারিবদ্ধ টেবিল, তার ওপর কাচের ঘেরাটোপে রাখা দুষ্প্রাপ্য বই আর পুঁথি

মজার ব্যাপার হল, জন কুড়ি ট‍্যুরিস্ট আর জনা দশেক পাঠক-পাঠিকা প্রায় নিঃশব্দে ভাব বিনিময় করছে – অথচ কোথাও লেখা নেই ‘সাইলেন্স প্লিজ’। রিডিং রুমের বুক চিরে রাখা সারিবদ্ধ টেবিল, তার ওপর কাচের ঘেরাটোপে রাখা দুষ্প্রাপ্য বই আর পুঁথি। দু’পাশে পাতা লাল কার্পেট। কার্পেট পেরোলে হলের দু’পাশেই নিরিবিলিতে পড়ার ছোট ছোট ঘেরা জায়গা – এরা বলে অ্যালকোভ,  তাতে বেড় দিয়ে আছে বইয়ের আলমারি আর মাঝে চেয়ার টেবিল। সুদৃশ্য ল্যাম্পশেডে জ্বলছে মৃদু হলুদ আলো, বই পড়ার পক্ষে যথেষ্ট। একধারে ফুট পাঁচেক উঁচু জানালা আছে, ওপরে কাচের কাজ বিমুগ্ধ করবেই। এই অ্যালকোভগুলোয় ঢোকার আর্চ গিয়ে মিশেছে দোতলার বারান্দার কারুকার্যে ভরা পাথরের রেলিংয়ে। একটু গলা উঁচু করলে নজরে আসে দোতলার এই মেজানাইন ফ্লোরেও অ্যালকোভের সারি।  

রিডিং রুমের দু’প্রান্তে দুটো সাদা মূর্তি – একদিকে জন রাইল্যান্ডস অন্যদিকে এনরিকেতা অগাস্টিনা রাইল‍্যান্ডস, ওঁর তৃতীয় স্ত্রী। তাঁদের মূর্তির পেছনে রঙিন কাচের জানলায় দু’সারিতে সেকালের কুড়িজন বিখ‍্যাত ধর্মীয় নেতা ও শিক্ষাবিদদের প্রতিকৃতি। এরকম সূক্ষ্ম কাচের কাজ, ইউরোপের বিখ্যাত চার্চগুলোর জানালাতেই দেখা যায়। 

John Rylands library book shelf
ঘুরে ঘুরে দেখলাম বইয়ের তাকগুলো

ঘুরে ঘুরে দেখলাম বইয়ের তাকগুলো। কিছু কিছু বইয়ের তারিখ দেখলাম ষোড়শ শতাব্দীর। দ্য ভিঞ্চির ‘ইল কডিস অ্যাটল্যান্টিকো’-র বারোটা ভল‍্যুম দেখলাম। ১৭৯৮ সালে ছাপা জর্জ ফর্স্টারের লেখা ‘এ জার্নি ফ্রম বেঙ্গল টু ইংল্যান্ড’ আছে। এখানকার সবথেকে বিখ্যাত পুঁথি নয় বাই ছয় সেন্টিমিটারের এক টুকরো প্যাপিরাস – দ্বিতীয় শতাব্দীর সেন্ট জন ফ্র্যাগমেন্ট। সেটার সামনের আর পেছনের ছবি, কাচে বাঁধানো। 

একটা অ্যালকোভে দেখি দুজন যুবতী মাথায় উনিশ শতকের ইংলিশ হাই হ্যাট বা বিভার হ্যাট মাথায় দিয়ে টেবিলে বিশাল এক মধ্যযুগীয় বইয়ের ডামি খুলে মুচকি হাসছে। পিছিয়ে গেলাম এক শতাব্দী। এই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি না করে থাকা যায় না। কাছে গিয়ে ছবি তোলার অনুমতি চাইলাম। সম্মতি দিল দু’জনেই। তারপরেই খিলখিল করে হেসে উঠল দু’জনে, আমার ক্যামেরা-শাটারের ক্লিক ক্লিক আওয়াজের সাথে তাল দিয়ে।

বন্ধ হওয়ার সময় এগিয়ে আসছে। আমি রিডিং রুমের অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে দেখলাম অপূর্ব সুন্দর এক স্থাপত্য – মাঝে এক মহিলা একহাতে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে, তার দু’পাশে দু’জন পুরুষ – একজন বৃদ্ধ, তাঁর হাতে গোলাকার কিছু একটা, অন্য পুরুষ যুবক, হাতে তার পানপাত্র। স্থাপত্যের নাম ‘Theology Directing the Labours of Science and Art’। রাইল্যান্ডস দম্পতির মূর্তির মতনই এই স্ট্যাচুর স্থপতি জন ক্যাসিডি। 

ওপরে ওঠার একটা সিঁড়ি চোখে পড়ল। লাইব্রেরি প্রায় জনশূন্য, বন্ধ হতে আর মিনিট দশেক। একটা চান্স নিলে হয় মেজানাইন ফ্লোরে ওঠার…

“দ্য মেজানাইন ফ্লোর ইজ নট ওপেন টু পাব্লিক”

পেছন ফিরে দেখি এক বৃদ্ধ। মাথায় বিভার হ্যাট, গায়ে আগেকার দিনের ওভারকোট। 

“আই সি। থ্যাংক ইউ স্যর!”

“কল মি হেনরি। আই আন্ডারস্ট্যান্ড ইয়োর কিউরিয়োসিটি। ডু ইউ নো দ্য হিস্ট্রি অফ দিস লাইব্রেরি?”

“নট ইয়েট।”

জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরিতে ভৌতিক অভিজ্ঞতার লিঙ্কটা আমি ভবিষ্যতে অনেক খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম, পাইনি। তবে অন্য একটা তথ্য পেয়েছিলাম। এই লাইব্রেরির সম্ভার বাড়ানো ও তাকে সযত্নে লালন করেন তার প্রথম লাইব্রেরিয়ান। ১৮৯৯ সালে তাঁকে বহাল করা হয়। ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছেন এখানে। তাঁর নাম হেনরি গাপি।

“বলি শোন তাহলে। জন রাইল্যান্ড ছিলেন একজন বিখ্যাত তুলোর ব্যবসায়ী। এনরিকেতা ১৮৬০ সালে জন রাইল্যান্ডসের দ্বিতীয় স্ত্রী মার্থার মাধ্যমে জনের সাথে পরিচিত হন। ওই দম্পতির সাথে মিলে তিনি বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজ করতেন। ১৮৭৫ সালে মার্থা মারা গেলে জন আর এনরিকেতা বিবাহ করেন। জন ১৮৮৮ সালে প্রয়াত হলে এনরিকেতা স্থির করেন স্বামীর আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড সম্পত্তির সিংহভাগ দিয়ে তৈরি করবেন এমন একটা লাইব্রেরি, যা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিকেও টেক্কা দেবে। ম্যানচেস্টারের এই অঞ্চলের পরিবেশ তখন নোংরা, কারখানা আর হতদরিদ্র শ্রমিকদের বস্তিতে ভর্তি। তিনি এই বিশাল জায়গাটা কিনলেন, ঠিক করলেন লাইব্রেরি গড়বেন, চার্চের মতো সবার মধ্যে তা’ জ্ঞানের আলো ছড়াবে। তখনকার সবথেকে বিখ্যাত আর্কিটেক্ট বেসিল স্যাম্পনিজকে দিয়ে নকশা তৈরি করালেন, অন্যদিকে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনতে থাকলেন দুষ্প্রাপ্য পুঁথি, প্রকাশিত বই আর জার্নাল। ১৯০০ সালে যখন এটা জনগণের জন্যে খুলে দেওয়া হল তখন সংগ্রহে প্রায় চল্লিশ হাজার বই।”

Travelogue on John Rylands library
উনিশ শতকের ইংলিশ হাই হ্যাট বা বিভার হ্যাট মাথায় দিয়ে টেবিলে বিশাল এক মধ্যযুগীয় বইয়ের ডামি খুলে মুচকি হাসছে

“দ্যাটস্ রিমার্কেবল!”

“ইন্ডিড মাই ফ্রেন্ড। মজার কথা কি জান, এটাই ম্যানচেস্টারের প্রথম বাড়ি যেখানে ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহৃত হয়েছিল। সেই ইলেক্ট্রিসিটি এখানেই তৈরি হত। এনরিকেতার দুশ্চিন্তা ছিল গ‍্যাসের ব‍্যবহারে বই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বাল্ব ও তার হোল্ডারগুলো দেখে তোমার কী মনে হচ্ছে?”  

আমি এতক্ষণ ভাবছিলাম আলোকসজ্জায় কিছু একটা অভিনবত্ব আছে, কিন্তু ধরতে পারছিলাম না। এবার পারলাম!

“যেন গাছে তুলো ফুটেছে…”

“ঠিক।”

উনি কোটের পকেট থেকে একটা ট্যাঁকঘড়ি বার করে সময় দেখলেন।

ইঙ্গিত বুঝে আমিও ওঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম। 

জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরিতে ভৌতিক অভিজ্ঞতার লিঙ্কটা আমি ভবিষ্যতে অনেক খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম, পাইনি। তবে অন্য একটা তথ্য পেয়েছিলাম। এই লাইব্রেরির সম্ভার বাড়ানো ও তাকে সযত্নে লালন করেন তার প্রথম লাইব্রেরিয়ান। ১৮৯৯ সালে তাঁকে বহাল করা হয়। ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছেন এখানে। তাঁর নাম হেনরি গাপি।

প্রান্তিক বিশ্বাসের জন্ম কলকাতায়। স্কুলে থাকতে লেখা শুরু। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ পর্যন্ত কালান্তর সংবাদপত্র, সময় ও গ্রন্থন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় গল্প, কবিতা ও রম্যরচনা। তারপর ২০০০ সাল থেকে দীর্ঘ পনেরো বছরের বিরতি লেখায়। ফিরে আসা ছোটগল্প, অণুগল্প, নিবন্ধ ও উপন্যাসে। তথ্যপ্রযুক্তির কর্মী, বর্তমানে কর্মরত কলকাতায়। লেখা ছাড়া ঘুরতে, ছবি তুলতে আর আঁকতে ভালোবাসেন।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com