banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

মেগাস্থিনিসের ভারত

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Megasthenes - historical character

নিজের বইয়ের শুরুতেই পইপই করে বলে দিয়েছিলেন মেগাস্থিনিস, “ভারত নিয়ে এর আগে যা যা গল্পকথা শুনেছ, তাতে বিশ্বাস কোরো না। তাঁদের অধিকাংশই গুল্পকথা।” গ্রিকরা স্বভাবতই গোপ্পে জাত। গল্প বলতে আর শুনতে ভালবাসে। তাই তাঁদের বর্ণনায় বাড়াবাড়ি একটু থাকবেই। তাতে দোষের কিছু নেই। মেগাস্থিনিস চেয়েছিলেন সেসব কেউ যেন মনে না রেখে তাঁর লেখাটা সিরিয়াসলি নেয়। 

ভাল কথা। এদিকে আর এক গ্রিক ঐতিহাসিক স্ট্রাবোঁ একেবারে গোটা গোটা অক্ষরে লিখে গেছেন, “ভারতবর্ষ নিয়ে আজ পর্যন্ত যত গ্রিক যা যা লিখে গেছেন তাঁদের সবাই মিথ্যেবাদীর দল।” আর এই দলের লিস্টে একদম শুরুতে তিনি যার নাম তিনি রেখেছিলেন, তিনি আর কেউ না, এই মেগাস্থিনিস। এই দুই মতের কোনওটাকেই সম্পূর্ণ সত্যি ধরলে মুশকিল। গ্রিক ঐতিহাসিকদের অনেকেই ভারতের নামটুকু শুনেছেন, জীবনে ভারতের মাটিতে পা রাখেননি। ফলে ভারত নিয়ে অনেক সত্যি কথাও তাঁদের কাছে বাড়াবাড়ি কিংবা অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে। আবার যে মেগাস্থিনিস ভারতের নানা জায়গায় পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তিনিও কাহিনিকে আকর্ষণীয় করতে মাঝে মধ্যেই যে সত্যের অপলাপ করেননি, তাও বলা যাবে না।

কিন্তু তারপরেও মেগাস্থিনিসের গুরুত্ব অপরিসীম। তৃতীয় ও চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি ভারতে আসেন। ভারতের সেই সময় ইতিহাসের হিসেবে এক অন্ধকার যুগ। এখনও অবধি সেই সময়ের একটিও ভারতীয় ইতিবৃত্ত পাওয়া যায় না, এমনকী কোনও পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণও না। ফলে যতটুকু যা আছে, তা এই গ্রিক পর্যটকের লেখাতেই আছে, আর কোত্থাও নেই। মেগাস্থিনিসের পরের ছয়শো বছর ভারতে কী কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে যেমন কিছুই জানা যায় না। সেই সময়ের ভারত পর্দার আড়ালে ঢাকা। আবার যখন পর্দা ওঠে, দেখি পঞ্চম খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ফা হিয়েন ভারত নিয়ে লিখছেন। 

ভারত নিয়ে গ্রিকদের আগ্রহ অনেক আগে থেকে। প্রথম যে গ্রিক ঐতিহাসিক ভারত নিয়ে লেখেন তাঁর নাম স্কাইল্যাক্স। রাজা দারায়ুসের প্রতিনিধি হয়ে তিনি সিন্ধু নদ পর্যন্ত এসেছিলেন। এই স্কাইল্যাক্সই প্রথম ইউরোপের কাছে ভারতের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের কথা জানান, এবং প্রচুর আজগুবি গল্প সহযোগে। এরপরে হেরোডটাস থেকে টেসিয়াস, যারাই ভারত নিয়ে লিখেছেন, একবাক্যে এই দেশকে চরম ঐশ্বর্যশালী বলে বর্ণনা করেছেন। আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় তিনি তাই সৈন্যসামন্ত ছাড়াও বেশকিছু পণ্ডিত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আসেন, যাঁরা নিজেরা চোখে দেখে ভারতের সম্পর্কে লিখবেন। এই দলে মেগাস্থিনিস ছিলেন কিনা, তা নিয়েও অবশ্য ইদানীং সন্দেহ দেখা দিয়েছে। 

Indica-by-Megasthenes
প্রাচীন ভারতীয় চিত্রশিল্পে মেগাস্থিনিসের ভারত আগমনের ছবি

মেগাস্থিনিস লিখেছেন, তিনি পাটলিপুত্রে যখন যান, তখন সেলুকাস আর চন্দ্রগুপ্ত মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ। তা যদি হয়, তবে তাঁর ভারতে আসার সময় অনেক পরে। ৩০২ থেকে ২৮৮ খ্রিস্টপূর্বের মাঝামাঝি। তিনি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরেন, অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ভারতে থাকেন, তারপর চারটি বিশাল খন্ডে এক বই লেখেন যার নাম “ইন্ডিকা”। এই ইন্ডিকা বইটির একটা পৃষ্ঠাও আজকের দিনে পাওয়া যায় না। গোটা বই বেমালুম পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। যতটুকু যা পাই, তা পরের লেখকদের উদ্ধৃতি থেকে। এঁদের মধ্যে ডায়োডোরাস থেকে প্লিনি, সলিনাস, বা অ্যামব্রোসিয়াসের মত দার্শনিকও আছেন। তবে মেগাস্থিনিসের এই বর্ণনার অনেকটাই অন্ধের হস্তিদর্শনের মতো। ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্য আর ধরনধারণ না বুঝতে পেরে তিনি যে অংশটুকু দেখেছেন তাঁকেই গোটা ভারতের মতো করে ভেবেছেন। অনেকসময় দেখেছেন এক রকম, কিন্তু বুঝেছেন এক, আর লিখেছেন অন্য। 

অনেকসময় তিনি নিজে না দেখে অন্যদের কথা শুনেও বর্ণনা করছেন। সেই অনুবাদে অনেক শব্দের মানে বদলে গেছে একেবারে। এতসব কিছু বলার একটাই কারণ, মেগাস্থিনিসের ভারত বিবরণ অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ এক দলিল, কিন্তু কখনওই তা ১০০ শতাংশ বিশ্বাসযোগ্য না। মেগাস্থিনিসের লেখায় তখনকার ভারতের এক অন্যরকম চিত্র পাই। এই আলোচনার মুখ্য উপজীব্য মেগাস্থিনিসের চোখে দেখা সেই ভারত। আর সেটা যথাযথ বুঝতে যা করতে হয়, তা কোনও গোয়েন্দা গল্পের রহস্যভেদের চেয়ে কম না।

 

আরও পড়ুন: ডাঃ শুভায়ু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে: এক অনিঃশেষ দৌড়

 

ভারত দেশটি দেখতে অনেকটা রম্বসের মত, লিখেছেন মেগাস্থিনিস। তিনি যখন পাটলিপুত্রে যান, তখন ব্রাহ্মণদের এক সভা চলছিল। এই তথ্য থেকে মোটামুটি স্থিরভাবে বলা যায়, চৈত্রমাসে তিনি পাটলিপুত্রে আসেন, কারণ একমাত্র তখনই নতুন বছরের পঞ্জিকা বানাতে এই সভা বসত। 

মেগাস্থিনিস ভারতের কোন কোন প্রদেশ ঘুরেছিলেন, সে বিষয়ে সন্দেহ আরও কম। কাবুল নদী, পঞ্চনদের প্রবাহের একেবারে যথাযথ বর্ণনা দিয়ে তিনি লিখেছেন, এই পথ দিয়ে তিনি মধ্য ভারতে প্রবেশ করেন। পাটলিপুত্রের পর তিনি আদৌ অন্য কোথাও গেছিলেন, নাকি লোকমুখে সেসব জায়গার কথা শুনে বর্ণনা করেছেন, তাও এখন বলা প্রায় অসম্ভব। ঐতিহাসিকরাই এই নিয়ে দোলাচলে। যেমন মেগাস্থিনিস বলছেন, ভারতে ১১৮ টি জাতি আছে। ভারতের সামান্য একটা অংশ ঘুরে এত নিশ্চিতভাবে তিনি এটা কেমন করে বললেন? একমাত্র যদি না কোন ভারতীয়ের মুখে গল্প শুনে তাকে সত্যি বলে ভেবে থাকেন।

মেগাস্থিনিসের লেখাতেই আমরা প্রথম পাটলিপুত্রের পূর্বে গঙ্গারিডির নাম পেলাম। এই রাজ্যের নাকি দারুণ দুর্জয় সব রণহস্তি আছে, যে কারণে এদের কেউ আক্রমণ করে না। আলেকজান্ডার পর্যন্ত নাকি এই হাতির কথা শুনে গঙ্গারিডি আক্রমণের দুরাশা ত্যাগ করেন। গঙ্গার শেষ অংশটি নাকি এই গঙ্গারিডি দিয়ে প্রবাহিত। এই গঙ্গারিডিই সম্ভবত আজকের বাংলা। কিন্তু তার সঠিক মানচিত্র ঠিক কেমন ছিল, তা নিয়ে বিস্তর লড়াই চলছে। তিনি গোদাবরী থেকে বুড়িগঙ্গা অবধি ভূখণ্ডকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। মক্কো কলিঙ্গ, গঙ্গারিডি কলিঙ্গ, মদোকলিঙ্গ। এর সঙ্গে ছিল বহু দ্বীপ ও উপদ্বীপ। এই মধ্যবর্তী মদোকলিঙ্গের রাজধানী খুব সম্ভব ছিল তাম্রলিপ্ত, মানে আজকের তমলুক। অবশ্য অনেকে মানেন এই মদোকলিঙ্গের নাম নাকি মধ্য কলিঙ্গ, যা এখনকার দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, সাগরদ্বীপ, হাওড়া নিয়ে তৈরি। এইসব কচকচিতে না ঢুকে ভারতের মানুষ, প্রকৃতি ইত্যাদি নিয়ে মেগাস্থিনিস কী লিখছেন দেখা যাক। আমি উদ্ধৃতি দিচ্ছি শুধু। সত্যি মিথ্যে মিলিয়ে নেওয়া পাঠকের কাজ।

ভারতে নাকি এক ধরনের ডানাওয়ালা সাপ আছে। তারা রাতের বেলায় মানুষকে কামড়ালেই মৃত্যু। শুধু তাই না, এঁদের মূত্রও এত বিষাক্ত যে গায়ে লাগলে সেখানেই ঘা হয়ে যায়। সে সময় ভারতে প্রায় পাঁচ হাত লম্বা বিরাট বিরাট ল্যাজওয়ালা বাঁদর দেখা যেত। মুখ সাদা। সারা দেহ ঘন কালো লোমে ঢাকা। এরা নাকি মানুষের মতোই বুদ্ধিমান। মানুষ এদেরকে অনেকসময় ঘরে পুষত। এখন যেমন কুকুর পোষে। বুনো বানররা দুপুর হলেই একত্রে ‘লটগি’ নামে এক জায়গায় গিয়ে লাইন দিয়ে বসে যেত। রাজার আদেশে লাঞ্চে প্রতিদিন এদের ভাত, তরকারি সার্ভ করা হত। খেয়েদেয়ে শান্তভাবে আবার তারা বনে ফিরে যেত। ভাবা যায়! 

Megasthenes - historical character; Ancient India
মেগাস্থিনিসের বইয়ের একটি পৃষ্ঠাও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি

সাপের মতো মাছের ভয়ও মেগাস্থিনিসের লেখায় দেখি। সমুদ্রে নাকি ছোট একধরনের মাছ ছিল, যারা মরে গেলেই জলে ভেসে উঠত। ভুল করে এদের স্পর্শ করেছ কি মরেছ। প্রথমে অবসন্নতা, তারপর মুর্চ্ছা আর মৃত্যু অনিবার্য। ভারতের জলে নীল তিমি আর ডিঙি নৌকোর মতো বড় বড় কচ্ছপ যে মেগাস্থিনিস নিজের চোখে দেখেছেন, সে কথা ইন্ডিকাতে লিখে গেছেন একাধিকবার। আর একটা ব্যাপার দেখে অবাক হয়েছিলেন তিনি। এদেশে ঘোড়া আর গাধার মিলনে অদ্ভুত একটা প্রাণী সৃষ্টি হয়, যার মোট বহন ক্ষমতা অপরিসীম। খচ্চর শব্দটা লেখেননি। ওটা কি তাহলে তখনও গালাগালই ছিল!

ভারতের মানুষদের নিয়েও অনেককিছু লিখেছেন মেগাস্থিনিস। লিখেছেন, খাবারদাবারে ভারতীয়রা সর্বগ্রাসী। তবে তারা মিতাচারী। ভারতবর্ষে লেখালিখির ব্যাপার নেই, তারা লিখতেও জানে না। তাদের সবকিছুতেই স্মৃতিনির্ভর থাকতে হয়। এটা একেবারে খাঁটি কথা। এখনও আমরা বলতে যত ভালবাসি লিখতে তত না। আমাদের পণ্ডিতরাই বলে গেছেন শতং বদ, মা লিখ। এর ক্ষতি যে কত অপূরণীয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। যাই হোক, ভাল কথাও কিছু আছে। ভারতীয়রা নাকি অন্যায়ের দিকে ঝোঁকে না। তারা সরল ও মিতব্যয়ী— এটা তাদের সুখী জীবনযাপনের কারণ। রাতে চুরির ঘটনা বিরল। চন্দ্রগুপ্তের শিবিরে তিরিশ মুদ্রার অধিক মূল্যের কোনও সামগ্রী চুরি হয়েছে, এমন অভিযোগ শোনা যায়নি। উৎসব ছাড়া অন্য কোনও সময় ভারতীয়রা মদ খায় না। তাদের মদ ভাত থেকে তেরি হয়। যব থেকে নয়। সোজা কথায়, ধেনো মদের শুরু এখান থেকেই। 

 

আরও পড়ুন: তুষ্টি ভট্টাচার্যের কলমে: ইতিহাসের চিঠি

 

ভারতীয়রা উদার। পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তারা রাজদরবারে হাজির হয় না। বন্দুক রাখা, দ্রব্য ফেরত না দেওয়া নিয়ে অভিযোগ হয় না। কোনও কিছু মোহরাঙ্কিত করতে হয় না। কোনও সাক্ষী রাখার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ ভারতীয়রা পরস্পরকে বিশ্বাস করে তাদের মূল্যবান জিনিস গচ্ছিত রাখে। তাদের ঘরবাড়ি তালাবন্ধ করে সুরক্ষিত করার প্রয়োজন হয় না। এরপরে যা বলব, সেগুলো যে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি তা বলতে প্রমাণ লাগবে না। 

মেগাস্থিনিস লিখেছেন, ভারতীয়রা সাদাসিধা জীবনযাপন করলেও উৎসবে অলংকার পরে সাজতে ভালোবাসে। তারা সোনা খুব ব্যবহার করে। অলংকারে থাকে মূল্যবান পাথর। মসলিন পোশাকের ওপর কৃত্রিম ফুল লাগিয়ে রাখে। তারা যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে ভৃত্যরা ছাতা নিয়ে তাদের অনুসরণ করে। তাদের সমাধিতে মাটির অনুচ্চ স্তূপ থাকে। কখনও সমাধি সজ্জিত করে সুরক্ষা করে। তারা সুগন্ধী দ্রব্য গায়ে মাখে। এদিকে আবার অন্য এক অধ্যায়ে তিনি লিখছেন, ভারতের মানুষ মৃত ব্যক্তির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে না। স্তোত্র গীতের মাধ্যমে মৃতের যে গুণগান করা হয় তা-ই যথেষ্ট মনে করা হয়। জ্ঞানী না হলে সেখানে বৃদ্ধরা বিশেষ মর্যাদা পায় না। এটাও খুব স্বাভাবিক। দুটি ভিন্ন জনগোষ্ঠীতে আলাদা আলাদা নিয়মকানুন হতেই পারে।

তখন ভারতীয়দের মধ্যে বহু বিয়ের প্রচলন ছিল। কন্যার পিতাকে জোড়া গরু দান করে কন্যাকে স্ত্রী হিসেবে তুলে হত। স্ত্রীদের কাজ ছিল গৃহকর্মে সহায়তা করা আর সন্তান প্রদান করা। অন্তত এই উদ্দেশ্যে তাদের বিয়ে করা হত। সতী হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। অনেক নারী বহুগামিনীও হয়ে যেত। যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিত, তাদের অঙ্গচ্ছেদের শাস্তি দেয়া হত। অন্যের অঙ্গহানি যে ঘটাত, তারও সেই অঙ্গ কেটে দেওয়া হত। কোনও দুষ্কৃতী যদি শিল্পীর হাত বা চোখ নষ্ট করে দিত, তাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হত। তবে একটা ব্যাপার দেখে একটু অবাক হতে হয়। মেগাস্থিনিস লিখছেন, দেবতাকে উৎসর্গ করা পশু ভারতীয়রা খড়গ দিয়ে প্রাণ হরণ করে না, শ্বাসরোধে হত্যা করে। তাতে যজ্ঞের পশু অঙ্গহীন হয় না। ফলে অক্ষত অবস্থায় নৈবেদ্য প্রদান করা যায়।

মেগাস্থিনিসের ভারতে রাজার জীবন ছিল অনিশ্চিত। দিনের বেলায় নাকি তিনি ঘুমাতেন না। আবার রাতে নির্দিষ্ট কোনও বিছানায় ঘুমানোর সুযোগ ছিল না। কারণ যে কোনও সময় হত্যার শিকার হতে পারেন তিনি। কাজেই তাঁকে শয্যা পরিবর্তন করে করেই রাত কাটাতে হত। কী মুশকিল ভাবুন একবার! রাজার একাধিক বর্মধারী নারী দেহরক্ষী থাকত। পরে গদ্দাফি বোধহয় এখান থেকেই আইডিয়াটা ধার করেছিলেন। এছাড়াও ভারতে বহুসংখ্যক পণ্ডিতের উপস্থিতির কথা মেগাস্থিনিস লিখেছেন। তাদের মধ্যে যাঁরা পর্বতে বসবাস করেন তাঁরা দিওনিসাসের উপাসনা করেন। মসলিন কাপড় পরেন এবং মাথায় পরেন পাগড়ি। পণ্ডিতদের মধ্যে যাঁরা সমতলবাসী তাঁরা হেরাক্লিসের পূজারি। এই হেরাক্লিস আর দিওনিসাসের ভারতীয় নাম উদ্ধার করা যায়নি। 

 

আরও পড়ুন: ধ্রুবজ্যোতি নন্দীর কলমে: ‘আর কি খুঁজে পাব তারে…’

 

মেগাস্থিনিস ভারতীয় পণ্ডিতদের দুই ভাগে ভাগ করেছেন— ব্রাহ্মণ ও শ্রমণ। ব্রাহ্মণরা তাঁদের স্ত্রীদের দর্শনজ্ঞানের শিক্ষা দিতেন না। কারণ স্ত্রী স্রষ্টা হলে ওই জ্ঞান অন্য কোনও পুরুষের কাছে ফাঁস করে দিতে পারে। ব্রাহ্মণদের জ্ঞানের স্থূলতার কথা বলতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, বস্তুজগৎ সম্পর্কে তাঁরা কেবল বালকোচিত জ্ঞানের অধিকারী। আর শ্রমণরা বনে বাস করেন। বনের ফল ভক্ষণ করেন। গাছের ছাকলবাকল দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকেন। যৌনাচার থেকে দূরে থাকেন। মদ্যপানও তাঁদের জন্য নিষিদ্ধ। তাঁরা কষ্ট ও যন্ত্রণাসহিষ্ণু। নারীরা তাঁদের সঙ্গে জ্ঞানচর্চা করতে পারেন। তবে নারীরাও তাঁদের যোগ্য হওয়া থেকে নিজেদের নিবৃত রাখেন।

মিথ আর সত্যি মিলিয়ে মিশিয়ে মেগাস্থিনিসের এই বই দারুণ এক পটবয়লার। অন্যদের উদ্ধৃতিতে যে সামান্য অংশটুকু পাই তাতেই চমকে উঠি, অবাক হই। কয়েক হাজার বছর আগে নিজের পূর্বপুরুষদের যেন চোখের সামনে দেখতে পাই। ভাবুন দেখি, চারখণ্ডের গোটা বইটা কোনওদিন পাওয়া গেলে কী হবে! সিধু জ্যাঠার ভাষায় “গোল্ডমাইন, ফেলু, গোল্ডমাইন!”

 

*ছবি সৌজন্য: Wikipedia, Amazon, Youtube

জন্ম ১৯৮১-তে কলকাতায়। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি-তে স্বর্ণপদক। নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কারক। ধান্য গবেষণা কেন্দ্র, চুঁচুড়ায় বৈজ্ঞানিক পদে কর্মরত। জার্মানি থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা গবেষণাগ্রন্থ Discovering Friendly Bacteria: A Quest (২০১২)। তাঁর লেখা ‘কমিকস ইতিবৃত্ত’ (২০১৫), 'হোমসনামা' (২০১৮),'মগজাস্ত্র' (২০১৮), ' জেমস বন্ড জমজমাট'(২০১৯), ' তোপসের নোটবুক' (২০১৯), 'কুড়িয়ে বাড়িয়ে' (২০১৯) 'নোলা' (২০২০) এবং সূর্যতামসী (২০২০) সুধীজনের প্রশংসাধন্য। সম্পাদনা করেছেন ‘সিদ্ধার্থ ঘোষ প্রবন্ধ সংগ্রহ’ (২০১৭, ২০১৮)'ফুড কাহিনি '(২০১৯) ও 'কলকাতার রাত্রি রহস্য' (২০২০)।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com