banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

চা বাগিচার কড়চা: পর্ব ৬- বাগানে বর্ষা

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Monsoon in the tea garden 5

ডুয়ার্সে বর্ষা এলে আমাদের তার প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য দেখাতে হত।এতটাই সে ছিল ডিকটেটর।জুন মাস থেকেই বর্ষার সেনাদল, কালো মেঘের রেজিমেন্ট, ভুটান পাহাড়ের মাথায় জড় হয়ে যেত।তাদের আবার নানা আকৃতি। অশ্ব, গজ, কামান, যোদ্ধা, হনুমান, পালোয়ান– এইরকম এক একজন মেঘের চেহারা। হ্রেষা, বৃংহণ… ঊরু চাপড়ানো, গোলা নিক্ষেপ ইত্যাদির মিলিত প্রবল কোলাহলে মেদিনী কাঁপিয়ে বর্ষা আসত। দখল নিয়ে নিত বনানী-ভূমি-চা-বাগান-সহ সমগ্র চরাচরের। 

টানা সাত কিংবা দশ দিনের জন্য, বিরামহীন বৃষ্টি হত। আতিশয্যের হেরফের হত নিশ্চয়ই, বৃষ্টিপাতের লয়, তাল ও ছন্দ নিত্যই ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হত, কিন্তু নৃত্যের বিরাম হত না। বর্ষার শাসন এতটাই অপ্রতিরোধ্য ছিল যে আমাদের জীবনযাত্রার স্বাধীনতা সে কেড়ে নিত। স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না, মাঠেও না, বাড়িতে বসেই দু’চার দিন কেটে যেত আমাদের। বাবা কাকাদের তো রুটিরুজির প্রশ্ন, তাই তাঁরা ছাতা মাথায় অফিস যেতেন বটে, তবে ছাতার নিরাপত্তা তাঁদের খুব একটা শুকনো রাখতে পারত না। সাইকেল চালালে তো নতুন হোক বা পুরনো, ধারাজলে স্নান করেই ফিরতে হত তাঁদের। এ হেন ডুয়ার্সের বর্ষা আমার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

ডুয়ার্সের মজা ছিল জমির গঠনে। এত জল, তবু জল জমতে তেমন দেখতাম না। আমাদের কোয়ার্টারগুলির সংযোগের রাস্তাগুলিতে, উঠোনে, চা বাগানে জল জমত না। চা বাগানগুলির মধ্যে বড় বড় ড্রেন কাটা থাকত। কোনও কোনও ড্রেন দিয়ে ঢেউ খেলিয়ে জলধারা বয়ে যেত বৃষ্টি থামার  দিন কয়েক পরেও। প্রাথমিক স্কুলে পড়তে আমরা আমাদের হাওয়াই চটি ভাসিয়ে দিয়ে আবার উদ্ধার করার খেলা খেলতুম। জল জমে গেলে চা গাছের বেঁচে থাকা দায় হয়ে যায়। চা চাষের জন্য ডুয়ার্সকে বেছে নেওয়ার এটাও একটা কারণ। আমাদের খেলার মাঠে কিন্তু জল জমে থাকত কোনও কোনও কোণে বা মাঝমাঠে। হয়তো বৃষ্টি বিকেলের দিকে একটু বিরতি নিয়েছে, অথবা ঝির ঝিরিয়ে পড়ছে, আমরা নেমে পড়তাম মাঠে।

কৈশোরে ফুটবল খেলার উদ্দেশ্য বর্ষায় নতুন অর্থ খুঁজে পেত। বল ছেড়ে জলের মধ্যে পিছলে পড়তে আমাদের উৎসাহ ছিল বেশি। লক্ষ্য করেছি,  শুকনো মাঠে ফুটবল চর্চায় আমাদের সমবয়সী মেয়েদের কিংবা বড় দিদিদের তেমন উৎসাহ ছিল না। বরং ক্রিকেট খেলার সময় তারা মাঠের বাইরে বসে আমাদের স্কোর লিখে দিত। ভলিবল কিংবা টেবিল টেনিসে তো তারা নিজেরাই যোগ দিত। কিন্তু কী আশ্চর্য এই জল-ফুটবলে তাদের উৎসাহের অভাব ঘটত না। মাঠের মধ্যে জমা জলে আমাদের পদস্খলনের  অভিনবত্বের  সঙ্গে তাল রেখে মাঠের বাইরে তাদের হাততালির মাত্রা উচ্চগ্রামে ওঠায়  মুহূর্মুহূ পতন-বিলাসিতা আমাদের আরও বেশি করে পেয়ে বসত।

Monsoon in the tea gardn 4
জল জমে গেলে চা গাছের বেঁচে থাকা দায়

তারপর সন্ধ্যা নামলে আবার ঘন হয়ে বৃষ্টি নেমেছে হয়তো। আমাদের কোয়ার্টারগুলিতে খুব জোরাল আলো ছিল না। বিদ্যুতের আলো কিন্তু তুলনায় লিষ্প্রভ, কেননা টিউবের আলো ছিল না। সিলিং থেকে ঝুলে থাকত বাল্ব। সেই বাল্বগুলি জ্বলে উঠেছে, অন্ধকার তাতে সম্পূর্ণ দূর হয়নি বরং কিছুটা বিষন্নতা ছড়িয়েছে ঘরগুলিতে, বারান্দায়, উঠোনে। প্রতিটি পরিবারের একটা নিজস্ব সময় আছে, যখন বাইরের কাউকে ঠিক সেখানে মানায় না। যেমন দুপুর কিংবা এই সন্ধ্যা। এরকম নিজস্ব সন্ধ্যায় বাড়ির ভেতরের বারান্দায় তোলা উনোনে ঠাকুমা-মা-কাকিমা মিলে চা-জলখাবার করতে লেগে যেতেন। পুরুষেরা চারদিকে বেতের চেয়ারে আসীন। তখনও পিঁড়ির চল ছিল। আমরা ছোটরা পিঁড়িতে বসে খাবারের অপেক্ষায়। মহিন্দর কাকভেজা হয়ে গোরু নিয়ে ফিরল, তার হয়রানি গরুগুলির উপর বকাবকি হয়ে ঝরছে।

লিখেছিলাম এ লেখার শুরুতে, যে সেই ছোটবেলায় আমাদের বাড়িগুলিতে খড়ের ছাউনি ছিল। পরে বছর বছর ছাউনি বদলাবার ঝক্কি এড়াতে কোম্পানি থেকে টিনের চাল করে দেওয়া হয়েছিল। সেই টিনের ঢেউ খেলানো চালের কারণে আকাশের জল  চাল থেকে নিয়ম মেনে দু’ইঞ্চি দূরত্বে কলের  ক্ষীণ অথচ তীব্র ধারার মতো  সমানে ঝরে যেত। উঠোনের এক ধারে তারের জালের বড় খাঁচায় মুরগিদের বাস। লেগহর্ন মুরগি। তাদের সবার ভালোবাসার মোরগটি খুবই হ্যান্ডসাম! ফর্সা শরীর আর মাথায় রাজকীয় ঝুটি। খাঁচার মাটি ভিজে গেছে, তারের জালের ভেতর দিয়ে বৃষ্টির ছাট ঢুকছে, খাঁচার ভিতরে ওদের কাঠের বড় বড় দুটো ঘর। তারই চালে পুরো মুরগির সংসার উঠে গেছে। সেখান থেকে শব্দ আসছে কক কক কক কক। এখন পাঠ্য বইয়ের তলায় আমাদের স্বপনকুমারের ডিটেকটিভ বা অন্য অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পড়ার সময় হল।

চা বাগানের বর্ষার কথা বলতে গেলে কিছু দৃশ্য চোখের উপর খেলে যায়। তার মধ্যে অন্যতম, কাঁচা চা পাতায় টুকরি বোঝাই করে লেবারদের, বিশেষত মহিলা কর্মীদের অফিসমুখী দৌড়। বর্ষাই তো পাতা তোলার কাল। দৌড়টা এ জন্যেই যে আগে পৌঁছোতে পারলে, কত পাতা তোলা হল তা আগে ওজন করানো যাবে। একটা নির্দিষ্ট ওজনের উপরে পাতা তোলা হলে আলাদা মজুরি। আজকাল টুকরির বদলে এসেছে বড় কাপড়ের টুকরো। সেটা কর্মীদের পক্ষে বহন করা সহজ, কর্তাদেরও খরচ বাঁচে।  কিন্তু  দৃশ্য হিসেবে টুকরি পিঠে ছুটটাই শ্রেষ্ঠ, আর সেটাই আমাদের মনে রয়ে গেছে।

এ রকমই এক ঘনঘোর বর্ষায় আমার ছোট বোনটিকে একদিন কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। সে ছিল বাড়ির ও বাইরের সকলের সবচেয়ে প্রিয় শিশু। ছোট্ট আর ফুলের মতো সুন্দর মেয়েটিকে চা বাগানের সকলেই ভালোবাসত। বাগানের বাবুদের মধ্যে কম্পাউন্ডার জ্যেঠু, তুলসিজ্যেঠু ও আরো অনেকেই অফিস যাবার পথে রোজ সাইকেল থামিয়ে ওর সঙ্গে কিছুটা খবরাখবর বিনিময় করে যেতেন। কী কী খেয়েছে আজ, একটু পড়তে বসা হয়েছে কিনা, এইসব খোঁজ নেওয়া চলত। আমার কাকাদেরও ছিল সে নয়নের মণি। মা বাবার খুব দরকার পড়ত না ওর।

Monsoon in the tea garden
সন্ধ্যা নামলে আবার ঘন হয়ে বৃষ্টি নামত

এই মেয়েকে একদিন সকাল ১০টা থেকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। সব ঘর খোঁজা হয়ে গেছে। সব আনাচ কানাচ। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি, বের হবার সুযোগ তার নেই। অনেকক্ষণ ধরে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সকলের উৎকণ্ঠা তখন আতঙ্কে পৌঁছেছে। আতঙ্কের একটা কারণ ছিল। আমাদের উঠোনে পয়ঃপ্রণালী সংস্কারের জন্যে এক মানুষ সমান এবং দৈর্ঘ্য প্রস্থে বিপুল এক গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। সেটা বর্ষার জলে ভর্তি ছিল। এবার সকলের সন্দেহ হল, সকলের অগোচরে সে সেই গর্তের ধারে গিয়েছিল এবং তারপর পা পিছলে গেছে। সে পরিণতির কথা ভেবে মা আর স্থির থাকতে পারলেন না। তাঁর কান্নার সঙ্গে আরো অনেকের কান্না যোগ হল।

বাইরের কিছু কিছু মানুষ তখন এসে গেছেন। আমরা একই জায়গায় বারবার খুঁজছি। খাটের তলে, ছোট ঘরগুলিতে। দুটো তুলনায় ছোট ঘর ছিল আমাদের। সেখানে খাট পাতা থাকত। তবে বেশি ব্যবহার হত না। বালিশ কাঁথা তোশক ডাঁই করে রাখা থাকত। আগের দিন থেকে আমাদের জলের কল বিগড়ে ছিল। সেটি সারাতে এসেছিল কল-মিস্তিরি মন্ডদা। খোঁজার কাজে সেও সামিল হয়েছিল। সে সারাবাড়ি খুঁজে দুটি ছোট ঘরের একটিতে ঢুকে, নিরুত্তাপ কণ্ঠে জানাল, খুকি তো নিদ যাতা হ্যায়। পড়ি কি মরি করে আমরা সকলে সে ঘরে ছুটে গিয়ে দেখি, বোনটি আমার তোশক বালিশের অন্তরালে ঘুমোচ্ছে।

Monsoon in the tea garden 6
সবুজ চায়ের পাতায় বারিবিন্দু

রাতের খাওয়া শেষ করে শুতাম যখন, বৃষ্টির তেজ সে সময় হয়তো কমে আসত। আবার মাঝরাতে মেঘ ভাঙা জল  আমাদের টিনের চালে ডাকাতের মতো এসে পড়ত। সে কী কান ফাটানো আওয়াজ। বারিবিন্দু তো নয়, যেন  অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাতব গোলা এসে পড়ছে আমদের চালে। আমরা বলতাম এই শব্দ না হলে আমাদের ভালো ঘুমই হয় না। কিন্তু একটা ঘটনার পর এই শব্দ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল আমাদের পরিবারে।

চা বাগানে চুরি ডাকাতির খবর তেমন হত না। ডুয়ার্সে থাকলে দীপক চ্যাটার্জী ও রতনলাল কেস পেতেন না।  ক্রাইমের মধ্যে ছিনতাইয়ের ছোটখাটো খবর কানে আসত। আর নাকি রেল স্টেশনে ভাঙা হত ওয়াগন। ডাকাতি হত চা বাগানের বাইরে কোনও জোতদারের বাড়িতে কখনও সখনও। কিন্তু একবার অঘটন ঘটল এবং সেটা আমাদের বাড়িতেই। বাবা সে দিন সকালে জলপাইগুড়ি গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরেছিলেন। রাত্রে সেদিনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছিল। বাড়ির সদর দরজায় ছিটকিনি সম্বল। এর চেয়ে বেশি কিছু নিরাপত্তার কথা কেউ কখনও ভাবেনি। আমি এই সময়ে বাড়িতে ছিলাম না। চিরকালই কাজের সময় আমাকে পাওয়া যায়নি। দাদাই বেশির ভাগ পরিস্থিতি সামলেছে।

তাই দাদা, বোন ও মা-বাবার কাছে সে কাহিনি যেমন শুনেছিলাম তেমনই বলি। আমাদের যৌথ পরিবার তখন ভেঙে গেছে। সুতরাং বাড়িতে সেদিন দাদা, বোন আর মা ছাড়া আর কেউ ছিল না। গভীর রাতে সবার ঘুম ভেঙে গেল বন্দুকের শব্দে। ডাকাত পড়েছে। আমাদের ও প্রতিবেশীদের ভয় দেখাতেই প্রথমেই ফায়ারিং করা হয়েছিল বেশ কয়েকবার, আমাদেরই বারান্দা থেকেই। আমাদের সদর মনে হয় এক সবল লাথিতেই খুলে গিয়েছিল। একটা মাত্র ছিটকিনির আর কত ক্ষমতা? দাদা ও আমি থিম্পু থেকে ছোট্ট একটা কুকুর এনেছিলাম। সাদায় কালোয় বড় বড় লোমওয়ালা খুব সুন্দর প্রাণী। বড্ড ছোট আর আদুরে। তার নাম রেখেছিলাম ভুটানের রাজার নামে– জিগমে। সে-ই সেদিন একা প্রতিরোধের কর্তব্যে রুখে দাঁড়িয়েছিল ৫/৬ জন ষণ্ডামার্কা ডাকাতের বিরুদ্ধে। মাঝের ঘরে সে একা লড়াই করেছিল।

dacoit
এমনই এক বর্ষার রাতে বাড়িতে ডাকাত পড়ল

মাঝের ঘরে ঢুকে ডানদিকের ঘরে শুতেন বাবা-মা-বোন আর বাঁ দিকের ঘরে দাদা। বাবা আলাদা খাটে। মনে হয় লাঠি বা বন্দুকের বাঁটের আঘাত জিগমে বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারেনি। ডাকাতদল দু’ভাগে ভাগ হয়ে দু’দিকের দুটি ঘরে ঢুকে গিয়েছিল। বাবার ঘরে যে তিনজন ঢুকেছিল, তাদের নেতৃত্বে একজন বন্দুকধারী। সে আলমারির চাবি চাইলে বাবা তাকে বালিশ ছুড়ে মারে। প্রত্যুত্তরে সর্দার সোজা গুলি চালায়। ছররা গুলি। বাবার বাঁদিকের কলার-বোনে গুলি লাগে। মা তাঁর হাতের ও গলার গহনাগুলি খুলে লুকিয়ে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, কিন্তু তা বাস্তবায়িত করার আগেই এক তৎপর ডাকাত তা দেখে ফেলায় সেগুলিকে আর খাটের তলায় চালান করা যায়নি। সটান ডাকাতের ঝুলিতেই চলে যায়। ডাকাতেরা আলমারি খুলে খোঁজাখুজি, বাছাই করতে থাকে কী নেবে না নেবে। বাবা বিছানায়, রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানা। বাবা জল খেতে চাইলে, মা উঠে আসতে যান। সর্দার মাকে আটকে দলের একজনকে নির্দেশ দেয় বাবাকে জল দিতে। সে জল আনলে মা বাবাকে জল খাওয়ান। 

Monsoon in the tea garden 3
বর্ষাই তো চা-পাতা তোলার কাল

বাইরে তখনো বৃষ্টি, টিনের চালে বর্ষার মাদল বাজছে। এদিকে অন্য ঘরে  দাদাকে বন্দুকের মুখে শুইয়ে রেখেছে একজন। এ ঘরের আলমারির হাতল ধরে একজন টানাটানি করছে। খুলতে না পেরে সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা সাইকেলটির উপর তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে। সে সজোরে লাথি মারে সাইকেলটিকে। ডাকাতের আলমারি খুলতে না-পারার ব্যর্থতার দায় নিয়ে সাইকেল সশব্দে পড়ে যায়। সেই শব্দ শুনে মা ও বোন দাদার বিপদের কথা অনুমান করে আবার খাট থেকে নামতে গেলে ডাকাতরা বলে ভয় নেই, সব ঠিক আছে। দাদা চিরকালই শান্ত আর ঠান্ডা মাথার মানুষ। সে বন্দুকধারীকে বলে, দরজার পাশে পেরেকে চাবি ঝুলছে, ওকে বল চাবিটা নিয়ে আলমারি খুলতে। এইভাবে লুটের নানা বিষয়ে ডাকাতদের দাদা সহায়তা করে যায়। লুটপাট সেরে ডাকাতেরা বাইরে গিয়ে আবার আকাশে বন্দুক চালায়। বোমা ছুড়তে ছুড়তে চলে যায়। গোটা ঘটনাটা ঘটতে মিনিট ২০ লাগে।

চা বাগানের বাবুর ঘরে আর কী ধনদৌলত থাকতে পারে। মায়ের গহনা ক’টি, টেপ-রেকর্ডার, ট্রাঞ্জিস্টার, এই সবই নিয়েছিল। তাদের দল গড়বার, বোমা-বন্দুকের খরচা উঠেছিল কিনা আমার জানা নেই। শুনেছিলাম, ডাকাতদের কাছে খবর ছিল, যে বাবা জলপাইগুড়ি থেকে  কোম্পানির পেমেন্টের বড় অঙ্কের টাকা এনেছে এবং তা বাড়িতেই রেখেছে। সে কারণেই অযাচিত এই হানা। আমি এ ঘটনার অনেকদিন পরে বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- তুমি বালিশ দিয়ে ডাকাত আটকাতে গেলে কেন? দাদা যে বিষয়টাকে মাথা ঠান্ডা রেখে কীরকম সহজে সামলেছিল তার উদাহরণ টেনে আরও বলেছিলাম- দেখলে তো প্রতি আক্রমণের চেয়ে সহযোগিতা কত ভালো? বাবা এক কথায় উত্তর দিয়েছিল- উই হেইল্ড ফ্রম বরিশাল। ‘উই’ মানে কিন্তু বাবা নিজে, দাদা নয়। 

Monsoon in the tea garden 1
টিপটিপ বৃষ্টিতে লেবারদের ছাতা মাথায় যাত্রা

ভোর বেলা বৃষ্টি  থেমে গেল। আলো ফুটতেই আমার বন্ধু বিশু, শোভাদা, দাদা ও ডাকুদা মিলে বাবাকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখানে আমার বাহুবলী   ছোটমামু বিষয়টা টেক আপ করে নেন। হাসিমারা থেকে কাকিমা ও বোনেরা এসে বাড়ির ও মায়ের দায়িত্ব নিয়েছিল। আমি যখন পুরনো  হিন্দি সিনেমার পুলিশের মতো খবর পেয়ে শেষ দৃশ্যে বাড়ি আসি, তখন বাবাকে আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বোনের মাধ্যমিকের ফল বেরল। আমি শিলিগুড়ি হাসপাতালে  পৌঁছে দেখি, বাবার অপারেশন হয়ে গেছে। বাবা তখন হাসপাতালের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত। ডাক্তার, নার্স, মায় আমার মা-ও, বাবাকে সামলাতে ব্যস্ত। আমাকে দেখে বাবা বললেন- তুমি এখানে সময় নষ্ট কোরও না, বুলাকে নিয়ে কলকাতায় ছোট পিসেমশাইয়ের কাছে গিয়ে ওকে ভর্তি করার ব্যবস্থা কর। এডুকেশন ফার্স্ট।

গুলিবিদ্ধ বাবাকে হাসপাতালে রেখে বোন আর আমি সেই বর্ষাবিঘ্ন সন্ধ্যায় রিক্সা করে প্রায় ভিজতে ভিজতে এনজেপি স্টেশনে পৌঁছই দার্জিলিং মেইলের অসংরক্ষিত কামরায় উঠব বলে। 

 

*ছবি সৌজন্য: Reddit, Pinterest, Shutterstock, Way2Barak

অপূর্ব দাশগুপ্ত 'পুরোগামী' পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের অবসরপাপ্ত বিশেষ রাজস্ব আধিকারিক।

2 Responses

  1. বাঃ, খুব সুন্দর বর্ষার বর্ণনা. এই রকম একঘেয়ে বর্ষা আমিও দেখেছি ও উপভোগ করেছি. টিনের চালে বারিধারার রিনরিন শব্দ অতীব মনোমুগ্ধকর. গভীর নিদ্রার আহ্বায়ক. সেই স্মৃতি আজও আলোচনার বিষয়. ডাকাতির ইতিহাস আগে শুনিনি তো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com