কাজ-কারবার
এক চাষি এবার বলল যে কাজ কারবার সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।
এবং তিনি বললেন:
তুমি যে কাজ কর তা নিশ্চিত পৃথিবী ও তার আত্মার সঙ্গে সমান গতিতেই চলে।
নিষ্কর্মা থাকা মানেই, ঋতু অভিমুখে তুমি একজন অপরিচিত। জীবনের সেই মিছিল থেকে তুমি সরে দাঁড়ালেও, তা কিন্তু রাজকীয়ভাবে এবং সগর্বে এগিয়েই চলে, আবহমানে নিজেকে সঁপে দিতে।
যখনই তুমি কাজ কর, তখনই তো তুমি সেই বাঁশি, যেটির হৃদয়ের মধ্যে দিয়ে সময়ের গুনগুনই সুরে বেজে ওঠে।
বাকি সকলেই যখন একত্রতায় গান গাইছে, তখন তোমাদের মধ্যে সে কে, যে উলুখাগড়ার মতো মূক ও নীরব হয়ে থাকবে?
সবসময় তোমাকে এই বোঝানো হয়েছে যে, কাজ হল এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ আর শ্রম হল নিদারুণ দুর্ভাগ্য।
কিন্তু আমি বলি যে, যখন তুমি কর্মব্যস্ত তখনই তুমি পূর্ণ করতে চলেছ ধরিত্রীর সেই দূরতম স্বপ্ন, যেটির জন্য জন্মমুহূর্তে তোমাকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
এবং শ্রমে ব্যপ্ত থেকে আসলে তো তুমি জীবনকেই ভালবাসছ।
জীবনকে যদি কাজ ভালবেসে জড়াও, তো তখনই তুমি পারবে, গূঢ় রহস্যে মোড়া শাশ্বত এই জীবনের সঙ্গেও লগ্ন হতে।
আর শ্রম দানকে যদি মনে কর যে, এক জন্ম-অভিশাপ ও দুর্দশা এবং তোমার ওই সহায়ক স্বাস্থ্যকেও যদি মনে কর যে, ললাটলিখনের দুর্ভোগ, তা হলে আমার উত্তর হল, এইসব ললাটলিখনও ধুয়ে যাবে তোমারই পরিশ্রমের ঘামে।
এও তো তোমাকে বোঝান হয়েছে যে, জীবন অন্ধকারময়; তাই তোমার ক্লান্তিতেও তুমি সেই কথাগুলিরই প্রতিধ্বনি করছ, যা তাবৎ ক্লান্ত মানুষেরা বলে থাকে।
তাই বলি যে, জীবনের অন্ধকার তখনই দূর হয়, যখন সেখানে তোমার তীব্র আর্তি থাকে।
আরও পড়ুন: অমিতাভ রায়ের কলমে: কয়লাখনির মরণফাঁদ: জোয়াই পর্ব ১৫
এবং এই অন্ধ আকুতিও শেষ হয়, যখন তাতে যুক্ত হয় জ্ঞান।
এবং জ্ঞানও বরবাদ হওয়া থেকে বেঁচে যায়, যখন সেখানে থাকে শ্রম।
এবং সমস্ত শ্রমও শূন্য হওয়া থেকে বাঁচে, যখন সেখানে থাকে প্রেম।
তাই আনন্দে যখন কাজ কর, তখন আসলে তুমি যেমন নিজের সঙ্গে নিজেকেই যুক্ত করে চল, তেমনই যুক্ত হও অন্যদের সঙ্গে এবং সর্বোপরি ঈশ্বরের সঙ্গেও।
কিন্তু এই ভালবেসে কাজ করা ব্যাপারটা আদপে কী?
এ যেন, তোমার হৃদয় থেকে সুতো টেনে বোনা সেই কাপড়, যা শরীরে জড়িয়ে রেখেছিল তোমারই প্রেমাস্পদ।
আরও পড়ুন: শাশ্বতী নন্দীর কলমে: মিথ্যের বেসাতি না নারী-ইচ্ছের স্বীকৃতি?
এ হল নিবিড় মমতায় মোড়া যেন সেই ঘর, যেখানে বাস করেছিল তোমারই প্রেমিক।
এই যে কোমল স্পর্শে বীজ বোনো এবং ফসল কাটো আনন্দে, সে খাবারও যেন প্রেমিকই খেয়েছিল। পছন্দের সব কাজেই জাগিয়ে রাখো, তোমার শ্বাসের নিজস্বতা।
এ কথা তো জানতেই যে, ধন্য হয়ে যাওয়া সেই মৃতেরাও দাঁড়িয়ে আছেন এবং লক্ষ্য করছেন তোমাকে।
আমি তো এও শুনেছি যে, প্রায়ই ঘুমের মধ্যেও তুমি বিড়বিড় করে বলছ, “মাটি চাষ করে যে তার কাজের থেকে আরও ভাল, যে মূর্তি বানায় পাথর কুঁদে কুঁদে, কেননা সে নাকি নিজের আত্মাকেই খুঁজে পায় ওই পাথরে!”
“এবং আমাদের পায়ের জুতো বানাবার থেকে অনেক ভাল সেই শিল্পী, যে মানুষের কাছে উপমা হিসেবে, আকাশ থেকে রামধনু ছিনিয়ে এনে, এঁকে দেয় কাপড়ে।”
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।